সকল মেনু

বিশেষজ্ঞদের ঢাকার হাসপাতালে চাপ কমাতে তৃণমূলে চিকিৎসার মান বাড়ানোর পরামর্শ

 আরমান রহমান :  ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমাতে দেশের তৃণমূলে চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, রাজধানীর ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ কমাতে দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জোর দিতে হবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতিতে। ফলে একদিকে যেমন চাপ কমবে তেমনি রোগীরাও নানা হয়রানি থেকে বাঁচবেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু গত ২২ জুলাই চিকিৎসা নেন ৮ হাজার ৩৭৩ জন রোগী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেড সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ হলেও সেখানে রোগী থাকেন তিন হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ জনের মতো। বেড না থাকায় ওয়ার্ডের ফ্লোরে, করিডোরে, এমনকি বাথরুমের সামনে থাকতে হচ্ছে রোগীদের জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ৪৩৪টি বেডের বিপরীতে ভর্তি হন ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী।

অথচ সরকার তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে। সেখানেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক  বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রোগী অনুপাতে নার্সের সংখ্যা, টেকনোলজিস্টসহ যন্ত্রপতি নেই। নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ। উপজেলা পর্যায়ে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে আসছেন। ফলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। এছাড়া ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এসে নানা ধরণের হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাম থেকে আসা রোগীরা।’

উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতির হার কম কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয়ভাবে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়। আর এখানে সঠিকভাবে মনিটরিংয়ের অভাবেই চিকিৎসকরা সেখানে দায়িত্ব পালন করেন না। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে ঢাকায় আসেন।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার দেওয়ান সাবরিনা মাসুক  বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা অবশ্যই ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু সেটা সম্ভব কিনা তা দেখার বিষয়। কারণ, স্পেশালাইজড চিকিৎসা ব্যবস্থা ছড়িয়ে দিতে হলে তার সঙ্গে ইনভেস্টিগেশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ অনেক বিষয় জড়িত। চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষার পুরো বিষয়টিই ঢাকা কেন্দ্রীক। তাই যেকোনো উপায়ে চিকিৎসকরা ঢাকাতে থাকতেই আগ্রহী। আর দরিদ্র রোগীরা তখনই উপকৃত হবেন যখন চিকিৎসকরা উপজেলাতে থাকবেন।’

তিনি আরও বরেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক থাকলেও গাইনি চিকিৎসক নেই, গাইনি আছেতো অপারেশন থিয়েটারের কাঠামো নেই, আবার কোথাও অপারেশন থিয়েটার থাকলেও আইসিইউ কিংবা সিসিইউর সুবিধা নেই। আর আইসিইউ কিংবা সিসিইউ সুবিধা না থাকলে কী করে রোগীদের ক্রিটিক্যাল সময়ে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। তাই তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দিতে দরকার অবকাঠামোর উন্নয়ন। একটি নির্দিষ্ট অবকাঠামো যদি করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাওয়া সম্ভব হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা জরুরি উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা কমিটি রয়েছে এবং এ কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য। প্রতি দুই থেকে তিনমাস পরপর এ কমিটির মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও বছরে একবারও মিটিং হয় না। তাই তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত হতে হবে।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান  বলেন, ‘ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমাতে জেলা হাসপাতালগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। জেলা শহরগুলোতে সিনিয়র কনসালটেন্ট, সিনিয়র ফিজিসিয়ান, পর্যাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারসহ সব ধরনের সুযোগ দিলে ঢাকার হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো অর্গানোগ্রামের বিষয়। একটি ৫০০ বেডের, একটি আড়াইশ বেডের এবং একটি ১০০ বেডের হাসপাতালকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ থেকে এ বিষয়ে ওয়ার্ক আউট করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই আমরা সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলেই সমস্যার সমাধান হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top