সকল মেনু

বাজেট ভাবনা

DSC00328এম এস ইসলাম (লেখক, অর্থনীতিবিদ): সাধারনত বাজেট বলতে কোন নির্দিষ্ট ভবিষ্যত সময়ের জন্য পরিকল্পিত আয়-ব্যায়ের হিসাবকে বুঝায়। এটি একক ব্যাক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য। সরকারের ক্ষেত্রে এটি আগামী এক বছরের আয়-ব্যায়সহ বিশদ আর্থিক বিবরণি।

ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আগামী ২০১৩-১৪ সনের জন্য ২,২২,৪৯১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেছেন যা এদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ। ঋণ নির্ভর এই ঘাটতি বাজেট আর্থিক প্রতিষ্টানসমূহের সার্বিক ঋণ প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে, ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা ক্ষাতের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। ইতোমধ্যে সর্বস্তরের সাধারন মানুষ অনাকাংখিত রাজনৈতিক ও ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক পরিবেশে নানাভাবে আর্থিক চাপে হাবুডুবু খাচ্চেন। অনেকের নুন আনতে পান্তা শেষ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। সবচেয়ে বিপাকে আছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এমন মন্দা পরিবেশে বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন আমজনতা বিশেষ করে মধ্যবিত্তকে আরো অস্বস্তিতে ফেলতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত সুপ্ত করের বোঝার কারনে।

উক্ত বাজেটে আগামী অর্থ বছরের জন্য ৭.২% প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে তা বর্তমান বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যা খুব বেশী হলে ৫-৬% হতে পারে। পক্ষান্তরে মূল্যস্ফিতির যে প্রাক্কলন ৭% নির্ধারন করা হয়েছে তা গত অর্থ বছরের ন্যায় আবারো সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কালো টাকা এর একটি বড় নিয়ামক হতে পারে।

বাজেটে আবারো কালো টাকাকে ঢালাওভাবে সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা দুর্নীতির প্রতি সরকারের মাখামাখিকেই পোক্ত করতে পারে। এহেন কাজকে কেউ কেউ অসাংবিধানিক ও নীতিবহির্ভুতও বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্যসহ দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার সাথে তুলনা করেছেন।

এদেশের ৪৩% মানুষ এখনো অশিক্ষিত, এহেন পরিস্থিতিতে শিক্ষা খাতে প্রতিরক্ষা খাত থেকে কম বরাদ্দের প্রস্তাব করার বিষয়টিও বাস্তবসম্মত হয়নি। পদ্মা সেতু নিঃসন্দেহে এদেশের মানুষের জন্য বহুকাঙ্খিত ও প্রয়োজনীয়, আর মোট বাজেট বরাদ্দের ৩.০১% প্রস্তাব করা হয়েছে এ সেতুর জন্য। কিন্তু এর বাস্তবায়নের জন্য যে স্বক্ষমতা ও উপাদান প্রয়োজন তা কি আমাদের আছে? নিঃসন্দেহে আছে বলার সুযোগ নেই। কাজেই নিজস্ব অর্থায়নে এর বাস্তবায়ন অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের এই মেগাবাজেট মনমাতানো, উচ্চভিলাশী যা প্রকারান্তরে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন এবং অনেকেই তা বিশ্বাসও করেন। তবে বাংলাদেশের মত একটি ক্রমবর্ধমান উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে উচ্চভিলাশী হওয়াতে দোষের কিছুই নেই যদি তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সৎ, নিষ্টাবান ও যোগ্য মানবসম্পদ হাতে থাকে। কিন্তু আফসোস, দূর্ভাগ্য এ জাতির। স্বাধীনতাউত্তর চোরের খনি আজ ডাকাত-ছিনতাইকারির স্বর্গে পরিনিত হয়েছে। তাইতো বার বার খোদ বাজেটেই ঘুরে আসে কালো টাকা।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নহে

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top