সকল মেনু

বাদলের নেতৃত্বে সালথায় সাজেদা চৌধুরীর ভাগ্নের বাড়িতে হামলা: আহত দুই

6124_unnamedফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে হামলার পর এবার জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপির ভাগ্নে চৌধুরী ইউনুস আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের  সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে  যুবলীগ নেতা বাদল হোসেন এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এ সময় হামলাকরীরা বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে ঢুকে দুই আওয়ামী লীগ কর্মী হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে আহত করে । গতকাল বুধবার সকাল বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলা সদরে চৌধুরী বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করে বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী রামদা ও স্যান নিয়ে সালথা বাজারে মহড়া দেয় এবং আওয়ামী লীগ কর্মী হাজ্বী আবুল কালাম ও তার ছেলে ইশারত হোসেনকে খুঁজতে থাকে। এ সময় সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে তারা সাজেদা চৌধুরীর ভাগ্নের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এরপর চৌধুরী বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে ঢুকে আবুল কালাম ও ইশারতকে হাতুড়ি দিয়ে বেদম পেটায় বাদল হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী বলেন, যার বাবা ও মা আমাদের বাড়িতে বছর চুক্তিতে কাজ করতো আর আজ তাদের ছেলে  নামধারী যুবলীগ নেতা ও সালথার শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. বাদল হোসেনের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাড়িতে হামলা করে। এ সময় বাদল বাহনীর হামলার ভয়ে আমার বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ কর্মী হাজী আবুল কালাম ও তার ছেলে এশারত হোসেনকে বেদম হাতুড়ি পেটা করে। গুরুতর আহত এশারত হোসেনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহত আবুল কালামকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এর আগে ১৫ অক্টোবর সকালে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে যুবলীগ নেতা বাদল হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এ সময় মো. দেলোয়ারের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেনকেও হত্যার চেষ্টা করে বাদল। সেসময়ও খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উল্লেখ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১৫ আক্টোর সালথা বাজারে একটি মার্কেট নির্মাণের জন্য আমার পরিবারের একটি ব্যাংক লোন নেওয়া আছে। ব্যাংকের  এক কর্মকর্তাকে মর্গেজ রাখা এ জমি সরেজমিন দেখাতে গেলে উপজেলা যুবলীগের নেতা বাদল হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে থাকা আমার ভাই আনোয়ার হোসেনকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় আনোয়ার হোসেন কৌশলে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা পায়। আনোয়ারকে হত্যায় ব্যর্থ হয়ে তারা আমার গ্রামের বাড়ীতে হামলা ও ভাংচুর করে। এখন আবার নতুন করে আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী ইউনুস আলীর বাড়িতে হামলা করলো। কার ক্ষমতায় বাদল এসব তান্ডব চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার হোসেন বলেন, সালথা উপজেলা বিএনপির প্রভাশালী কিছু নেতার ইন্দনে আওয়ামী লীগের এসব নেতাদের বাড়িতে হামলা করছে বাদল।

এদিকে প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস চৌধুরীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে জানান, যুবলীগ নেতা বাদল হোসেনের বাবা এক সময় চৌধুরী ইউনুস আলীর বাড়িতে কাজ করে ও সালথা বাজার ঝাড়ু দিয়ে সংসার চালাতেন। তখন বাদল হোসেন হোটেলের কর্মচারী ছিলেন। দিনভর ইউনুস চৌধুরীর বাড়িতে কাজ করে সন্ধ্যার সময় চাউল কিনে বাড়িতে নিয়ে আসতেন বাদলের বাবা। সেই চাউলের ভাত খেয়ে বড় হয়েছেন আজকের প্রভাবশালী এই যুবলীগ নেতা বাদল হোসেন। যার ভাত খেয়ে বড় হয়েছেন, ক্ষমতার দাপটে আজ তার বাড়িতেই হামলা চালিয়েছেন বাদল। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এমন কোন নেতা নেই যে বাদল হোসেনের হাতে লাঞ্চিত হয়নি। পুলিশ, সাংবাদিক, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মীচারীদেরকেও একাধিকবার পিটিয়ে আহত করেছেন এই বাদল হোসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুটি বিক্রেতার ছেলে বাদল হোসেন ২০১০ সালে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার হাত ধরে যুবলীগের রাজনীতিতে আসে। বছর খানেক পর সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপির বড় ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলুর সাথে পরিচয় হয়। এরপর আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলুর নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রাসের রাজত্য কায়ম করে বাদল ও তার বাহিনী।  টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসা শুরু করে সব ধরণের অপকর্মের নিয়ন্ত্রণ করে ও থানার দালালী এবং সালিশ বানিজ্য করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বাদল। হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বাদলের বিরুদ্ধে। এতসব করার পরেও প্রসাশনের নজরে আসেনি বাদল।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ বাদল হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নাই।

এ ঘটনার তথ্য জানতে সালথা থানার ওসি ডিএম বেলায়েত হোসেন, আক্রমনের শিকার হাজী আবুল ও তার ছেলে ইসারত হোসেন আত্তরক্ষার জন্য ইউনুস চৌধুরীর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পেছনে বাদলের সঙ্গীয়রা তাদের ধর ধর করতে বাড়িতে ঢুকে ঘরের দরজা লাথি মেরে চলে যায় । এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বেলায়েত হোসেন বলেন আমার কাছেএখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনাই, আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top