সকল মেনু

কোটালীপাড়ায় বিদ্যালয় স্থাপন করলেন কুমারী রেখা রানী

05862f05-a89a-40b0-8e32-32a86efbae62গৌরাঙ্গ লাল দাস , গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নিজের সারা জীবনের অর্জিত অর্থ দিয়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত এক কুমারী নারী। নিজের নামে করা “কুমারী রেখা রানী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়” নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এলাকার শতাধিক মেয়ে লেখা-পড়া করছে।এলাকার মেয়েদের জন্য গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একদিন উত্তর কোটালীপাড়ায় নারী শিক্ষায় ভুমিকা রাখবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

কোটালীপাড়ার বরুয়া গ্রামের বাসিন্দা রেখা রানী ওঝা। সারা জীবন কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেয়া এই নারী লেখা-পড়া শেষ করেছেন নিজের চেষ্টায়। বাবা-মার কাছ থেকে কোন সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই তিনি বিএ পাশ করেছেন। লেখা-পড়া শেষ করে তিনি নিয়েছেন নার্সের চাকরী। দীর্ঘ ২৮ বছর নার্সের চাকরী শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে জমি কিনে নিজের গ্রামেই একটি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। কোটালীপাড়া উপজেলায় এই বিদ্যালয়টি নিয়ে মাত্র দু’টি বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। তা’ছাড়া তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও নাই। এই উপলব্ধি বিবেচনায় এনে এবং এলাকার নারী শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতেই রেখা রানী বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ কুমার বৈদ্য জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেয়া হয়না। বিদ্যালয়টির নানা খরচও চালান এই নারী। নিজের কোন উত্তরাধীকার না থাকায় তার সারা জীবনের ধ্যান-জ্ঞান এই বিদ্যালয়টি। এখানকার শিক্ষার্থীদের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকতে চান। বিদ্যালয়ের যে ক’জন শিক্ষক রয়েছেন তারাও অনেকটা স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের বড় সমস্যা হলো এখনো তারা পাঠদানের অনুমতি পায়নি। যে কারণে পরীক্ষা দেবার সময় অন্য বিদ্যালয়ের হয়ে অংশ নিতে হচ্ছে। এসমস্যা থেকে তারা মুক্তি পেতে চান।

এলাকার বাসিন্দা প্রমথ রঞ্জন দত্ত, মধুসূদন হালদার, পবিত্রা মজুমদার, শংকরী হাজরা বলেন, সারা জীবনে রেখা রানী কারো কাছ থেকে কিছু নেননি। শুধু দিয়ে গিয়েছেন। মাঝে মধ্যে তিনি বিদ্যালয়টিতে ছাত্রীদের পাঠদান করান। সে যে বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছেন তা যেন এলাকাবাসীর উপকারে আসতে পারে-তার জন্য এলাকাবাসীও তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী রিপা বাড়ৈ, ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী সুইটি হালদার, ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী তন্দ্রা হালদার, আখি বালা জানায়, বিদ্যালয়ে তাদেরকে শুধু পুঁথিগত শিক্ষাই নয়-এর পাশাপাশি নিজেদের জীবন গড়তে নানা শিক্ষা দিয়ে থাকে।সাংস্কৃতিক বিষয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়। বাড়ির কাছাকাছি বিদ্যালয়টি থাকায় তাদের সুবিধা হয়েছে অনেক। তা’ছাড়া দুরের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার সময় বখাটেদের উপদ্রপও পোহাতে হয়না।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার আক্রান্ত রেখা রানী জানান, আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন এলাকায় নারী শিক্ষা তেমন প্রসার ঘটেনি। তাই ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো নারী শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা।এটি আমার স্বপ্নের সেই বাস্তবায়ন। সারা জীবন আমি কারো কাছ থেকে কিছু চেয়ে নেইনি। সংগ্রাম করে আমি আমার অধিকার কেড়ে নিয়েছি। নিজের স য়ের অর্থ দিয়ে এলাকার মেয়েদের জন্য এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছি। এ বিদ্যালয়টির মাধ্যমেই আমি সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.মাহাবুবুব রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি অনুমোদনের জন্য আমরা শিক্ষা বোর্ডে একটি পত্র দিয়েছি।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা বলেন, আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে বিদ্যালয়টিতে একটি ভবন করে দিয়েছি। আগামীতে বিদ্যালয়টির উন্নয়নে আমরা আরো কাজ করবো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top