সকল মেনু

পাকা কথা বাঁকা দেহের

gfdhবিনোদন ডেস্ক: ‘ফ্যাট ইজ নট সেক্সি’ বলে এক সময়  ঝড় তুলেছিলেন করিনা কপূর। তাঁর সাইজ জিরোর নেশায় আমাদের চারিদিকে তখন শীর্ণকায়, ক্ষীণকটি, কালচে মুখের নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেওয়া সেক্সি বঙ্গললনায় ভরে গিয়েছিল। কিন্তু কাল হল বিদ্যা যখন ‘ডার্টি পিকচার’ করতে গিয়ে নিজেকে নতুন করে গড়লেন। তাঁর ভারিক্কি শরীরের ইমেজ মেয়েদের শরীরকে নতুন করে চিনতে শেখাল, ভাবতে শেখাল। শুরু সেখান থেকেই।
তার পর ইদানীংকালে করিনাও খানিক থিতু হলেন।

স্বামী সেফের আবদারেই নাকি জিরো থেকে নিজের শরীরের বিভিন্ন বডি কার্ভকে হাইলাইট করতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি। নাহ্ কেবলই কি করিনা? কল্কির মুখেও এক সুর। সারাজীবন ‘স্কিনি’ হয়ে থাকা কল্কি সম্প্রতি মিডিয়ায় জানালেন এবার হুমা কুরেশির মতো ‘হেলদি’ আর ‘ভলাপচুয়াস’ লাস্যে নিজেকে সাজাতে চান তিনি। কিন্তু কার্ভি বডি গড়ার এই হুজুগের মাঠে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন যিনি, তিনি সোনাক্ষী সিংহ। বলিউড যতই তাঁর ওজন, বয়সের চেয়ে ভারী চেহারা নিয়ে নাক সিঁটকাক না কেন, মেয়ে-পুরুষ নির্বিশেষে এখন সকলেই সোনাক্ষীর মোহে আচ্ছন্ন। তিনি তো জন্ম নিয়েছেন বাঁক-ঝোঁকের শরীর নিয়ে। তার চোখ থেকে চলন সবেতেই যেন শরীর কথা বলে ওঠে। ছবিতে যাই ঘটুক না কেন সৌন্দর্যের খোলা খাতায় এখন তিনিই ‘লুটেরা’। ‘লুটেরা’ ছবির নায়ক রণবীর সিংহ নিজেই স্বীকার করেছেন সোনাক্ষীর মধ্যে তিনি ‘নারী’-কে খুঁজে পান।

কার্ভি বডির রকমসকম
শরীরের বিভিন্ন কাঙ্ক্ষিত বাঁকগুলোকে হাইলাইট করাই কার্ভি বডির প্রধান কথা। বলা হয় কোনও নারীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় কার্ভ হল তার মুখের হাসি। শুধু হাসি থেকেই কত কাব্য, কত প্রেম অমরতা পেয়েছে। এর পরেই আসে বক্ষরেখা আর কোমরের গড়নের কথা। কার্ভি শরীরের জন্যে এই দুই অংশে পেশি আর মেদের একটা ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি। সোজা কথায় অল্প মেদের, উজ্জ্বল ত্বকের, স্বাস্থ্যবতী (মোটা নয়) টোনড, লাস্য ছড়ানো শরীরকেই কার্ভি লুকসের মধ্যে আনা হচ্ছে। এক কথায় যাঁর নাম সোনাক্ষী সিংহ।

কেমন করে কার্ভি বডি
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়ের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনিও জানান, তার ক্লায়েন্টের মধ্যে অধিকাংশই এখন কার্ভি শরীর তৈরির জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন। তিনি কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম আর খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়েই কার্ভি হওয়ার পথ বাতলে দিলেন।

ব্যায়ামে তৈরি শরীরী বাঁক
চিন্ময়ের মতে, কার্ভি বডির জন্যে সবচেয়ে আগে দরকার ওয়েট ট্রেনিং। অনেকক্ষণ ধরে ট্রেডমিল করে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করলে কেবল কার্ভি বডি তৈরির বাসনায় জল ঢালা ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাই বিশেষজ্ঞের সাহায্যে ‘রেজিস্টেন্স টিউব’ এবং নানান ওজনের ‘ডাম্বল’ তোলা, ওয়েট ট্রেনিঙের মতো অনুশীলন নিয়মিত করে যেতে হবে। একদিন শরীরের ঊর্ধ্ব ভাগ নিয়ে ওয়ার্ক আউট করলে অন্য দিন নীচের অংশ নিয়ে ওয়ার্ক আউট করতে হবে। এই ভারসাম্যাটাও জরুরি। নয়তো রোগা পায়ের ওপর ভারী কোমরের বাঁক কিন্তু একদম বেমানান হয়ে যাবে। ফল উল্টো হয়ে অতিরিক্ত ওয়েট ট্রেনিংয়ের ফলে শরীরের কোনও অংশে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বক্ষ উপত্যকা সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও পেটের মাঝের অংশের অতিরিক্ত মেদের জন্যে কার্ভটাকে বের করে আনা যায় না। এই কারণেই ‘কিক বক্সিং’ এক্সারসাইজ করানো হয় যা পেটের মাঝ অংশের মেদ ঝরানোর জন্যে খুব উপকারী। এরই সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে পেটের ভিতরের পেশিকে জোরদার করার জন্যে ‘কোর স্টেবিলিটি’ এক্সারসাইজ দেওয়া হয়। এই সব ব্যায়ামই শিখে নিতে হবে ফিটনেস বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে।

খাওয়াদাওয়ার বাছবিচার
জিরো ফিগারে সব খাওয়া বন্ধের জোরদার হুকুম কার্ভি শরীরের ক্ষেত্রে অনেকটাই লাঘব হয়েছে। চিন্ময় রায় জানালেন, কার্ভি শরীর গড়তে সবচেয়ে জরুরি হল রিচ প্রোটিন ডায়েট। কার্বোহাইড্রেট চলতে পারে কিন্তু সেটা রুটির মধ্যেই সীমিত থাকবে।

ডালিয়া, ওটস্, কর্ন, সবুজ শাকসব্জি চলবে। মুর্গির মাংস স্যুপ করে বা গ্রিল করে খাওয়া যেতে পারে।
চিন্ময় বললেন, “আরেকটা বিষয়ও মনে রাখতে হবে। ওয়ার্ক আউট করার ঠিক পনেরো মিনিট পরে একটা প্রোটিন ডায়েট খেতে হবে। কারণ ওয়েট ট্রেনিঙের পর পেশিকে টোনড করার জন্যে, সঞ্চালনের খাতিরে প্রোটিনের দরকার হয়। এই সময় মেয়েদের ক্ষেত্রে দু’টো থেকে তিনটে ডিমের সাদা অংশ খেতে বলা হয়। যাঁরা নিরামিষ খেতে পছন্দ করেন তাঁরা এক বাটি ছোলা সেদ্ধ বা দুধের সঙ্গে ওটস্ দিয়ে খেতে পারেন। প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের চর্চা চালু হলেও স্বাভাবিক প্রকৃতিজাত খাওয়াদাওয়াই শরীরে কার্ভ আনতে বেশি কার্যকর।”

খাওয়া চলবে না
রেডমিট, আইসক্রিম, জাঙ্ক ফুড, স্যাটুরেটেড ফ্যাট, টক্সিন জাতীয় খাবার যা ফ্যাট ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কার্ভি বডি ও ওয়েট ট্রেনিং নিয়ে ভুল ধারণা
ওজন তুললেই মাসল চলে আসবে, অতিরিক্ত ট্রেডমিল করলেই ওজন কমবে, বডি কার্ভ শার্প হবে। স্পট রিডাকশন দিয়ে বডি কার্ভ হাইলাইট করা যাবে। এ সব ধারণা ভুল।

কার্ভি শরীরের সাজগোজ
রেট্রো লুক, গোল টিপ লম্বা চুলের শরীরে জড়ানো শাড়ি সোহাগের সময় এখন। মা দুগ্গার মতো টানা চোখ, ভরা গাল, মেঘকালো চুলে, পিঠখোলা ব্লাউজের চকিত শিহরন, উন্নত বক্ষ বিভাজিকার রূপকথা তৈরিই কার্ভি সাজের আসল মজা। বাদ নেই অনামী অঙ্গনারাও। আবার নতুন করে তাঁরা ওয়ার্ক আউটের ধরন বদলাচ্ছেন। ঢলোঢলো শরীরে সাজের বৈচিত্র্যও যে অনেক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top