নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ৩ মে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে শিল্প কারখানায় শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতি সচল রাখে এবং দেশ উন্নত হয়। তাই শ্রমিকের মূল্যই বর্তমান সরকারের কাছে সবচেয়ে বড়। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রমজান মাসেও আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছিল। সারের দাবিতে আন্দোলন করা ১৮ জন শ্রমিককে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। কিন্তু এখন দেশে সে অবস্থা নেই। দেশের শ্রমজীবী মানুষ এখন নিয়মিত বেতন-ভাতা, মজুরি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশ এখন সব দিক থেকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে বিদ্যমান উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, উত্পাদন বাড়াতে হলে মালিক-শ্রমিকের একটা সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। মালিকদের মনে রাখতে হবে, শ্রমিকের উত্পাদনমুখী কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হলে শ্রমিকরা আনন্দের সাথে কাজ করবেন। এতে উত্পাদন ও পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে বেশি লাভবান হবেন মালিকরাই। শ্রমিকরা যে কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই কারখানা যাতে টিকে থাকে এবং সেটা যেন ভালভাবে চলে সেটার কিছু দায়িত্ব নেয়ার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উভয় পক্ষেরই দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ববোধটা সকলের মাঝে থাকতে হবে। শ্রমিকদের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন প্রবাসে যে শ্রমিকরা যান তাদের কল্যাণের জন্য সরকার বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের স্মার্ট কার্ড দেয়া হচ্ছে। যেখানে সকল তথ্য থাকে। তাদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। তারা কোথায় কাজ করবেন, বেতন কত পাবেন, আদৌও তারা বেতন পাচ্ছেন কিনা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব বিষয় তদারকির ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।
অতীতে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির দুরবস্থার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে শ্রমিকদের কল্যাণের কোনোরকম উদ্যোগই ছিল না। মহান মে দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এক সময় আমেরিকায় কোনো শ্রমিক অধিকারের অস্তিত্ব ছিল না। তাদের ক্রীতদাসের মত ব্যবহার করা হত। সেই আমেরিকার শিকাগো শহরে বুকের রক্তের বিনিময়েই শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে হয়েছিল। তিনি ১৮৮৬ সালের ১ মে শ্রমিকের অধিকার আদায়ে শহীদদের স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এদেশে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, জাতির পিতার সকল আন্দোলন-সংগ্রামে, সকল উদ্যোগেই শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে।
পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর লাভজনক নয় এই কথা বলে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরের সরকারগুলোর আমলেও কারো কারো প্রেসক্রিপশনে এদেশে শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। আমরা মনে করি কারখানা খোলা রেখেই দেশের উন্নয়ন হবে। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বেতন বাড়ানোর জন্য তিনিই ছিলেন শ্রমিক পক্ষের ‘বার্গেনিং এজেন্ট’। ১৯৯৬ পরবর্তী তার সরকারের প্রচেষ্টায় এবং ২০০৯ সালের বিশেষ উদ্যোগের ফলে শ্রমিকদের মজুরি কয়েক দফায় বেড়ে বর্তমানে পাঁচ হাজার তিনশ টাকা হয়েছে। এজন্য মালিক পক্ষের অনেক দাবিও সরকার মিটিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সারাদেশে প্রায় একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী যত্রতত্র শিল্প কারখানা গড়ে না তুলে এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, যত্রতত্র জমি কিনে শিল্প গড়ে না তুলে সারাদেশে অন্তত একশো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সেখানে বিনিয়োগ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পাঞ্চলে জলাধারসহ পরিবেশবান্ধব সব বিষয় থাকা এবং শ্রমবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ন্যূনতম সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় খাতের শ্রমিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্দিষ্ট করেছি। আমাদের শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন করা হচ্ছে। জনগণের কল্যাণ করাই তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আজকের বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক-কৃষক তারা এদেশের মানুষ। তাদের জন্যই আমার এই রাজনীতি। আমার কাছে দাবি-দাওয়া করার প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই জানি কার কি সমস্যা। আর সেই সমস্যাগুলোর কথা চিন্তা করেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আর মাথা উঁচু করে চলতে হলে কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে নয়, কারো কাছে হাত পেতে নয়। নিজেদের শ্রম, নিজেদের মেধা দিয়েই আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে। তিনি জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ারও আহবান জানান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রিনিবাস বি রেড্ডি, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ এপ্লয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সালাউদ্দিন কাশেম খান প্রমুখ।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।