সকল মেনু

এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না

 indexসাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার কখনো কাজ করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার। শেষ কয়েক সাক্ষাতে ভীষণ নির্জীব ছিলেন তিনি। কারণ একটাই, হতাশা। একজন কর্মচঞ্চল মানুষ যখন প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছায় নিরবে মাথা নিচু করে বেড়িয়ে যান এবং অন্যরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন না, মূলত তখনই তার মৃত্যু হয়। সর্বশেষ তিনি কালের কণ্ঠে’র ডেপুটি এডিটর ছিলেন।

আমরা সাংবাদিক হিসেবে বাইরের সমাজের মানুষের কাছে গর্ব করি। কিন্তু মাঝে মধ্যে আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা আমার আমিকে ধিক্কার দেই। কারণ একটাই, হতাশা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে যন্ত্রণাতাড়িত হই।

আমরা সমাজের ও জনগণের বিবেক বলে পরিচিতি পেলেও আমাদের বেশিরভাগ কর্মস্থলের মালিকপক্ষের কোন বিবেক আছে বলে মনে হয় না। পৃথিবীর প্রায় সব পেশার লোক-ই চাকরি জীবন শেষ করার পর, চাকরিচ্যুত হওয়ার পর অথবা কর্মস্থল বদল করার পর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। অথচ বলতে লজ্জা নেই আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন থাকার পরেও, একজন সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হওয়ার পর, বছরের পর বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, কেউ তার খোঁজ নেয় না। তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলা প্রতিষ্ঠান থেক ন্যয্য পাওনা আদায়ে মামলা করেও কোন লাভ হয় না। এক্ষেত্রে আমাদের ট্রেড ইউনিয়নও কোন ভূমিকা রাখে না। রাখবেই বা কি করে? তারা নিজেরাইতো দলাদলিতে ব্যস্ত। সাংবাদিক পরিচয়ের বাইরে তারা এখন দলীয় ক্যাডার।

এক যুগেরও ওপরে এ মহান পেশায় যুক্ত আছি, অথচ বলতে দ্বিধা নেই যে-এমন একজনকে দেখি নাই যিনি কর্মস্থল পরিবর্তনের পর সাবেক কর্মস্থল থেকে তার ন্যয্য পাওনা বুঝে পেয়েছেন। অনেককেই দেখেছি লেবার কোর্টের বারান্দায় ঘুরে জুতারতলা ক্ষয় করতে। আমিও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার রক্তঘাম করা অনেক টাকা পাই। সে কথা আর নাই বা বললাম।

একজন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ফারুক গত শনিবার রাতে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাকের চাপায় মারা গেলেন। আমরা রোববার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করলাম, বড় বড় কথা বললাম। অথচ এই আমাদের অনেকেই আব্দুল্লাহ আল ফারুক যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন কেউ জানতে চাইনি কেমন আছেন?।

ট্রেড ইউনিয়ন থাকার পরেও তার চাকরিচ্যুতির পরে ইউনিয়ন থেকে কোন উদ্যােগ নেয়া হয়িছিল কি? প্রতিদিন কত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হচ্ছেন এদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন কি ভূমিকা নিচ্ছে? কতটুকু নেয়া উচিত? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে অনেক পানি গড়িয়ে যাবে। তাই সময় এসেছে দিনবদলের। আমাদেরই ঠিক করতে হবে-কেমন ট্রেড ইউনিয়ন চাই?

পেশাগত ক্ষেত্রে যদি নিশ্চয়তা নিরাপত্তাই না থাকে তাহলে নতুন ছেলে-মেয়ে এ পেশায় আসবে কেন? এ প্রশ্নের জবাব হয়তো কখনো পাবো না। ফারুক ভাই তার পাওনা বুঝে পেয়েছিলেন কিনা তাও আমার জানা নেই, জানতেও চাই না। শুধু একটা কথা বলতে চাই। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।

জোবায়ের আহমেদ নবীন, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, দৈনিক মানবকণ্ঠ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top