সকল মেনু

বরফ গলছে আ.লীগ নেতৃত্বে বিএনপির ঐক্যবদ্ধ প্রচা

index-abnews24_49435হটনিউজ২৪বিডি.কম : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার গতকাল ছিল তৃতীয় দিন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন দুজনেই বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিন যত গড়াচ্ছে বিএনপি তত ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বেরও বরফ গলছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আইভীর পক্ষে মাঠে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমান-সমর্থক নেতাকর্মীদের।

গত তিন দিন তিনটি ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রথম দিন তিনি প্রচারণা চালান সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি। তিনি শামীম-সমর্থিত রাজনৈতিক নেতা এবং কাউন্সিলর প্রার্থী। আইভীর নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ছিলেন না। স্থানীয়দের তথ্যে জানা যায়, সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচনী প্রচারণার একসময় মতিউর রহমান মতির বাসায় গেলেও ওই সময় মতি বা তার পরিবারের কেউ বাসায় ছিলেন না। আইভীর প্রচারণায় বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলী তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের মূলধারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে স্থানীয়রা জানান। মেয়রের প্রচারণাকালে কেন ছিলেন না এমন প্রশ্নে মতিউর রহমান বলেন, ওই সময় আমি এলাকার বাইরে ছিলাম। তবে দলের নির্দেশ অনুযায়ী নৌকা প্রতীকের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি।

দ্বিতীয় দিন সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচনী প্রচারণায় যান সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ৮নং ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সেলিনা হায়াৎ আইভী গণসংযোগ চালান। এ সময় আইভীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর রহুল আমিন মোল্লা ও আইভী অনুসারী নেতাকর্মীরা। একসময় গোদনাইল আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. বারী এসে যোগ দিলেও শামীম ওসমান অনুসারী কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছিলেন না। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমান-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন ভূইয়া। মহসিন ভূইয়া এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রচারে ছিলেন না।

পরে আইভী সিদ্ধিরগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান। কাউন্সিলর আলা হোসেন মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক এবং থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। আইভী প্রচারকালেও আলা হোসেন অফিসে বসেছিলেন। স্থানীয়রা জানান, আইভীর সঙ্গে আসা কয়েকজন কাউন্সিলর আলা হোসেনকে কয়েকদফা খবর দিলেও তিনি প্রচারণায় যাননি। অবশ্য আইভীর সঙ্গে ছিলেন সাত খুন হত্যার শিকার নজরুলের সহযোগী স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান খান (রিপন)। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বাবুও আইভীর নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন। থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদেকুর রহমানও আইভীর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক যুবলীগ নেতা আমাদের সময়কে বলেন, আইভীর নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও রাজনৈতিক বিভেদের কারণে যেতে পারছেন না। অনেকে শামীম ওসমান-সমর্থিত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ অবস্থায় আইভীর নির্বাচনী প্রচারণার খবর শামীম ওসমানের কাছে গেলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেকে যাচ্ছেন না। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ভোট দেওয়ার বিষয়ে এখনো শামীম ওসমানের কাছ থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নানামুখী জটিলতা দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কী হবে বলা যাচ্ছে না।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত শহরের পাইকপাড়া, বড় কবরস্থান, ছোট কবরস্থান, পুল, আমলাপাড়া, কালীর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

প্রচারণার ক্ষেত্রে আইভীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ধানের শীষের সাখাওয়াত হোসেন। সাখাওয়াত হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে প্রচার চালান বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের একসঙ্গে দেখে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হয়ে উঠছে। সাখাওয়াত হোসেনের মঙ্গলবারের প্রচারে তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, সাবেক ৩ সংসদ সদস্য আবুল কালাম, গিয়াসউদ্দিন, আতাউর রহমান আঙ্গুর, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেলসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
অবশেষে আইভীর পক্ষে শামীম সমর্থকরা

নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নিয়ে অবশেষে গণসংযোগে নামলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানপন্থী নেতারা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের এক সভার পর রাতে আইভীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণায় বের হন নেতারা। তারা নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে নৌকা প্রতীকের পক্ষে স্লোগান দিয়ে প্রচারণা চালান। এর আগে সন্ধ্যায় শহরের ২ নম্বর রেল গেটস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রশিদুল আলম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ডাবলু উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও সভায় শামীম ওসমানপন্থী হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা যে কোনো বিভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেন। পরে নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা শুরু করেন।

সভা থেকে ৭টি ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কার্য বণ্টন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইভীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ঘোষণা করা হয়। ফলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকবে।

এছাড়াও প্রধান নির্বাচনি ক্যাম্পে বসে থেকে মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ড মনিটরিং করবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। বন্দরের ৯টি ওয়ার্ড মনিটরিং করবেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড মনিটরিং করবেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top