রূপগঞ্জ -নারায়ণগঞ্জ, হটনিউজ২৪বিডি.কম: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হত্যার উদ্দেশ্যে জাকির হোসেন জাগু নামে এক ব্যবসায়ীর ওপর হামলা, লুটপাট ও মারপিট করে আহত করার ঘটনায় মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা বাহিনী প্রধান মোশারফসহ তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার সকালে আহত ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জাগুর ভাই দুলাল মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতপরিচয় ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করা হয়।
আসামিরা হলেন- মোশারফ বাহিনীর প্রধান মোশারফ হোসেন মোশা, মোশারফ বাহিনীর সদস্য বদি, শাখাওয়াত উল্যাহ, আনোয়ার হোসেন, আলী আজগর, দেলোয়ার হোসেন, আমির হোসেন, সলু, নিরব, জামাল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, আজিজুল্লাহ, নয়ন মিয়া, লোকমান হোসেন, জামান মিয়া, তাজুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, রাজু ও নুরুল ইসলাম।
মামলার বাদী দুলাল মিয়া হটনিউজকে জানান, উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওরা এলাকার মোশারফ হোসেন মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তার ভাই জাকির হোসেন জাগুর শত্রুতা ছিল।
ওই শত্রুতার জের ধরেই শুক্রবার রাতে মোশারফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জাকির হোসেন জাগুর উপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে গুরুতর আহত করে সঙ্গে থাকা ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা লুটে নেয়।
জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার ত্রাস মোশারফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনীর অত্যাচারে নাওড়াসহ আশপাশের মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। এ বাহিনী সাধারণ মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে। মোশারফ হোসেন মোশা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতারের পর এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমেছিল। কিন্তু তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় মোশারফসহ তার বাহিনী দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সশস্ত্র অবস্থায় গ্রামের পর গ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ কৃষকের বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি জোর করে দখল করে নিয়েছে। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তাকে চরম খেসারত দিতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, মোশারফ ও তার বাহিনীর তাণ্ডব, গ্রেফতার ও মামলার খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে মোশারফ ও তার বাহিনী গা ঢাকা দেয়। এরপর আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা আবারও দখলের মহোৎসব শুরু করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাওড়া এলাকার বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। তারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। জমিজমার দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে নাওড়া এলাকার মোতালিব মিয়ার ছেলে চোরা মোশারফ হোসেন নিরীহ মানুষের জমিদখল শুরু করে।
ধীরে ধীরে তৈরি করে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। বর্তমানে ৩শ’ অস্ত্রধারীর একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে এই মোশারফ। এই বাহিনী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জমিদখল করছে। অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায় মোশারফ। এলাকার নিরীহ মানুষ এ বাহিনীর অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অস্ত্র উঁচিয়ে এ বাহিনীর তাণ্ডবে এলাকার অনেকেই পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, কবে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কবল থেকে তারা মুক্তি পাবেন। এ বাহিনীর সঙ্গে কারও তর্কবিতর্ক হলেও ফাঁকা গুলির ঘটনা ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। একের পর এক এ ধরনের তাণ্ডবের ফলে অনেকে এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র বসবাস করছেন। যাদের জমিজমা রয়েছে তারা থাকেন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে। মোশারফের চোখ ওই সব জমিতে পড়লে জোরপূর্বক তিনি তা দখলে নেয়।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাসী মোশারফ নিরীহদের জমিদখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ভূমিদস্যু মোশারফ ও তার বাহিনীর কাছে স্থানীয়রা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করতে এ বাহিনী কয়েক দিন পরপর তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
আর এসব তাণ্ডবের প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলা হামলা, মারপিট ও হত্যার শিকার হতে হয় প্রতিবাদকারীদের। তাই কেউ এ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পাচ্ছে না। বর্তমানে এ বাহিনী এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জাল দলিল করার অভিযোগ রয়েছে। জাল দলিল করে শতশত বিঘা কৃষি জমি দখল করে বালু ভরাট করে ফেলেছে।
নাওরাসহ আশপাশের নিরীহ এলাকাবাসী এ বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে চান।
এ ব্যপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মীর হটনিউজকে জানান, জাকির হোসেন জাগুর ওপর হামলার ঘটনায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার আসামি মোশারফসহ তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।