সকল মেনু

‘স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ফেইসবুকের একটি স্ট্যাটাস’

indexনিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম: দু’দিন থেকে আমার ফেইসবুকের ওয়ালজুড়ে একটি লেখা বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। এড়িয়ে যেতে চাইলেও কারো না কারো লাইক আর কমেন্টসের ফলে বার বার আমার ফেইসবুকের ওয়ালে ভেসে বেড়াচ্ছে। না, লেখাটি আন্তর্জাতিক কিংবা জাতীয় ইস্যু নিয়ে নয়। নয় বর্তমান সময়ের আইএস কিংবা জঙ্গীবাদ নিয়েও। কিন্তু তারপরও কেন জানি আমি বারবার লজ্জিত হই লেখাটি দেখে।

‘মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তার বেহাল দশাঃ দেখার কেউ নেই’ শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন আমাদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবদুর রহিম। যিনি প্রতিদিন প্রায় ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আমাদের গ্রামে এসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান। লিখেছেন ভালো কথা ফেইসবুকের পাতায় কেন তা শেয়ার করতে গেলেন। ফেইসবুকে শেয়ারের ফলে আজ সুদূর প্রবাসেও থেকেও আমি লজ্জাবোধ করছি। কি দরকার ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি শেয়ার করে আমাকে এভাবে লজ্জা দেওয়ার।

হ্যাঁ, দরকার আপনার ছিল। কারণ এই আপনারাই মানুষ গড়ার আসল কারিগর। আপনাদের কাছ থেকেই আমরা শিখেছি নিজেকে, জাতিকে ও দেশকে কিভাবে গড়তে হয়। আজ যারাই ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করছেন তারা আপনাদের কাছেই বাল্য শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আজ তারা দেশ পরিচালনা করছেন।

যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী- বর্তমান সময়ে সবচেয়ে এ্যাকটিভ মন্ত্রী হিসেবে আপনার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। অনেকেই আবার আপনার চমকপ্রদ কর্মকান্ডের জন্য চুপি চুপি আপনাকে ‘ফাটাকেষ্ট’ বলে থাকেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি শুধু রাজধানী ঢাকার পিচঢালা পথের মন্ত্রী নন, আপনি সমগ্র বাংলাদেশের পায়ে হাটা পথেরও মন্ত্রী। গাঁয়ের নাম সর্বস্ব এ রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের হলেও এ পথ দিয়ে যাতায়াত করা ব্যক্তি রাস্তার বেহাল দশার জন্য কষ্ট পেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলে তার কেন্দ্রবিন্দুতে কিন্তু আপনিই থাকছেন।

খিলাবাজার-মনিপুর-অফিস চিতোষীর বুক চিরে যাওয়া এ সড়কটির নাম ‘দৃষ্টি নন্দন সড়ক’। যা মনিপুর গ্রামের লোকজন এবং স্কুলগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীন চলাচলসহ অন্যখানে যাওয়ার একমাত্র পথ। শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের এ স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে চার’শ।

এ গ্রাম থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছেন আরো প্রায় একহাজার শিক্ষার্থী। ভোটার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। জনসংখ্যা প্রায় নয় হাজার। যারা প্রতিদিন এই কাঁদা ও পানির রাস্তা মাড়িয়ে যাতায়াত করেন।

প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করতে গিয়ে পিছলে পড়ে শিক্ষার্থীদের বই ভিজে যাওয়া, সাইকেল কাধে নিতে গিয়ে পথচারী সাইকেলসহ পড়ে গিয়ে কাঁদায় মাখামাখি হওয়া, কাঁদায় আটকে জুতা ছিড়ে যাওয়া ইত্যাদিসহ ছোটখাটো নানান ধরণের ভোগান্তির স্বীকার হন পথচারিরা।

নব্বই দশকের শুরুতে মনিপুর ঈদগাহের মেহরাব পাকা করতে আনা ইট নদীর তীর থেকে গ্রামের সকলে মিলে মাথায় করে নিয়ে আসার স্মৃতি আজও আমার চোখে জ্বলজ্বল করে ভাসছে। সে তো নব্বইয়ের দশকের কথা- তারপর কত জনপ্রতিনিধি আসলেন আর গেলেন কিন্তু সেই মেঠো পথ আজও তাই রয়ে গেলো। দেশব্যাপী উন্নয়নের এ সময়ে মনিপুর গ্রামে তার ছিটেফোঁটাও কেন পড়ছে না তা আমি অধমসহ পুরো মনিপুরবাসীর বোধগম্য নয়।

হঠাৎ করে কোন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে আনা নেওয়া কিংবা কেউ মৃত্যুবরণ করলে মৃতদেহ বহন করা কতটা দুরূহ ব্যাপার তা ভুক্তভোগী মাত্রই বুঝবেন।

অন্য এলাকা থেকে আগত মানুষ এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় বিরক্তি ভরে বিড়বিড় করে মন্তব্য করেন, ‘এখানে স্থানীয় সরকারের কোন প্রতিনিধি আদৌ আছে কি? এ গ্রামের জনগন কি চিরজীবনই বঞ্চিত থেকে যাবে উন্নয়নের চাদর থেকে?

আরেকটি মজার ব্যাপার হলো- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের নাম ও ঠিকানার যে তালিকা সরকারি ওয়েবসাইটে দেয়া আছে তাতে মনিপুরের নাম নেই। সুক্ষভাবে মনিপুরের নামকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু কেন? এর ফলেই কি মনিপুর গ্রামের এ রাস্তাটি উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত?

আমি আশা করছি না আমার এ লেখাটি পাবলিশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের গ্রামের রাস্তা-ঘাট আলাদিনের চেরাগের দৈত্য এসে ঠিক করে দিয়ে যাবে। তবে আমি এটা আশা করতেই পারি যে, সংশিষ্ট কর্মকর্তারা এ দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার সময় অন্তত পাবেন। তাতে যদি আমাদের রাস্তাটির একটু গতি হয় এবং বাংলাদেশের পাকা সড়কের তালিকায় যুক্ত হয় এই মেঠোপথ। আসুন, আমরা সবাই সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য দোয়া করি তাদের সু-দৃষ্টির।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top