সকল মেনু

বিদ্যুৎ-ব্যান্ডউইথ বিনিময় উদ্বোধন:‘আরেক মাইলফলক’, ‘ঐতিহাসিক’

Modi_hasina_bg1_258183739 হটনিউজ ডেস্ক,ঢাকা: ত্রিপুরা ‍থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ রফতানি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন।

বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে ত্রিপুরা থেকে ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি ও বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি কার্যক্রমের আনুষ্ঠা‌নিক উ‌দ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তারা।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে ত্রিপুরা-কু‌মিল্লা আন্তঃ‌দেশীয় গ্রি‌ডের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।

সকাল সাড়ে দশটার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনা, অন্যদিকে দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন।

এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে ত্রিপুরা থেকে সংযুক্ত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের এ অনুষ্ঠানে এরপর বাংলায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বিনিময়কে দুই দেশের সর্ম্পকের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ আমদানি আমাদের জ্বালানির চাহিদা পূরণ হবে। আর বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ পাওয়ার ফলে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং সেখানকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বন্ধনকে সুদৃঢ় করবে। ২০০৯ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর হয়। বিদ্যুৎ-ব্যান্ডউইথ বিনিময় সে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করলো।

‘আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এ অঞ্চলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি শুরুতে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।

বিদ্যুৎ ও ব্যান্ডউইথ বিনিময়ে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতবাসীর তরফ থেকে জানাই অভিনন্দন। আমরা আনন্দিত।

মোদির বাংলা বক্তব্য উচ্চারণ ও গতি সাবলিল না হলেও তার বক্তব্যে আন্তরিকতা ও আবেগ প্রকাশ পাচ্ছিলো।

বক্তব্যের শেষের অংশটুকু মোদি অবশ্য হিন্দিতে রাখেন।

মোদির বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হিন্দিতে মোদি ও ভারতবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। দোল উৎসব উপলক্ষেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।

শেখ হাসিনা ও মোদির বক্তব্যের সময় ভিন্ন ধরনের আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় দুই দেশে উপস্থিত ব্যক্তিরা বার বার করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

এ ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক‘ বলে অভিহিত করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ঐতিহাসিক এ ঘটনায় আজ আমাদের মধ্যে এমন এক গেটওয়ে খুলছে, যা আমাদের আরো সামনে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ডিজিটাল বিশ্বের এ গেটওয়ে খুলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষে দু’টি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও একজন মুখ্যমন্ত্রী মিলে কোনো কিছুর উদ্বোধন, দুনিয়ায় এমন মুহূর্ত কমই আসে।

এ ঘটনা বিশ্বে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে দুই দেশের যোগাযোগের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মোদি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইথ দেওয়ায় আমাদের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো নতুনভাবে ডিজিটাল বিশ্বে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ভারতের দু’টি ইন্টারনেট গেটওয়ের একটি পশ্চিমাঞ্চলে এবং অপরটি দক্ষিণাঞ্চলে থাকায় পূর্বাঞ্চলের তরুণ সমাজ ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশের সুযোগ লাভে বঞ্চিত হচ্ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সে সুযোগ করে দিয়েছে বলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রয়োজনে আরো অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহে ভারত প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান।

তিনি বলেন, আসাম, ত্রিপুরাসহ এ অঞ্চলের জন্য যে ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হয়েছে, তার ধারণক্ষমতা আমরা প্রথম থেকেই বেশি রেখেছি। আসছে দিনগুলোয় প্রয়োজন হলে আমরা আরো বেশি বিদ্যুৎ রফতানি করতে পারবো।

ঢাকা থেকে শেখ হাসিনা ও দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই ভারত-বাংলাদেশ ৪শ’ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনটিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়েছে।

এ লাইন দিয়ে ত্রিপুরার পালাটানা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হবে। বিদ্যুৎ আনতে বাংলাদেশ অংশে ২৭.৮ কিমি ও ভারতে অংশে ২৪ কিমি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। লাইনটি বাংলাদেশে কুমিল্লার কসবা দিয়ে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে গ্রিড লাইন‌টির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫২ কি‌লো‌মিটার।

তবে ত্রিপুরা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে গত ১৬ মার্চ থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি শুরু হলো বুধবার।

ভারত বাংলাদেশের পরবর্তী ক্ষেত্র হবে আন্তঃসংযোগের সম্প্রসারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বস্তুগত সংযোগই নয়, আমরা দু’দেশের মধ্যে ভার্চুয়াল সংযোগ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, চিন্তা-চেতনার সংযোগসহ সকল ধরনের সংযোগ স্থাপন করতে চাই।

আঞ্চলিক আন্তঃসংযোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক, রেল যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-গ্রিড এবং বিদ্যুৎ বিপণন খাতে সহযোগিতার জন্য আমরা বিবিআইএন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় কাজ শুরু করেছি। এর আওতায় ভুটান ও নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়নে যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রকল্প চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে।

এছাড়া যৌথ উদ্যোগে ভারতের সঙ্গে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ চলছে। খুব দ্রুত এ কাজগুলো সম্পন্ন হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

এ অঞ্চলে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে সবার যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন হাসিনা।

নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে আরও বলেন, বাংলাদেশ আর ভারত যুক্ত হয়েই চলেছে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনে বাড়ছে। এবার মহাশূন্যেও আমরা একসঙ্গে সামনে বাড়বো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে আমরা সহযোগিতা দেবো।

তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময়ই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছেন। আপনিও সে সঙ্কটকালীন সময়ে আকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। একটা সময় ছিল বাংলাদেশ দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত ছিল। আজ বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রান্তিকালে যেমন আমরা পাশাপাশি যেমন ছিলাম, এখনো আছি।

বিদ্যুৎ দেওয়ায় নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১২ সালে আমি যখন ত্রিপুরা সফরে যাই, সে সময় এ ব্যাপারে কথা হয়েছিল। আজ তা সফল হচ্ছে।

অন্যদিকে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল) সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে উল্লেখ করেন মোদি।

উদ্বোধনের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় উপস্থিত কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে আবারো কথা বলেন।

এ সময় মানিক সরকার ইন্টারনেট-‍ব্যান্ডউইথ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ইন্টারনেট ত্রিপুরার মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তার জন্যও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী আরো বেশি ব্যান্ডউইথ নিতে চাইলে বাংলাদেশ থেকে তা দেওয়া যাবে বলে মানিক সরকারকে আশ্বস্ত করেন।

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও ত্রিপুরা থেকে আরো বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান।

ভিডিও কনফারেন্সের সময় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম, মশিউর রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী ও গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক এবং বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top