সকল মেনু

নড়াইলে মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে অনেকই সর্বশান্ত

unnamed উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল জেলা থেকে বিশ কিলোমিটার উত্তরে লাহুড়িয়া-হেচলাগাতি গ্রামের একটি মানব পাচারকারী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে যথেচ্ছা শুরু করেছে। এই চক্রের খপ্পড়ে পড়ে অনেক নারী-পুরুষ এখন সর্বশান্ত। ভিটে-মাটিসহ শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে পথে বসেছেন অনেকেই। অনেকে আবার উপার্জনের পথ হারিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে অর্ধা-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। চক্রের হোতা মিটুর মোল্যা ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের সাথে সখ্যতা গড়ে হাতিয়ে নিয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা। নিজের পরিজনদের সকলের সুখের কথা চিন্তা করে কেউ কেউ উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে, কেউবা জমিসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে প্রতারক মিটুরের হাতে তুলে দিচ্ছেন টাকা। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের পাঠানো তথ্যর ভিতিতে জানা যায়, আড়িয়ারা গ্রামের ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী শহিদ শেখের স্ত্রী রাশিদা বেগম প্রতারক মিটুরের হাতে তুলে দিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। ভুক্তভোগী শহিদ শেখের স্ত্রী জানান, নারীদের ওমান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচারের সক্রিয় এজেন্ট মিটুর। শহিদের স্ত্রীকে ওমান পাঠানোর নাম করে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু মিটুর কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ওই মহিলাকে ভারতের বোম্বে শহরে পাচার করে দেয় এবং তাকে ১ লক্ষ টাকা বিক্রি করে ফেলে। সেখানে জোরপূর্বক ভুক্তভোগীকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানো হতো যা ভুক্তভোগী পরে পালিয়ে এসে জানায় এবং আদালতে মামলা দায়ের করে, যার নং- এমপি-১৫/১৬। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সজল আহম্মেদ মামলার সত্যতার প্রমাণ পেয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। বর্তমানে মামলাটির বিচারকার্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সূত্রে আরো জানা যায়, কাশিয়ানী থানাধীন লোহাগড়া সীমান্তের পাংখার চর গ্রামের অহিদ শেখের স্ত্রী নাসিমা খাতুনকে একইভাবে ওমানে পাচার করে দেয়। উক্ত মহিলা ও তার স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বিগত ২০/০৬/২০১৫ ইং তারিখে ভুক্তভোগী নাসিমা খাতুনকে কাগজপত্র প্রস্তুতের কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে ওমানের পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। উল্লেখ্য যে, মানব পাচারকারীর সক্রিয় সদস্য মিটুর মোল্যা পূর্বে থেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। সে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মসহ হুন্ডি ব্যবসায় ও বিষ্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসায় লিপ্ত ছিল। বিগত ১৬/০৭/২০০৫ ইং তারিখে লোহাগড়া থানায় তার বিরুদ্ধে ১৪৭/১৪৯/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/দ: বি: ধারায় বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। আর উক্ত ধারায় দন্ডিত হয়ে সে ০৩ মাস কারভোগও করে। সুকৌশলে জেল থেকে বের হবার পর মিটুর আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে পুরাতন ব্যবসার অবসান ঘটিয়ে সুকৌশলে মানব পাচারের সাথে জড়িয়ে এই মিটুর অরাজকতা, অমানবিকতা, হিংস্রতা, একাধিক আইনের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্পৃহতার সুযোগেই একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। বর্তমানে সে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। সে একাধিক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হওয়া সত্ত্বেও রয়ে গেছে প্রশাসনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পৈশাচিক কায়দায় মেডিকেলের নামকরণ করিয়া ইজ্জত লুন্ঠন করার মতো কাজেও এরা লিপ্ত। এই সমাজের সংবেদনশীল দুই শ্রেণির নারী ও শিশুদের উপর সাম্প্রতিক নির্যাতনের ঘটনাই বড় প্রমাণ। ফলে টর্নেডোর মতো মুহুর্তের মধ্যে নারী তার ইজ্জত হারাচ্ছে। এটা নারী জাতির অপমান। এই রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদেরকে বসিয়ে বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে। তারপরেও নারী নির্যাতনকারীরা সক্রিয় হয়ে উক্ত ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে চলেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top