সকল মেনু

হায়রে নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি !

 আরমান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: পুলিশের অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও তল্লাশির কারণে বর্ষবরণে আগতরা অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। নিরাপত্তা বাড়াবাড়ির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা এলাকায় প্রবেশ করতে না পেরে অনেকেই ফিরে গেছেন। এর মূল কারণ সঙ্গে থাকা ব্যাগ। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিরাপত্তা জোরদার করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তবে অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে সার্বজনীন উৎসব উদযাপনে কিছুটা হলেও ঘাটতি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

১৪২৪ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে রাজধানীর বাংলামোটর, কাকরাইল, হাইকোর্ট, রমনা পার্ক, নীলক্ষেত, বকশীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে উদযাপিত হচ্ছে নববর্ষ। প্রবেশ পথ ছাড়াও বিভিন্নস্থানে চলছে তল্লাশি। ব্যাগ নিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না পুলিশ। এ কারণে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তক-বিতর্কও করেছেন। তবে কাজ হয়নি। বাইরে পরিচিত কেউ নেই যার কাছে ব্যাগ রেখে ভেতরে প্রবেশ করবেন। অগত্যা ব্যাগ ফেলে যেতে হয়েছে। আবার অনেকে ফিরে গেছেন।

নীলক্ষেত মোড় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারুক আলম, তার স্ত্রী তাহমিদা আলম, দুই ছেলে ফাহিম ও তাহমিদ প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশ তাদের আটকে দিয়ে বলে, তাহমিদার সঙ্গে হাতব্যাগ থাকায় তাকে যেতে দেওয়া হবে না। অনুরোধ করার পরও তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ব্যাগ বাইরে রেখে যেতে পারলে ভেতরে ঢুকতে পারবেন বলে জানায় দায়িত্বরত পুলিশ। এতে বাধ্য হয়ে তিনি ব্যাগ নিয়ে বাইরে থেকে যান ফারুক এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে না পারায় ক্ষুব্ধ ফারুক আলম বলেন, ‘ব্যাগে কী আছে তা চেক করে দিলেই তো হলো। এমন কিছুই নেই। তারপরও যেতে দিল না। এটা বাড়াবাড়ি।’

ব্যাগ নিয়ে আসতে ডিএমপিতে থেকে আগেই নিষেধ করা হয়েছিল জানালে ফারুক আলম বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম বড় ব্যাগ। ছোট পার্স ব্যাগও যে নেওয়া যাবে না তা বুঝতে পারিনি।’

একই চিত্র দেখা গেছে বাংলামোটর এলাকায়। বেশ কয়েকজনকে আটকা পড়তে দেখা গেছে। কয়েকজন আবার পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডও করছেন। কিন্তু কিছুতেই ব্যাগ নিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মিরপুর থেকে আসা রিসাত আরা বলেন, ‘তিনবার তল্লাশি করছে পুলিশ। ব্যাগ থাকায় আটকে দিয়েছে। কিছু পেলে যেতে না দিক সমস্যা নাই। কিন্তু ব্যাগে টাকা আর মোবাইল ছাড়া কিছু নাই। তারপরও যেতে দিচ্ছে না। এখন ব্যাগ কোথায় রাখব?’

হাইকোর্ট মোড়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন আগতরা। রামপুরার বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে এই রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। একটু দ্রুত করলে কি হয়?’

হাইকোর্ট ডাইভারশনে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অনেককে রাস্তার পাশে ব্যাগ ফেলে যেতে দেখা গেছে। তাদের একজন ফারজানা আক্তার বলেন, ‘ব্যাগের কারণে যেতে দেবে না। তাই ব্যাগ রেখেই যাচ্ছি। এখন ফিরে এসে পাই কিনা জানি না।’

 

রমনা বটমূল এলাকায় কথা হয় ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তল্লাশিকরে সবাইকে প্রবেশ করানো হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু আমার মনে হয়েছে একটু বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক উৎসব উদযাপন ব্যাহত হচ্ছে।’

এদিকে সার্বিক নিরাপত্তায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণ। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, বর্ষবরণে নিরাপত্তার স্বার্থে কি কি নিয়ে আসা যাবে না তা আগেই জানানো হয়েছে। যারা এগুলো মেনে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তার স্বার্থে অধিক তল্লাশি ও পুলিশের সতর্ক অবস্থান সমর্থন করছি।

একই কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাথী ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশে জঙ্গিদের এই উৎপাত ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করা অপরিহার্য। এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি। ক্যাম্পাস এলাকায় আমি অনেক বেশি নিরাপদ মনে করছি।’

রমনা জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার এহসান বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি করছি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উৎসব আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে ব্যাগ নিয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু যারা ব্যাগ নিয়ে এসেছেন তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’

রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মাধ্যমে উৎসব আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় যারা পুলিশেল নির্দেশনা মেনে পথে চলছেন তাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আমরা নিরাপত্তার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছি।’

বিশেষ নির্দেশনার মধ্যে ছিল – ইনডোর ও সংরক্ষিত স্থানে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সূর্যাস্তের পরেও অনুষ্ঠান করা যাবে।

কেউ মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রায় আয়োজক সংস্থা চারুকলা ইনসটিটিউটের সদস্যরাও মুখোশ ব্যবহার করতে পারবে না। তবে হাতে করে মুখোশ বহন করা যাবে।

নিরাপত্তার স্বার্থে হ্যান্ডব্যাগসহ যে কোনও ধরনের ব্যাগ বহন করা যাবে না।

বিকাল ৫টার মধ্যে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রবীন্দ্র সরোবর এলাকাসহ যে সব উন্মুক্ত স্থানে বৈশাখী সমাবেশ হবে সে সব এলাকা ত্যাগের অনুরোধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতরা রাত ৬টার পর অবস্থান না করা।

রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব প্রবেশ গেট বিকাল ৪টার পর বন্ধ। বিকাল ৪টার পর দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা না করা।

মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে কোনও লোক বহন করা যাবে না। তবে মোটরসাইকেলের পেছনে কোনও আরোহী যদি স্ত্রী/নাবালক সন্তান হয় সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top