সকল মেনু

রেলভবন এখন জামাই-শ্বশুরের নিয়ন্ত্রণে

raill নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম : শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। সেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন ও তার মেয়ের জামাই পরিচালক, প্রকিউরমেন্ট মো. মামুনুল ইসলাম একের পর এক দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। এই দুই জামাই-শ্বশুরের দখলে পুরো রেলভবন। তাদের কথা ছাড়া টেন্ডার পর্যন্ত হয় না রেল ভবনে। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, রেলওয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কম্বাইন্ড সিনিয়রিটি ৬০-৭০ জনকে বাদ দিয়ে পরিচালক আমজাদ হোসেন তার জামাই মামুনুল ইসলামকে প্রমোশন দিয়ে পরিচালক, প্রকিউরমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দিয়েছেন। যা রেলওয়ের ইতিহাসে সব বিরল। রেলওয়ের সমস্ত টেন্ডার, মালমাল ক্রয় হয় পরিচালক আমজাদ হোসেনের জামাই মো. মামুনুল ইসলামের দপ্তর থেকে।
আরও জানা গেছে, মামুনুল ইসলাম চাকরিতে যোগদানের সময় পিএসসি আবেদনের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সনদ হিসেবে কোন সার্টিফিকেট দাখিল করেননি। মৌখিক বা ভাইভা পরীক্ষার সময় মুক্তিযুদ্ধের সনদ জমা দিয়েছেন।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে মামুনুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। মেয়ের জামাই বলে আমজাদ হোসেন তাও ধামা-চাপা দিয়েছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল কাজকর্ম, কেনাকাটা, টেন্ডার চূড়ান্ত করাসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ডিজি আমজাদ তার মেয়ের জামাই মামুনুল ইসলাম, এডিজিআই কাজী মো. রকিবুল আলম এবং এসকে চৌধুরী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব বিষয়ে অন্য কোন কর্মকর্তাকে মূল্যায়ন করেন না এবং তাদের কোন মতামতও নেয়া হয় না। ডিজি আমজাদ হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত জুনিয়র কর্মকর্তা মামুনুল ইসলামকে বিভিন্ন দেশে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছেন। এমনকি তাকে দেশের ভেতরে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে পাঠান ডিজি। এ সুযোগ ডিজি আমজাদের মেয়ের জামাই হিসাবেই পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তা।
তাদের দাবি সিনিয়র অনেক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে মামুনুল ইসলামকে পদোন্নতি দিয়ে প্রকিউরমেন্ট পদে পদায়ন করেন ডিজি। যা সম্মিলিত মেধাতালিকা পরীক্ষা করলে বের হয়ে আসবে। মামুনুল ইসলাম উন্নতমানের দামি গাড়িও ব্যবহার করেন। যা অনেক সিনিয়র কর্মকর্তারা পান না। গত ৩-৪ মাস আগে রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রেলভবনের ২য় তলায় কনফারেন্স রুমে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কাটিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়। ওই সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সময় মন্ত্রী সবাইকে অবহিত করে বলেন, মামুনুল ইসলাম রেল এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ সময় মন্ত্রী পত্রিকায় বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, মামুনুল ইসলাম জামায়াতের একনিষ্ঠ কর্মী এবং তিনি রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। সভায় তিনি মামুনুল ইসলামকে রেলভবন থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বদলি করার তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। এ সভায় রেল সচিব, মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অতিরিক্ত সচিবসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও মামুনুল ইসলামের বিষয়ে ডিজি আমজাদ হোসেন কোনো ব্যবস্থা নেননি।
জানা গেছে, রেলওয়েতে যত নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি, পদায়ন বা পোস্টিং হয় সব কার্যক্রমই মামুনুল ইসলাম ও তার শ্বাশুড়ি (ডিজির স্ত্রী) এবং তার শ্যালক সিরাজগঞ্জের ঠিকাদার বদরুল ইসলামকে করেন। খালাসি, ওয়েম্যান, গার্ড-২সহ আরও অনেক নিয়োগের ক্ষেত্রে জিএম পূর্বাঞ্চলকে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। রেলমন্ত্রী সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মন্ত্রীর দপ্তরে কোনো আলোচনা না করে বা অবহিত না করে পশ্চিমাঞ্চলের জিএমকে দিয়ে অতি গোপনে গত ৩ আগস্ট গার্ড-২ পদে ৭৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। আরও অনেক নিয়োগ কার্যক্রম পশ্চিমাঞ্চলে চলছে। যা একইভাবে করা হবে বলে জানা গেছে।
রেলওয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা একই পদে ৩ বছরের অধিক সময় কর্মরত থাকলেও তাদের পদোন্নতি দিচ্ছেন না ডিজি। যা ডিজি তার স্বার্থের জন্য বহাল রেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন এডিজি আরএস খলিলুর রহমান এবং টঙ্গী ভৈরব ডাবল লাইন প্রজেক্টের জিএম এসকে চৌধুরী।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার জন্য পূর্বাঞ্চলের জিএমকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম স্বপদে এখনও বহাল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিজি আমজাদ হোসেন এবং মন্ত্রীর পিএস এসএম কিবরিয়ার যোগসাজসে মন্ত্রীকে আড়ালে রেখে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার, মালামাল ক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ডিজি আমজাদ হোসেনকে (০১৭১১৫০৫৩৮৩) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top