সকল মেনু

বঙ্গভবনের বাজারের টাকা ছিনতাই ও তদন্তের গল্প

হটনিউজ ডেস্ক: বঙ্গভবনের দৈনন্দিন বাজারের টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতারের পর ভুয়া ঠিকানা দিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে তিন বছর ধরে পলাতক রয়েছে সেই ছিনতাইকারী। সঠিক ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তবে তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি তার। তিন বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল সেই দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী মো. সোহাগ ওরফে ছালাম (২৫)কে গ্রেফতার করেছে। এজন্য  পিবিআইকে কাজ করতে হয়েছে সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করে।

ছিনতাইকারী সোহাগ স্বীকারও করেছে সেই ছিনতাইয়ের কথা।বর্তমানে সে কারাগারে আছে।পিবিআই ঢাকা মেট্রো’র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ  এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে বঙ্গভবনের তৎকালীন কর্তব্যরত সার্জেন্ট (৮ম বেঙ্গল, যশোর সেনানিবাস) রিয়াজ হোসেন ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে দৈনন্দিন বাজার করতে যান। এসময় ডিএমপির ওয়ারি থানার কাপ্তান বাজারিএলাকার ৪৬/এ টয়েনবী সার্কুলার রোডের মুক্তি হোমিও হলের সামনে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে। তার কাছ থেকে পুরো টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় সার্জেন্ট রিয়াজ হোসেনের সঙ্গে থাকা মো. আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারি থানায় ওইদিন  ৩৯২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ২১(০১)১৪। মামলাটি থানা পুলিশ, সিআইডি এবং ডিবি পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে।’

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পর ওয়ারি থানা প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে। তারা মো. মনোয়ার হোসেন মুন্না, মো. সুলতান ও মো. সোহাগ ওরফে ছালাম নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি সোহাগ ওরফে ছালাম জামিন পেয়ে পালিয়ে যায়। সে আর কখনও আদালতে হাজিরা দেয়নি। ভুয়া ঠিকানা দেওয়ায় পুলিশও তাকে খুঁজে পায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে।মামলাটি তদন্ত শেষে সিআইডি শুধুমাত্র একজন আসামি মনোয়ার হোসেন মুন্নার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তবে বাদীর নারাজির পর মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (পূর্ব)কে।ডিবি মামলাটি তদন্ত করে জামিনপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. সোহাগ ওরফে ছালামের সঠিক ঠিকানা না পেয়ে তাকে মামলা হতে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাতেও নারাজি দেন বাদী। এরপর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। ইতোমধ্যে চলে যায় প্রায় আড়াই বছর।’

পিবিআই সূত্র জানায়, পিবিআই মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পলাতক আসামি সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। এবছরের ১১ মার্চ রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর মামলায় অভিযুক্ত পলাতক আসামি মো. সোহাগ ওরফে ছালামকে গ্রেফতার করে তারা। পুলিশ তার নাম জানতো ছালাম। গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই জানতে পারে তার নাম মো.সোহাগ। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার আলমবুনিয়া গ্রামের জুয়েল হাওলাদারের ছেলে এই সোহাগ।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ পিবিআইকে জানায়,  সে ৭/৮ বছর বয়সে সংসারে অভাবের তাড়নায় ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় কোনও আত্মীয়-স্বজন না থাকায় সে সদরঘাট লঞ্চঘাট টার্মিনাল এলাকাতে আশ্রয় নেয়। বয়সে ছোট হওয়ায় অন্য কোনও কর্মসংস্থান হয়নি তার। ফলে টার্মিনালে থাকা টোকাই শ্রেণির ছেলেদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। টোকাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। পরে কয়েকজন টোকাই একত্রিত হয়ে টার্মিনাল এলাকায় ছোটখাট চুরির কাজ করতো। একপর্যায়ে তারা কয়েকজন মিলে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের পেছনে রেলওয়ে কলোনি বস্তিতে একটি রুম ভাড়া নেয়। এখানে মনির নামের একজনের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে। মনির তাদেরকে ঢাকার যানজট পূর্ন টার্মিনাল এবং রাস্তাঘাটে চলমান পরিবহন যাত্রীদের ব্যবহৃত মোবাইলফোন ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়া ও পকেটকাটার কৌশল শেখায়।মূলত মনির ছিল ছিনতাই করে আনা জিনিসপত্রের একজন বিক্রেতা।এছাড়া টোকাই গ্রুপটির টাকার এক-তৃতীয়াংশ ভাগও পেতো সে। তারা কখনও ধরা পরে জেলে গেলে, মনির তাদের জামিনের ব্যবস্থা করতো। এই চক্রটির একাধিক সদস্যকে চিহ্নিত করেছে পিবিআই। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ  বলেন, ‘মামলাটি আমরা এবছরের জানুয়ারিতে তদন্তের দায়িত্ব পাই। এর আগে দুজন এই মামলায় গ্রেফতার আছে। তাদের ঠিকানাও সঠিক।তবে সোহাগ কৌশলে ভুয়া ঠিকানা দিয়েছিল। তাকে গ্রেফতারের পর আমরা তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top