সকল মেনু

নবীজির জন্য বৃক্ষ ও পশু-পাখির ভালোবাসা

হটনিউজ ডেস্ক:

সিরাত তথা রাসুল (সা.)-এর জীবনীগ্রন্থগুলো গভীর অধ্যয়ন করলে উপলব্ধি করা যায়, সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-এর জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ইতিহাসে এর ঢের উদাহরণ রয়েছে। সৃষ্টিজীবের মধ্যে মানুষ ছাড়াও অন্যান্য সৃষ্টিজীবও রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসেছে। সালাম জানিয়েছে প্রিয় নবীকে। কেঁদে কেঁদে রাসুলের প্রতি নিজের আবেগ ও অনুযোগ প্রকাশ করেছে। এমন কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো—

নবীজির কাছে উটের অভিযোগ : আবু জাফর আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.) আমাকে বাহনের ওপর তাঁর পেছনে বসালেন এবং আমাকে তিনি একটি গোপন কথা বলেন, যা আমি কাউকে বলব না। রাসুল (সা.) দূরবর্তী উঁচু জায়গা (দেয়াল ইত্যাদি) অথবা খেজুরের বাগানের আড়ালে মলমূত্র ত্যাগ করা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। এরপর রাসুল (সা.) এক আনসারির বাগানে প্রবেশ করেন। সেখানে একটা উট দেখতে পান। উটটা রাসুল (সা.)-কে দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। উটের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। রাসুল (সা.) উটটির কাছে এসে কুঁজে এবং কানের পেছনের অংশে হাত বুলিয়ে সান্তনা দিলে উট শান্ত হয়। এরপর তিনি বলেন, ‘এই উটের মালিক কে? এই উটটা কার?’ এক আনসার যুবক এসে বলল, ‘এটা আমার, হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বলেন, ‘তুমি কি এই পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? কারণ, সে আমার কাছে অভিযোগ করছে যে তুমি তাকে ক্ষুধার্ত রাখো এবং (বেশি কাজ নিয়ে) ক্লান্ত করে ফেলো!’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ৬৬৩)

নবীজিকে গাছের সালাম নিবেদন : ইয়ালা ইবনে মুররা (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সফর করছিলাম। মাঝপথে এক জায়গায় আমরা যাত্রাবিরতি করি। রাসুল (সা.) ঘুমিয়ে পড়লে মাটি ভেদ করে একটি গাছ বের হয়ে রাসুল (সা.)-কে ঘিরে নেয়। রাসুল (সা.) ঘুম থেকে উঠলে আমরা তাকে ঘটনাটি খুলে বলি। তিনি বলেন, ‘গাছটি আল্লাহর কাছে আমার প্রতি সালাম নিবেদনের অনুমতি প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাআলা তাকে অনুমতি দেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮০৩১)

নবীজির জন্য গাছের ক্রন্দন : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) জুমার দিনে মসজিদের একটি কাষ্ঠখণ্ডের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মানুষের মধ্যে খুতবা দিতেন। এক রোমান লোক এসে বলল, আমি আপনার জন্য এমন কিছু বানিয়ে দেব, যার ওপর বসলে মনে হবে যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন? লোকটি রাসুলের জন্য একটি মিম্বার তৈরি করল, যার (নিচের দিকে) দুটি ধাপ ছিল, আর (ওপরের দিকে) তৃতীয় ধাপে তিনি বসতেন। অতঃপর রাসুল (সা.) ওই মিম্বারের ওপর বসলে আগের কাষ্ঠখণ্ডটি ষাঁড়ের মতো আর্তনাদ করা শুরু করে। এমনকি রাসুল (সা.)-এর বিচ্ছেদের শোকে পুরো মসজিদ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। তখন রাসুল (সা.) মিম্বার হতে নেমে কাষ্ঠখণ্ডের দিকে যান। আর্তনাদরত কাষ্ঠখণ্ডটিকে আলিঙ্গন করেন। রাসুল (সা.) আলিঙ্গন করা মাত্রই তা শান্ত হয়ে গেল। তারপর তিনি বলেন, ‘ওই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমি একে আলিঙ্গন না করলে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্যন্ত রাসুল (সা.)-এর শোকে এভাবে কাঁদতে থাকত।’ রাসুল (সা.) এটিকে দাফন করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তাকে দাফন করা হয়। (সুনানে দারেমি : ৪৩, তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৩১)

নবীজিকে পাথরের সালাম নিবেদন : আলি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মক্কার কোনো এক প্রান্তের উদ্দেশে বের হই। তিনি যে কোনো পাহাড় বা বৃক্ষের কাছ দিয়ে যেতেন তারা তাঁকে ‘আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলুল্লাহ’ বলে অভিবাদন জানাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬২৬)

জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, মক্কায় এমন একটি পাথর আছে, যেটি আমাকে নবুয়তের আগে সালাম দিত—ওই পাথরটি আমি এখনও চিনি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৩)

নবীজির প্রতি উহুদ পাহাড়ের ভালোবাসা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে আমরাও তাকে ভালোবাসি। (তিরমিজি, হাদিস : ৪৩০১)

আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.) উহুদ পাহাড়ে উঠলেন। অতঃপর আবু বকর, উমর ও উসমান (রা.) তাঁর অনুসরণ করেন। পাহাড় কাঁপতে থাকলে রাসুল (সা.) একে পদাঘাত করে বলেন, ‘উহুদ স্থির হও! তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক ও দুজন শহীদ (ওমর ও উসমান) আছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৫১)

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, নবীজির প্রতি এই সমস্ত প্রাণী কিংবা গাছপালার সম্মান প্রদর্শন এবং সালাম নিবেদন করা আশ্চর্যের বিষয় নয়। বরং এটি রাসুল (সা.)-এর মুজিজা। এরই মাধ্যমে জড় পদার্থের মাঝে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। যেমনটি কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পাথরের মধ্যে এমনও আছে; যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়, তার মধ্যে কিছু এমন আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার এমন কিছু পাথর আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানহীন নন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৪)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top