সকল মেনু

বন্ধ হচ্ছে দুই শতাব্দী পুরোনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

৪৮নিউজ ডেস্ক, হটনিউজ২৩বিডি.কম ১৩ এপ্রিল : ১৮ শতকে স্থাপিত হওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক পালাবদলের সাক্ষী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতি টানতে যাচ্ছে সরকার। পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পাওয়া এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কেলেঙ্কারি বহন করছে এই কারাগার।

তবে পুরোপুরি বন্ধ হবে না এর কার্যক্রম, এটির সংস্কার করে এর পূর্ব ইতিহাস সংরক্ষণ করা হবে, কারাগার রূপান্তর করা হবে জাদুঘরে। কারাগারের বর্তমান বন্দিদের ঢাকার কেরানীগঞ্জে স্থাপিত নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। রোববার রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কারাগারটি এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম মডেল কারাগার। নতুন এ কারাগারটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ’। ৪ হাজার ৫৯০ জন বন্দীকে রাখার জন্য এ কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে।

নতুন কারাগার উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উদ্যোগের ফলে আসামীদের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হবে। তাদের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মোঘল এবং ব্রিটিশ স্থাপত্যের আদলে গঠিত। এটি সত্যিকার অর্থেই অনেক পুরোনো এবং জনাকীর্ণ। বর্তমানে এখানে ৮ হাজার বন্দি আছে। যদিও এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৬০০ বন্দিধারণ ক্ষমতার জন্য। ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ এই বন্দিরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ফজলুল কবির বলেন, সামনের মাসে বন্দিদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। তবে এখানে নিরাপত্তার একটি বিষয় আছে তাই আমাদের খুব সাবধানে, ধীরেসুস্থে এটি করতে হবে’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশের জন্ম। এটি পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদের ফল। পাকিস্তানিরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি। যদিও তার দল ১৯৭০ এর নির্বাচনে বেশিরভাগ আসন জিতেছিল।

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশিরভাগ সময় এই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দিন কাটিয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টির বেশিরভাগ নেতা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জড়িত বুদ্ধিজীবীরা এখানে কারাবরণ করেছেন। জেল সুপারিন্টেনডেন্ট ফরমান আলী বলেন, শেখ মুজিবের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে এই কারাগার তার দ্বিতীয় ঘর। ১৯৬৯ সালে এই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের  জেলগেট থেকে বের হওয়ার পর এক বিশাল সমাবেশে তাকে বঙ্গবন্ধু বা বাংলার বন্ধু উপাধি দেয়া হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একই বছরের নভেম্বরের ৩ তারিখ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ৪ ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী ৪ জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরিকল্পনাসহ বাংলাদেশেকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কারাগারে  নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে এবং ধর্মকে রাজনীতির সাথে যুক্ত করে এর ফায়দা নেয়। নিষিদ্ধ করা ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামী আবার পুনরুজ্জীবিত হয় এবং এই দলের রাজনৈতিক নেতারা পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। এই দলটি সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করেছে।

১৯৮১-১৯৯০ পর্যন্ত এইচ এম এরশাদের একনায়কত্বের শিকার হয়ে অনেক বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এই কারাগারেই কারাবরণ করেছিলেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির। কিছুদিন আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে সামরিক শাসন বাংলাদেশে আবার ফিরে আসে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বে ২০০৬-২০০৮ পর্যন্ত বিভিন্ন দলের অনেক বিখ্যাত ছাত্রনেতা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাটিয়েছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধ করা  জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩০ লক্ষ মানুষ এবং ২ লক্ষ নারীকে নির্যাতন করেছিল। এদের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করা চারজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।
হটনিউজ২৩বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top