সকল মেনু

বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে ঘরে ঘরে : এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা

electricoty_40585হটনিউজ২৪বিডি.কম : বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়াটা এখন শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা। কারণ বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। আর সে কারণেই দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের উৎপাদন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। ২০০১ সালে দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা হয় ৪ হাজার ২৩০ মেগাওয়াট। আর নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যখন আবার সরকার গঠন করে তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। প্রসঙ্গত আর মাত্র ২ বছরের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২০১৮ সালের মধ্যেই প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের লক্ষ্য।

এদিকে চলতি বছর জুলাই মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২,৩৬৫ মেগাওয়াট। জুন মাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৯,০৩৬ মেগাওয়াট, গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৮ লাখ, বিতরণ লাইন ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার, বিতরণ লস ছিল ১০%, মাথা পিছু উৎপাদন ছিল ৩৮০ কিলোওয়াট ও বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৭৬%। সামাজিক উন্নয়নে লাভ নয়, লোকসানও নয়। তৃণমূল লোকজন চায় উন্নয়ন। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যুৎ সকলে পাবে। এখন কেবল সময়ের জন্য প্রতীক্ষা।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ ও বিপণনের মতো ক্রমানুসারিক সমন্বিত এবং বহু স্তরে বিন্যস্ত এক প্রক্রিয়া যার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই প্রযুক্তি। সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৩ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। গত সাড়ে ৭ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে; ১০৫টির মতো বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৭৮ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ১ কোটি ১২ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে ৫ কোটি ৯৪ লাখ লোক বিদ্যুৎ সুবিধা পেত যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৬৮ লাখে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের অভাব নেই, সমস্যা বিদ্যুৎ বিতরণে। দেশের সব জায়গায় এখনো ট্রান্সমিশন হয়নি। প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন করা গেলে ২০১৮ সালের আগেই শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে। আর তাতে সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতের ছটা পৌঁছে যাবে। দেশের কোন গ্রাম বিদ্যুৎহীন থাকবে না। সকল গ্রাম আলোকিত করবে বিদ্যুৎ। সাশ্রয়ী মূল্যে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ।

প্রতিটি এলাকার ছেলে মেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করে সমাজ ও দেশকে আলোকিত করবে। শিক্ষিতের হার বাড়লে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মানব উন্নয়ন হবে; গ্রামীণ জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।

একটা সময় ছিল সন্ধ্যা নামলেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যেত, সে ডাক হারিয়ে গেছে। এখন ঝিঁঝির ডাক শুনতে হলে সীমান্তের কাছাকাছি কোন গ্রাম বা পাহাড়ে যেতে হবে। দেশের অধিকাংশ গ্রামে রাত হলেই বিদ্যুৎ জ্বলে। সভ্যতার ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারায় বর্তমানকে প্রযুক্তির যুগ বলে চিহ্নিত করা যায়। আর এ প্রযুক্তির প্রধান উপকরণ বিদ্যুৎ। ফলে একে বিদ্যুতের যুগও বলা যায়।

বিদ্যুৎ পৃথিবীর দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে, বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। জীবনযাপন এবং উন্নয়নের প্রতিটি খাত অর্থাৎ কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ যেমন এক অপরিহার্য বস্তু; ঠিক তেমনি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যেও সংযোজিত হয়েছে। বিদ্যুৎ সভ্যতার চাবিকাঠি এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃত। শিল্পবিকাশে বিদ্যুতের ভূমিকা বিস্ময়কর। বিদ্যুৎ কেবল সব ধরনের উৎপাদনের উপকরণ হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না, আলো সরবরাহের মাধ্যমে মনের ভূত অর্থাৎ কুসংস্কারও তাড়ায়। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন স্থির; ডিজিটাল যুগে মানুষ এক মুহূর্তও বিদ্যুৎ ছাড়া চলতে পারে না।

বর্তমানে বিদ্যুৎ সংযোগ মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত। দেশের জাতীয় উন্নয়ন পরিমাপ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎও একটি মাপকাঠি। আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই বিদ্যুতের স¤প্রসারণ হয়েছে এবং বিপুল চাহিদা পূরণ হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৭৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠি আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে আসবে। এর মধ্যে জাতীয় গ্রীডের আওতায় প্রায় ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠি বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠি বিশেষ করে দীপাঞ্চল ও চরাঞ্চলের জনগণ সৌর বিদ্যুতের আওতায় আসবে।

দেশের ৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন অঞ্চলে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। অঞ্চল ৩টি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী এবং খুলনা জেলার গোয়ালপাড়া। এ ৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন অঞ্চলে ৩ হাজার একর জমি রয়েছে। এ অঞ্চলের পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কারের মাধ্যমে আরো বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সব মিলিয়ে এসব থেকে আরো সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

সারাদেশে সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছর জুড়ে শ্রেষ্ঠত্ব ছিল কাপ্তাইয়ে কর্নফুলী জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। ২০১৫ সালে সেরা বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। কয়েকশ বছরের পুরনো দ্বীপ কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। এটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্লান্ট। নেপাল ও ভুটানের সহযোগিতায় উত্তরাঞ্চলে আরও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎখাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top