সকল মেনু

কেন রমেল চাকমা মারা গেল, কিভাবে মারা গেল

হটনিউজ ডেস্ক: রাঙ্গামাটির রমেল চাকমা কি নির্যাতনে মারা গেছেন? আর যদি তাই হয়, তাহলে কাদের নির্যাতনে? নানিয়ারচর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর চিকিৎসক বলছেন,‘রমেলকে যখন প্রথম হাসপাতালে আনা হয় তখন সে খুব বমি করছিল’। আইএসপিআর-এর কথা,‘৫ এপ্রিল রমেলকে আটকের পর ওই দিনই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি।’ নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথা, ‘রমেলকে সেনাবাহিনীর লোকজনই হাসপাতালে ভর্তি করে। আমরা ১৯ এপ্রিল লাশ গ্রহণ করেছি’।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমাকে আটক করা হয় ৫ এপ্রিল। আর তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ১৯ এপ্রিল। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ‘গত ৫ এপ্রিল রমেল চাকমাকে আটক করে সেনাবাহিনী। এরপর নির্যাতন করেছে। তারপর থানায় হস্তান্তর করতে চেয়েছিল, অবস্থা ভালো না দেখে থানা নেয়নি। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে চেয়েছিল তারাও না রেখে পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রমেল নির্যাতনের কারণেই মারা গেছেন এটা স্পষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমেলের বিরুদ্ধে যদি মামলা থাকতো, বা তার কাছ থেকে অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে সন্দেহবশত যদি আটক করতো তারপরও তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা যায় না।’ রমেলের বাবা এ বিষয়ে একটি মামলা করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান রবিবার বলেন, ‘সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রাঙামাটির এইচএসসি শিক্ষার্থী রমেল চাকমা মারা গেছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেটি ভিত্তিহীন, অসত্য। গত ৫ এপ্রিল ট্রাক পোড়ানো ও দুটি বাস লুটের ঘটনায় রমেল চাকমাকে গ্রেফতার করা হয়। আটক করার পরে ওইদিনই তাকে নানিয়ারচর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল রমেল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধরার ১৪দিন পর ১৯ এপ্রিল সে মারা যায়।’

৫ এপ্রিল ঘটনার রাতে নানিয়ারচর থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন এএসআই আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার মনজু রহমানের নেতৃত্বে কিছু সেনা সদস্য বুধবার (৫ এপ্রিল) রাত ১২.৩০ টার দিকে রমেলকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে। সে (রমেল) খুব বমি করছে দেখে নানিয়াচর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিই আমরা। সেনাসদস্যরাই সেখানে তাকে নিয়ে গেছেন।’

আর নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুপুর কান্তি দাশ বলেন, ‘রমেলকে রাত প্রায় একটার দিকে আমাদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন নিয়ে আসে। তখন কর্তব্যরত ডা. অতুন সাহা রোগীর অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) পাঠিয়ে দেন।’

নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেছেন, ‘আমরা রমেলকে আটক করিনি। তাকে আটক করবো কেন ? তার বিরুদ্ধে তো কোনও মামলা নাই। আর তাকে আমরা হাসপাতালেও ভর্তি করিনি। আমরা পাঁচলাইশ থানা পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানবতার খাতিরে ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে গিয়ে লাশটি গ্রহণ করি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সিএমপির পাঁচলাইশ থানা এলাকায়, ওরাই সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করেছে। কিন্তু রমেল চাকমার বাড়ি নানিয়ারচরে হওয়ায় লাশ আমাদের নানিয়ারচরে নিয়ে আসতে হয়েছে।’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কথা বলে জানা যায়, ‘রমেলকে ঘটনার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হিসেবে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। পরে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।’ হাসপাতালের রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুযায়ী রমেল চাকমাকে ৬ এপ্রিল সকাল ৭টায় রয়েল চাকমা হিসেবে ভর্তি করানো হয়। পিতা বিনয় কান্তি চাকমা। নানিয়ারচর থানা ভুড়িহাটি গ্রামে। জেলা রাঙামাটি।’

২১ এপ্রিল বিকেলে কাউখালী উপজেলার ইউএনও, থানা পুলিশ, আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে রমেল-এর শেষকৃত্য হয়।

এদিকে ৫ এপ্রিল রমেল চাকমাকে আটকের পরদিন ৬ এপ্রিল তার বাবা কান্তি চাকমা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করেন। মানবাধিকার কমিশন সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে রমেল চাকমার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটি এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। তবে রমেলের বাবার কথা তিনি ৬ এপ্রিল অভিযোগ করার পরই কমিশন ব্যবস্থা নিলে তার ছেলে হয়তো বেঁচে থাকতো।

তবে কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমরা ৬ তারিখ অভিযোগ পাইনি। যেদিন পেয়েছি আমরা সেদিনই তদন্ত কমিটি করেছি। একজন নিরপরাধ মানুষকে যদি নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।’

এদিকে, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা রমেল চাকমার মৃত্যুর বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনও চিঠি দিয়েছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) পাঠানো ওই চিঠিতে এ ঘটনায় বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে কমিশন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top