সকল মেনু

দু’টি পত্রিকা অসাংবিধানিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র করছে

৫০.নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১মার্চ : ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এবং বাংলা দৈনিক প্রথম আলো এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দু’টি পত্রিকা অসাংবিধানিক সরকার আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’টি পত্রিকা গত ২০ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে লিখে আসছে। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে আমি ওই দু’টি পত্রিকা আর পড়ি না। সরকার প্রধান হওয়ার পর থেকে তো মোটেই পড়ি না। কারণ আমি জানি এরা সবসময় একটা ভাল কথা বললেও শেষ বেলায় গিয়ে খোঁচা দেয়। আর এই খোঁচা খেয়ে আমি হয়তো আমার আত্মবিশ্বাস হারাবো। তাই দরকারটা কী আমার পড়ার? কারণ আমি জানি, তারা আমার বিরুদ্ধে লিখবে। সেই পত্রিকা দু’টির একটি ডেইলি স্টার আরেকটি প্রথম আলো।

তিনি বলেন, এ পত্রিকা দু’টি এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। কোনোরকমে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের কপাল খুলবে, সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্রে কোনো কাজ হবে না। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের এই অগ্রগতি রুখতে পারবে না।

সোমবার রাতে দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সমাপনী ও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির ভাষণকে সমর্থন করেন। সন্ধ্যা ৭টা ৫৬ মিনিটে তার বক্তৃতা শুরু হয়, শেষ হয় রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে। প্রায় একঘণ্টা আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাঙালি, কথা বলতে খুব পছন্দ করি। ১৯৯৬ সালে একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল। আমি এসে বেসরকারিখাত উন্মুক্ত করে দিলাম। আজকে ৩২টি টেলিভিশন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেগুলো চালু আছে সেখানে টকশো চলে, টক-ঝাল-মিষ্টি কথা। সেই কথাগুলো বলতে বলতে টক হয়ে যায়। সমানে কথা বলে যাচ্ছে। তারপরও বলবে কথা বলার স্বাধীনতা নেই। স্বাধীনতাই যদি না থাকে তাহলে তারা এতো কথা বলে কীভাবে? কীভাবে এতো কথা আসে? কাউকে তো কথা বলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তারা তো ইচ্ছেমতো আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্য দিয়ে-মিথ্যা দিয়ে যেভাবেই হোক কথা বলেই যাচ্ছেন। যারা বলছেন তারা হয়তো পরে নিজেরাও শোনেন না। তারা কী বললেন বা বলার মধ্যে কতোটুকু সত্যতা আছে? সেটা তারা নিজেরাও উপলব্ধি করেন কিনা আমরা জানি না?

সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সুযোগটা কিন্তু আমরাই করে দিয়েছি। হ্যাঁ বলেন, যা বলার বলে যান, মনের যতো তাপ-উত্তাপ বের করেন। কারণ আমরা গণমাধ্যমে কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণ করি না।

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য কখনও চাপা থাকে না। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে একজন সম্পাদক গেছেন। সেখানে আলোচনা করতে করতে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন, আমাকে  নিয়ে যা লেখা হয়েছে তা নাকি ডিজিএফআই’র কাছ থেকে নিয়ে লেখা হয়েছে। ওই পত্রিকার ওপর লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা। ইংরেজি এবং বাংলা অর্থাৎ ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো। নামগুলো সুন্দর। ডেইলি স্টার তো আকাশের তারা। আর প্রথম আলো-আলো ফুটেই বের হয়। কিন্তু তাদের কাজ হল অন্ধকারের কাজ। অন্ধকারের কাজ কি ডিজিএফআই’র তথ্য ছাপানো? আমার প্রশ্ন এখানেই। এই যে লেখাগুলো ছাপানো হয়, সেখানে তো কোনো সূত্র লেখা নেই। মানুষ তথ্য পেলে তো একটি সূত্র লিখে দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলো। আমরা ভাবলাম, তারা বুঝি একটি নির্বাচন দেবে। তারপর দেখি ওমা তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় গেড়ে বসার ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের প্রথম আঘাতটা এলো আমার উপর। আমি তো বিরোধী দলে ছিলাম। আমি তো সরকারে ছিলাম না। তাহলে আমার ওপর প্রথম আঘাতটা কেন? গ্রেফতার আমাকেই প্রথম করা হল এবং একটির পর একটি মামলা দেওয়া হল। মামলা দেওয়া ও গ্রেফতারের আগে ওই দুই পত্রিকা সমানে আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেছে। অসত্য তথ্য লিখে গেছে। আর অসত্য তথ্যের জোগানদাতা কে? ডিজিএফআই। ডিজিএফআই এর কারা ওই দুই অফিসার? একজন ব্রিগেডিয়ার আমীন এবং আরেকজন ব্রিগেডিয়ার বারী। তাদের অত্যাচারে এদেশের শিক্ষক-ছাত্র-ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে কেউ রেহাই পায়নি। প্রত্যেকের ওপর এরা অত্যাচার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, তাদের সাথে কী এমন সখ্য ওই সম্পাদকের ছিল? আমি মাহফুজ আনামকে প্রশ্ন করছি। সে কি এটার উত্তর দিতে পারবে? বা প্রথম আলোর মতিউর রহমান উত্তর দিতে পারবে? এতো সখ্য কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হয় এরা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল তাদের সঙ্গে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়ন করার জন্য। অথবা নির্ভীক সাংবাদিকতা না করে  ডিজিএফআই’র এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। অথবা এজেন্ট হিসেবে ডিজিএফআই’র প্যারোলে ছিল। হয় তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে করেছে। অবশ্য এরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকে তাহলে অসত্য তথ্য তারা ছাপাবে কেন? আর যাদের দ্বারা সবাই অত্যাচারিত তাদের দ্বারা এই দুজন সম্পাদক লালিত-পালিত। এরা ব্রিগেডিয়ার আমীন ও বারীর কাছে চোখের তারা। তাদের স্টার হয়ে গিয়েছিল তারা। এটাই ছিল বাস্তবতা। তারা তাদের চোখের আলো হয়ে গিয়েছিল।

পত্রিকা দু’টির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের চেষ্টাই হল সবসময় বাংলাদেশে একটি অস্বাভাবিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করা। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশে যেন অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসে। কারণ অসাংবিধানিক পন্থায় দেশ চললে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের দম ফুটে না।

পত্রিকা দু’টির সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি করার যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে নিজেরা দল গঠন করে রাস্তায় নামুক। মুত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে আমরা রাজনীতি করেছি। সর্বদা জীবনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থেকেছি। রাজনীতি করা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার যদি এতোই শখ থাকে, তাহলে মানুষের ভোট নিয়ে আসেন। ভোটে বিশ্বাস না করে ডিজিএফআই’র সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসার এই স্বপ্নের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। যিনি দল করার ঘোষণা দিলেন। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ডাবল এ প্লাস দিলেন। ব্যাংকের একটি এমডি পদ হারাবার ক্ষোভ পড়লো আমাদের পদ্মাসেতুর ওপর। আমেরিকান বন্ধুদের বলে টাকা বন্ধ করে দিলেন, ওই ব্যাংকের এমডি পদ হারানোর অজুহাতে। আর বললো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। একটি এমডি পদ হারানোর ক্ষেভের আগুনে জ্বললো আমার বাংলাদেশ। যে সেতু হলে গোটা দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের অথনৈতিক উন্নতি হতো। তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললো একটি এমডি পদের জন্য? তাহলে এতো বড় আর্ন্তজাতিক খেতাবের মূল্য কি আছে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যিনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে এক এমডি পদ ছাড়তে পারেন না। তাহলে ওখানে মুখটা কোথায়? আর তাকে নিয়ে ১/১১ তে দল করার চেষ্টা, সেখানেও ব্যর্থ। কারণ জনগণ সেটা গ্রহণ করেননি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেকেরই ধারণা ছিল, বিশ্বব্যাংকের কাছে সাহায্য না নিলে বুঝি বাংলাদেশ চলতেই পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশে যে পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। এরা এখনও ভাবে বোধ হয় কোনোমতে যদি একটু গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করা যায় আর অগণতান্ত্রিক পন্থায় কিছু আসে তাহলে তাদের কপালটা খুলবে। আমরা বেঁচে থাকতে তা হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ সচেতন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

যে যতোই ষড়যন্ত্র করুক। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। এই বিশ্বাস আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। পাকিস্তানি শক্তিশালী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যদি দেশ স্বাধীন করতে পারি, তাহলে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে কেন বিজয়ী হবো না।
হটনিউজ২৪বিডি..কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top