সকল মেনু

ঢাবিতে প্রথম কালো পতাকা তোলেন সুলতান

২.নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২১ ফেব্রুয়ারি : ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান।  ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কালো পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্র তিনি।

মাতৃভাষার দাবিকে স্তব্ধ করার জন্য তৎকালীন সরকার যে নির্মম নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছিল, তারই অংশ হিসেবে বিনা বিচারে মোহাম্মদ সুলতানকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর যে ১১ জন সংগ্রামী  ছাত্র নেতা ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে বসে রাত ১ টায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

দেশপ্রেম আর মাতৃভাষার টানে দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাঝগ্রাম এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ শমসের আলী ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার।

মোহাম্মদ সুলতান ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৬ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

মোহাম্মদ সুলতান কৈশোরেই ‘ভারত ছাড়’ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯৪৬ সালে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে রাজশাহীতে ভাষা ও ছাত্র আন্দোলনে মোহাম্মদ সুলতান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৫১ সালে তিনি যুবলীগে যোগ দেন এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। জীবনের কিছুটা সময় শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা করে কাটিয়েছেন। শেষ জীবনে তিনি প্রকাশনার কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের পর তিনি এমআর আক্তার মুকুলের অংশীদারিত্বে পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র ‘পুথি পত্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশ করেন। এ প্রকাশনার জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল।

১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ৩নং ওয়ার্ডের করিডোরে মৃত্যু বরণ করেন। বাংলাদেশ সরকার তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা ধানমন্ডিতে তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করেছে।

অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী এ ভাষা সৈনিককে ২০১১ সালে মৃত্যুর ২৮ বছর পর পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরণোত্তর একটি সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের মেয়ে ডা. চন্দনা সুলতানার হাতে এ সম্মাননা স্মারকটি তুলে দেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের একান্ত প্রচেষ্টায় তার নামে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা সদরের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। সেই সময় ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের  একটি ম্যুরাল তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১২ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর পঞ্চগড়ে ভাষা সৈনিক সুলতান বই মেলার আয়োজন করছে। যা এ বছরও একুশে ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলা শহরের সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে শুরু হবে।

ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের ভাতিজা স্কুল শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান রুবেল  বলেন, ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানকে এ প্রজন্মের মানুষের কাছে পরিচিত করতে একটি ম্যুরাল তৈরি করার দাবি রাখছি। তার বীরত্বের ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করলে জাতি ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের কথা জানতে পারবে।

তিনি বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই বারবার কারাভোগ করে মাতৃভাষাসহ দেশের গণতান্ত্রিক  সব আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিলেও তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে এখনো অজানাই রয়ে গেছেন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ভাষা আন্দোলনে মোহাম্মদ সুলতানের অবদানের কথা বিবেচনা করে তাকে একুশে পদকের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া উচিত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর থেকে তার নামে বই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়াও ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের একটি ম্যুরাল তৈরির পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের রয়েছে।

হটনিউজ২৪বিডি.কম/ এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top