সকল মেনু

কক্সবাজারের অংছিনের কাঁকড়া রপ্তানী হচ্ছে ৬ দেশে

nb_22736হটনিউজ২৪বিডি.কম : ২০১১ সালে মাত্র ৩ একর জমিতে নরম খোসার কাঁকড়ার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছিলেন অংছিন। সেই থেকে শুরু। তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। অংছিনের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত কাঁকড়া এখন রপ্তানী হয় পৃথিবীর ৬টি দেশে। জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর কাঁকড়ার সুখ্যাতি।

একদিন ছোট স্বপ্ন নিয়ে অংচিন যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি এখন অনেকের কাছেই অনুকরনীয়। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই এখন বাণিজ্যিক কাঁকড়া চাষে উদ্যোগি হয়েছেন। মংছিন হয়ে উঠেছেন তাদের কাছে প্রেরণার উৎস।

কক্সবাজার সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নরম কোলস বিশিষ্ট কাঁকড়া উৎপাদন করে অংছিন। তার দেখাদেখি উৎসাহিত হয়ে জেলায় শতাধিক ব্যক্তি কাঁকড়া চাষ শুরু করছেন। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, হংকং ও সিঙ্গাপুরে কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কক্সবাজারের কাঁকড়া চাষীরা নিয়মিত প্রায় ২০টি দেশে কাঁকড়া রপ্তানী করছে।’ বিগত ২০১৫ সালে অংছিনের মালিকানাধীন কাঁকড়া উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইরাওয়ান ট্রেডিং’ ৩০ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানী করেছে। ওই খাতে আয় হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মিলেছে কাজের স্বীকৃতিও।

মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় অভাবনীয় সাফল্যের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠান জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৬ জিতেছে। ‘মৎস্য উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের অবদান’ শ্রেনীতে ওই পুরস্কার দেওয়া হয়। গত বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তাঁকে পুরস্কার হিসেবে স্বর্ণ পদক ও ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন অংছিন। তাঁর পিতা মৃত মেমং একসময় কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কোনকালেই তাদের আর্থিক সঙ্গতি খারাপ ছিলো না। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা উচ্চ শিক্ষিত যুবক অংছিন চাকুরীতে যোগ না দিয়ে নিজেই কিছু একটা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।

বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভার এন্ডারসন রোডে বসবাস পিতৃহারা অংছিনের। ৫ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়। মা মিসেস আমা গৃহিনী। ৪ বোনের বিয়ে হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এন্ডারসন রোডের কার্যালয়ে কথা হয় অংছিনের সাথে। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে বাণিজ্যিক কাঁকড়া চাষে তাঁর উদ্যোগী হওয়ার গল্প।

অংছিন বলেন, ‘২০১১ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের উপকূলীয় গ্রাম মনুপাড়ায় ৩ একর জমিতে তিনি বাণিজ্যিক কাঁকড়া উৎপাদন শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিল উৎপাদিত নরম খোসার কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানী করা। নিজের সঞ্চিত অর্থ ও বন্ধুবান্ধবদের থেকে ধার নিয়ে ৪০ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করি সেখানে। ওই বছর মৎস্য বিভাগের সহায়তা নিয়ে বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানী করার সুযোগ পাই। আর পেছনে তাকাতে হয়নি।’

অংছিন জানান, সরকারি আশ্রায়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহনের কারণে তাঁর কাঁকড়া উৎপাদন প্রকল্পটি পরবর্তীতে সদর উপজেলার চৌফলদন্ডীতে স্থানান্তর করতে হয়। পুরোনো প্রকল্পের জিনিসগুলোও সেখানে কাজে লাগে। মানসম্মত নরম খোসার কাঁকড়া উৎপাদনের কারণে নানা দেশ থেকে প্রচুর অর্ডার আসতে থাকে। চাহিদার নিরিখে উৎপাদনের পরিধিও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন তাঁর প্রকল্প এলাকায় ৫০ হাজার বক্স রয়েছে। প্রতিটি বক্সে একটি করে কাঁকড়া উৎপাদন হচ্ছে। তিনি এখন ইউরোপ, অস্টেলিয়া ও আমেরিকায় তাঁর কাঁকড়া রপ্তানী ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করতে চান। বর্তমানে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে তাঁর ৩ একর আয়তনের আরেকটি কাঁকড়া চাষের খামার রয়েছে। সেখানেও উৎপাদন হচ্ছে নরম খোসার কাঁকড়া। অংছিন আরো জানান, তার কাঁকড়া উৎপাদন খামারে নিয়মিত ৩০ থেকে ৪০ জনের নিয়মিত এবং প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ও ৮০ থেকে ১০০ জনের পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন বলেন, ‘বিকাশ উন্মুখ শিল্প সৃষ্টিকারী অংছিন এখন বাংলাদেশের মডেল। তার পথ ধরে সারাদেশ থেকে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানী করে গত বছর ২০১৫ সালে ১৯৯.৩৮ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বাংলাদেশ। দেশে বাণিজ্যিক কাঁকড়া চাষের প্রথম উদ্যোক্তা তিনি।’ অমিতোষ সেন বলেন, ‘কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি না থাকায় সফলতাও বেশি। আগে মানসম্মত কাঁকড়া চাষের জন্য বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি আনা হতো। এতে প্রতিটি ঝুঁড়ির পেছনে ব্যয় হতো ১৩০ টাকা করে। এখন দেশেই এসব ঝুঁড়ি তৈরি হচ্ছে। মাত্র ৩০ টাকায় ঝুঁড়ি পাচ্ছে কাঁকড়া চাষিরা।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top