সকল মেনু

 রিশা হত্যার বিচার দাবিতে উত্তপ্ত উইলস ক্যাম্পাস, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস

রিশা হত্যার বিচার দাবিতে উত্তপ্ত উইলস ক্যাম্পাস, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। সোমবারও বৃষ্টিতে ভিজে রিশা হত্যার বিচার দাবিতে স্কুল মাঠ ও কাকরাইলের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এতে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওবায়দুলকে গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে অভিভাবকরা বিক্ষোভ স্থগিত করেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটাই দাবি- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনে ফাঁসি দিতে হবে ঘাতক ওবায়দুলকে। এদিন বিক্ষোভ সমাবেশ চলার একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরাণ এইচ সরকার। একপর্যায়ে সেখানে শিক্ষামন্ত্রী নুুরুল ইসলাম নাহিদ উপস্থিত হলে বিক্ষোভকারীরা আরও গর্জে ওঠেন। ঘাতক ওবায়দুলের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সেøাগান দিতে থাকেন তারা। এখনও ঘাতক ওবায়দুলকে আটক করতে না পারায় পুলিশের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ওদিকে রিশার পরিবার, সহপাঠী ও কজন অভিভাবক সোমবার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, ছুরিকাহত হওয়ার পর পেটে হাত চেপে দৌড়ে স্কুল গেটে পৌঁছে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেছে রিশা। অনেকক্ষণ সেখানেই পড়েছিল সে। স্কুলের দায়িত্বশীল কেউ তার কাছেও যায়নি। তার চিকিৎসার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রিশাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেয়া যেত। অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কোন গাফিলতি ছিল না।

সোমবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বেলা এগারোটায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল মাঠে জড়ো হয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে রিশা হত্যার বিচার চেয়ে সেøাগান দেয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রিশার বাবা মোঃ রমজান হোসেন, মা তানিয়া হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ সময় রিশার সহপাঠীরা অভিযোগ করে বলতে থাকে, ফুট ওভারব্রিজের নিচে ছুরিকাহত হয়ে রিশা পেটে হাত চেপে ধরে দৌড়ে স্কুলের সামনে আসে। এখানে আসার পর বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে সে। সেখান থেকে সে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে দাঁড়ায় স্কুলের ভেতরে। তখন তার পেটের বাম দিক থেকে রক্ত পড়ছিল। কিন্তু তখন স্কুলের গাড়িটা পাশেই থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাকে গাড়িটা দেয়নি। কোন শিক্ষকও এগিয়ে আসেননি। এ অবস্থায় প্রথম কলেজ সেকশনের দু’জন শিক্ষার্থী এসে ওর ওড়না খুলে পেটে বেঁধে রক্ত থামানোর ব্যবস্থা করে এবং তারাই নিয়ে যায় পাশের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে নেয়ার পর তারা গুরুতর আহত বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রিক্সায় করে এখান থেকে রিশাকে তারা নিয়ে যায়। পুলিশ কেস হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বলেছেন, মামলা হবে, ধরা যাবে না।

এ সময় সাংবাদিকদের কাছে রিশার মা বিলাপ করে বলেন, আমার বাচ্চার রক্ত পড়ছিল। এটা শোনার পরও ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। শিক্ষার্থীরা কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, পেটের ভেতর থেকে নাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি স্কুল কম্পাউন্ডে থাকা গাড়ি দেখিয়ে বলেন, ওই যে কতগুলো গাড়ি, কিন্তু আমার বাচ্চাকে কেউ একটা গাড়ি দেননি। দিলে আমার বাচ্চা বাঁচত, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেয়া যেত। স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও রিশার শিক্ষক সুমিত বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়েছে কিন্তু তিনি পুলিশ কেস বলে মন্তব্য করে তার রুম থেকেই বের হননি।

এদিকে বিক্ষোভে উপস্থিত অভিভাবকরা বলেন, আমরা কাল যখন মানববন্ধন করেছি, তখন শিক্ষকরা আমাদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়েছেন। তারা আমাদের নামে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। একজন শিক্ষিকা আমাদের অশিক্ষিত, মূর্খ বলেছেন। যা মুখে এসেছে তিনি তাই বলেছেন। ঘাতক ওবায়দুল খানের ফাঁসির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন নিয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিরূপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

এ সম্পর্কে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সদস্য সচিব আঞ্জুমান আরা বলেন, নিজ বাসার পরে একটি শিশুর নিরাপদ জায়গা হলো তার স্কুল। কিন্তু এ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অদক্ষ রিশা আহত হওয়ার পর কোন পদক্ষেপ নেননি। সহযোগিতা করেননি। গাড়িটা পড়েছিল স্কুল মাঠে কিন্তু রিশাকে গাড়িটা দেননি তিনি।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, অভিভাবকদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি যখনই শুনেছি, তখনই ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছি। অভিভাবকরা আমার নামে মিথ্যা কথা বলছেন।

আজও কর্মসূচী ॥ এ হত্যার বিচার দাবিতে আজ (মঙ্গলবার) আবারও কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর সোয়া ২টায় কাকরাইল মোড়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচীর ঘোষণা দেন দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মুনতাসির মাহমুদ। তিনি জানান, সোমবারের অবরোধ তারা প্রত্যাহার করছেন। তবে রিশা হত্যাকা-ে জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করবেন তারা। তিনি মঙ্গলবার একই দাবিতে দেশের সব শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন করতে অনুরোধ জানান। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মাইকে মঙ্গলবারের কর্মসূচী পুনরায় ঘোষণা করেন।

শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস ॥ এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সামনে পেয়ে তার কাছে বিচার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষামন্ত্রীর সামনেই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে সেøাগান দেয়। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, রিশার বাবা-মাসহ অন্য স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের হত্যা করে তারা মানুষ নামে পশু। এ হত্যা আমি মেনে নিতে পারি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমি এ বিষয়ে যোগাযোগ করে এসেছি। আমিও এ হত্যার বিচার চাই। অবিলম্বে ঘাতক ওবায়দুলকে গ্রেফতার করে কাঠগড়ায় দেখতে চাই। আইনের বিধান অনুযায়ী তার ফাঁসি চাই। আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের কারও গায়ে আঘাত মানব না। তাদের নিরাপত্তা চাই। কোন শিক্ষার্থী ভুল করলে আমাকে বিচার দেবেন, আমি তা দেখব। ব্যক্তিগতভাবে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, ঘাতক ওবায়দুলের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে। সে এখন আর অপরিচিত নয়। তাকে যে যেখানে দেখবেন সেখানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেবেন। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারের দাবি খুনীর বিচার। এটা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। তার দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি চাই।

উকিল নোটিস ॥ এদিকে সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ওবায়দুল খানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার ব্যাপারে আইনী নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। নোটিসে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার ও রমনা থানার ওসিকে বিবাদী করা হয়েছে। সোমবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিসটি সংশিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নোটিস প্রসঙ্গে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে হাইকোর্টে রিট হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top