খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা:বাজার মুল্য কম হওয়ায় দেশের অন্যতম সবজি ভান্ডার খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী এলাকার পেয়ারা চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। উৎপাদন খরচ ও শ্রমিকের মজুরীর সমপরিমান না হওয়ায় অনেক চাষি বাগান থেকে পেয়ারা তুলছেন না। বাজারে চাহিদা না থাকায় অনেক চাষি মনের দুঃখে গৃহপালিত পশু গরু ও ভেড়াকে খাওয়াচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে আবহাওয়া বিপর্যয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
গত সোমবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন পেয়ারা চাষির বাগান সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ফলন প্রচুর কিন্তু বাজারমূল্য হওয়ায় চাষিরা পড়েছেন বিপাকে । বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, তিনি এ বছর তার খামারে ৭২বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। তিনি আশা করেছিলেন এবার তার খামার থেকে প্রায় এক কোটি টাকার পেয়ারা বিক্রি করবেন। কিন্তু বাজার মুল্য কমহওয়ায় তিনি সর্বস্বান্ত্ব হয়ে গেছেন। তিনি জানান, এক কেজি পেয়ারা পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ টাকা দরে অথচ এক কেজি পেয়ারার উত্তোলন খরচ পড়ছে ১০ টাকা। চাষি ময়েজ প্রশ্ন করেন একজন শ্রমিককে প্রতিদিন দিতে হয় তিন শ’ টাকা। তাহলে বাজার দর ধ্বসে গেলে কিভাবে চাষি বাঁচবে? চাষি ময়েজ জানান, তার উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা। এখন উৎপাদন খরচ আর জমির ভাড়া আর ব্যাংক ঋণের সুদের হিসেবে তার প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঈশ্বরদীর অন্যতম পেয়ারা চাষি বেইলি বেগম জানালেন তিনি ১৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করে পথে বসেছেন। তিনি অশ্র“সজল কন্ঠে জানান, সার- কীটনাশক এর দাম আর শ্রমিকদের দেনা পর্যন্ত শোধ করতে পারছেন না। তিনি জানান এ রোজার মাসে অর্থভাবে তিনি পেয়ারা মুখে দিয়েই ইফতার সারছেন। তিনি জানান, শ্রমিক দিয়ে পেয়ারা ওঠানো খরচই উঠছে না তাই গাছ থেকে পেয়ারা উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। মনের দুঃখে অনেক চাষিকে তাদের গৃহপালিত গরু ও ভেড়া দিয়ে পেয়ারা খাওয়াতে দেখা গেছে। চাষি ময়েজ, লাইল বেগম, পান্না হোসেন, আমজাদ হোসেনের মত বহু পেয়ারা চাষি জানালেন তাদের ক্ষতির কথা।
পেয়ারা বাগান পরিদর্শনে আসা ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খুরশিদ আলম কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি পেয়ারা চাষিদের ক্ষতির কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।
বাজার ধ্বসে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, চাষিরা প্রচন্ডভাবে জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। তারা জানান, এবার বেশ আগেই ফুল এসে যায়। এরপর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলও সুপুষ্ট হয়নি। দ্রুতই তা বাজারে নেয়ার উপেযাগী হয়ে পড়ে। রমজানের কারনে বাজার মূল্য কমেগেছে। আর রমজানের শুরুতেই হরতাল শুরু হওয়ায় বাজার মুল্য আরো যায়। সেই ধ্বসে যাওয়া বাজার আর ঘুরে দাঁড়ায়নি। বাজার একবার ধ্বসে গেলে তা সহজে ওঠে না বলে চাষিরা জানান। রমজান মাসের হরতাল তাদের সবচেয়ে বেশী সর্বনাশ করে দিয়েছে বলে পেয়ারা চাষিরা জানান।
পেয়ারা চাষিরা অভিযোগ করে বলেন ধান- পাটের জন্য ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে কিন্তু জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ফল চাষিদের দিকে সরকারের নজর নেই।
তারা দাবি করে বলেন, পেয়ারা চাষিদের ভর্তৃুকি, ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ ও স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে, কৃষি বীমা চালু করে এবং ঈশ্বরদীর ফল ও সব্জি প্রধান এলাকায় একটি কোল্ড ষ্টোরেজ স্থাপন করে চাষিদের করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।