সকল মেনু

আইভীর অপেক্ষায় নেতারা, নেতাদের অপেক্ষায় সাখাওয়াত

a728e61c43089208a29de854a7044284-583a3c31f2037হটনিউজ২৪বিডি.কম : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের প্রচারণা পুরোদমে চালাচ্ছেন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী দলের নেতাদের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান প্রচারণার জন্য দলীয় নেতাদের ওপর নির্ভর করছেন।

আগামী ২২ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা। যা চলবে আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন ভোটার রয়েছেন। তবে নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দলের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিরোধীতা থাকলেও দলীয় প্রধানদের কঠোরতায় তা অনেকটা কমে এসেছে। তাছাড়া দলীয় প্রধানের বার্তা নিয়ে প্রায় প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ আসছেন কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারক ও নেতারা।

বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। ওই সময় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও আসেন। সভায় জাফরউল্লাহ নেতা ও প্রার্থীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। এদিন সকাল ৯টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ৬ ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন আইভী। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি। এমনকি শামীম ওসমানের বিরোধীতাকারী জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলকেও দেখা যাচ্ছে না আইভীর সঙ্গে।

সেলিনা হায়াৎ আইভী হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন,‘নেতাকর্মীরা যে যার মতো কাজ করছেন। আমি প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। সব ভোটারের কাছে তো এত অল্প দিনে যাওয়া সম্ভব না। তাই প্রতিদিন কোনও না কোনও ওয়ার্ডে আমি ঘুরবো। ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইবো।’

আইভীর ঘনিষ্ট একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘গতবারও আইভী ২৭টি ওয়ার্ড ঘুরেছেন। এবারও টার্গেট আছে ২৭টি ওয়ার্ড ঘুরবেন এবং জনগণকে উন্নয়নের বার্তায় ভোট চাইবেন। কারণ আইভীর অনেক টার্গেটের একটি হলো তিনি যেসব এলাকাতে যাবেন, ওইসব এলাকার লোকজন যেন অন্তত এটা বলতে পারেন আইভী ভোট চাইতে এসেছিলেন। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করেই এগুচ্ছেন আইভী। সে কারণেই আইভী কোনও এলাকাতে গণসংযোগে গেলে বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ সবাইকে ডেকে নিজের মিছিলে যোগ করাচ্ছেন।’

গত ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন নেতাদের সঙ্গে নিয়েই প্রতীক নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আসেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রতীক পেয়েই নেতাদের নিয়ে মাসদাইরে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার ও শামীম ওসমানের বাবা প্রয়াত ভাষা সৈনিক স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত একেএম সামসুজ্জোহার কবর জিয়ারত করেন।

ওইদিন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর রেল গেটস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মহিবুল হক চৌধুরী নওফেলসহ কেন্দ্রের নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন আইভী। পরে তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জনসংযোগে বের হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সেদিন রাত ৭টা পর্যন্ত স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করলেও আইভী উপস্থিত ছিলেন না।

গত ৬ ডিসেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আসেন অসীম কুমার উকিল। তিনি এদিনও নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করলেও সেখানে ছিলেন না আইভী। এদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সেক্রেটারি ইসহাক খান পান্না আসেন নারায়ণগঞ্জ। তিনি তার মতো নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে রাতে আইভীর বাসায় বৈঠক করেন।

২ ডিসেম্বর বিকেলে শহরের দুই নম্বর রেল গেটস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ টিমের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত সভায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও সন্ধ্যায় আইভী মাত্র ১০ মিনিটের জন্য এসে চলে যান। পরে তিনি তাঁর বাসায় গিয়ে নির্বাচনের আনুষঙ্গিক কাজ করেন।

গত ৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টা হতেই শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকাতে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। কিন্তু নেতাদের আসতে বিলম্ব হওয়ায় পৌনে ১২টায় সাবেক দুইজন এমপি গিয়াসউদ্দিন ও আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে প্রতীক নিতে তিনি আসেন রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয়ে। পরে সাখাওয়াতের প্রচারণার কাজ থমকে যায়। ওইদিন বিকেলে বন্দরে কদমরসূল দরগায় যান সাখাওয়াত। সেখানে এসেছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ। ওইদিনও সাখাওয়াত মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছন পেছন ছিলেন।

৬ ডিসেম্বর ভোরে এক দফায় গণসংযোগ করে সকাল সাড়ে ১০টা হতেই কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন সাখাওয়াত। এদিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সেক্রেটারি কাজী মনিরুজ্জামান আসেন নারায়ণগঞ্জের বিএনপি কার্যালয়ে। সকাল সাড়ে ১১টায় তাদের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের প্রধানতম বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে সাখাওয়াতের উপস্থিতিতেই চলে নগর বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক সভা। ফলে দিনব্যাপী সাখাওয়াতকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনেই সময় দিতে হয়।

৭ ডিসেম্বর সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরে গণসংযোগ করেন সাখাওয়াত। এদিন সারাদিন শহরে গণসংযোগের পরিকল্পনা থাকলেও সিদ্ধিরগঞ্জের ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ আসায় তিনি সেখানেই চলে যান।

এ ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেন খান হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছি। তবে আমরা প্রচারণাতেও থেমে নেই। প্রতিদিন প্রচারণা চালাচ্ছি। আমারও ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবো। তবে বিএনপির ধানের শীষে ইতোমধ্যে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top