সকল মেনু

ফেনীর রাজাঝির দিঘী দখল-দূষণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে

৪৬নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ৯ মে : রাজাঝির দিঘী। ফেনী জেলার প্রাচীন ঐতিহ্য সমূহের মধ্যে অন্যতম। এক সময় এ দিঘীর পাড়েই গোড়াপত্তন হয়েছিল মহকুমা শহরের। জনশ্রুতি আছে ত্রিপুরা মহারাজের প্রভাবশালী একজন রাজা তার কন্যার অন্ধত্ব দূর করার জন্য ৫/৭ শত বছর আগে এ দীঘি খনন করা হয়।

যেটা এ শহরের লাখো মানুষের প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়ার একমাত্র স্থান। কিন্তু বর্তমানে অব্যাহত দখল আর দূষণে এ দিঘীটি তার পুরনো সেই ঐতিহ্য আর সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।

এ দিঘীর দিনের এবং রাতের নৈসর্গিক এসব দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন। কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে এখন আর দিঘীর পাড়ে বসার সুযোগও নেই।

আর এ কারণে প্রায় সাড়ে ১০ একর আয়তনের ৫ শতবর্ষের পুরনো পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় দিঘীটির ব্যাপারে ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।

শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ দিঘীর চারপাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ইতোমধ্যে কিছু অংশ ভরাট করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। শুধু তাই নয়, দিঘীর চারপাশে বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট এবং আবাসিক এলাকার ময়লা-আবর্জনা ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দিঘীটি। শত বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এটির সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

দিঘীর চারপাশের বেশিরভাগ বাউন্ডারি ওয়ালই ভাঙা। চারপাশে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী শত বছরের পুরনো গাছগুলো সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের বিনোদনের জন্য কয়েকটি বেঞ্চ তৈরি করা হলেও সেখানে ময়লা-আবর্জনার কারণে কেউ বসতে পারে না।

ফেনীর মহকুমা প্রশাসক কবি নবীন চন্দ্র সেন রাজাঝির দিঘীর পাড়ে বসে কবিতা লিখতেন। তিনি মহকুমা প্রশাসক হিসেবে আসার পর দিঘীর পাড় বাঁধাইসহ চারপাশে ব্যাপক সংস্কার করেন। গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়ক বেষ্টিত দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শহরের কাঠামো।

প্রায় সাড়ে ১০ একর অর্থাৎ ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩শ’ ৮০ বর্গফুটের এ দিঘীর পশ্চিমে ট্রাংক রোড সংলগ্ন ফেনী মডেল থানা ও অফিসার্স ক্লাব, পূর্বে একাডেমি রোড সংলগ্ন ফেনী সরকারি কলেজ ও  ফেনী পৌরসভা, উত্তরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও সওজ’র ডাকবাংলো, ঐতিহ্যবাহী  ফেনী আলীয়া মাদ্রাসা, ডায়াবেটিস হাসপাতাল এবং বিপণিবিতান ‘গ্র্যান্ড হক টাওয়ার’, দক্ষিণে  দোয়েল চত্বর সংলগ্ন ফেনী জেলখানা, পিটিআই, জেলা প্রাইমারি শিক্ষা অফিস অবস্থিত।

রাজাঝির দিঘীর পশ্চিম ও উত্তর পাশের সড়কের বিটুমিন উঠে ইতোমধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এছাড়া দক্ষিণ ও পূর্বপাশের দু’টি সড়কের বেশিরভাগই দখলে নিয়েছে হকার এবং ভূমিদস্যুরা।

দিঘীর সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি বিনষ্ট করেছে হকারদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট। দিঘীর চারপাশে ৩শ’র অধিক দোকান গড়ে তুলেছে হকাররা। এসব দোকানের ময়লা-আবর্জনা ছাড়াও দিঘীর চারপাশে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা দোকান ও হোটেলের ময়লা-আবর্জনার নিরাপদ ঠিকানা রাজাঝির দিঘী। ইতোমধ্যে দিঘীর দক্ষিণ পাড়টি ময়লা-আবর্জনায় ঢেকে গেছে। এছাড়া দিঘীর ৪ কোণেই ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা।

দিন-রাত মানুষের দ্বারা নষ্ট হচ্ছে রাজাঝির দিঘীর পরিবেশ। দিঘীর দক্ষিণ ও পূর্ব পার্শ্বে প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগের দৃশ্য চোখে পড়ে নিত্যদিন। চতুর্পাশে ত্যাগ করা মলমূত্র বৃষ্টির পানিতে পুনরায় দিঘীতে পড়ে। স্থানীয় চা দোকানদাররা সে পানি দিয়ে আবার চা বানায়। এছাড়া দিঘীর পশ্চিম ও পূর্ব পাশ্বের ২টি কোর্ট মসজিদের মুসল্লিরা এবং হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী নিয়মিত দিঘীটিতে ওজু ও গোসল করে।
শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে এবং জেলা পরিষদের খামখেয়ালিতে নষ্ট হচ্ছে রাজাঝির দিঘীর পরিবেশ। দিঘী থেকে সেবা নিচ্ছে ফেনী শহরের  বেশিরভাগ মানুষ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ফেনী শহরের সৌন্দর্য শতগুণ বর্ধিত করেছে এ দিঘীটি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যতবারই দিঘীটিকে বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া হাতে   নেওয়া হয়েছে ততবারই তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হকারদের কাছ থেকে মাসিক  মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে দিঘীটির সৌন্দর্য বিনষ্টে কাজ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে জেলা পরিষদের উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

দিঘীর উত্তর ও পূর্ব পাড়ের একাংশ নিয়ে শিশু পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কটি শিশুদের জন্য হলেও সেখানে স্কুল কলেজ পড়ুয়া উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের কারণে শিশুদের নিয়ে সেখানে যাওয়ার কোনো জোঁ নেই। শিশুপার্কটির বেশিরভাগ ফুলের গাছ মরে গেছে। শিশুদের দোলনা এবং পার্কে বসার বেঞ্চগুলো ভাঙা। কোনো রকমে পার্কটি টিকিয়ে রেখে টাকা কামানোই মূল লক্ষ্য কর্তৃপক্ষের। নামমাত্র শিশুপার্ক নয়, পুরো দিঘীটি ঘিরে আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তোলা হোক এমন প্রত্যাশা এ শহরের সব সচেতন মানুষের।

সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজনে’র ফেনী জেলা সভাপতি কবি মাহবুব আল-তমাস জানান, এ জেলার শত বছরের ঐতিহ্য রাজাঝির দিঘী। কিন্তু অব্যাহত দখলেল কারণে দিঘীটি দিন দিন ধংস হয়ে আসছে। এ শহরের মানুষের স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার একমাত্র স্থানটি আজ ঐতিহ্য হারানোর পথে সংশ্লিষ্ট সবার উচিত দিঘীটি রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজ আহাম্মদ চৌধুরী জানান, দিঘীটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে চারপাশে মানুষ বসতে পারে এবং ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন ঘটে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top