বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, জামাত-শিবির-হেফাজতের আক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এখনো দেখা যায় নি। ছাত্র সংগঠনগুলো যদি নিজেদের ভিতরকার মতবিরোধ সত্বেও গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে এক কাতারে দাঁড়াতে পারে, তাহলে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না? গণজাগরণ মঞ্চ বিপুল তরুণ প্রাণের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সত্য, কিন্তু এবারের প্রতিরোধ যুদ্ধটি ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদেরই করতে হবে।
শহীদ জামিল আকতার রতনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র শহীদ মুনীর চৌধুরী সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমরেড রাশেদ খান মেনন এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টি পলিটব্যুরো সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা নুর আহমদ বকুল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, ছাত্র মৈত্রীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল আমিন মাহাদী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক উন্মেষ রায়। সভা পরিচালনা করেন ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তানভীর রুসমত।
আলোচনা সভায় রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, আমাদের দেশের সামরিক শাসকরা ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করার পথই শুধু উন্মুক্ত করে দেয় নি, সাথে সাথে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তিকে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিতও করেছে। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোও কে কত বেশিভাবে সাম্প্রদায়িকতার সাথে আপোস করতে পারে, তার প্রতিযোগিতা চালিয়েছে। বামপন্থীদের ভিতরেও এই প্রবণতা দেখা যায়। ধর্ম মানুষের জীবনে আবেগের প্রশ্নÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বাঙালি জাতি ব্যবহারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের প্রশ্নে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ভুল করে নি। তারা ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনার প্রবণতার বিরুদ্ধেই সবসময় রায় দিয়েছে। ফলে রাজনীতির শীর্ষ স্থানে ধর্মকে স্থান দেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হবে। চল্লিশ বছরে গঙ্গা-পদ্মার জল অনেক গড়িয়েছেÑ এই জাতীয় বাস্তবতার দোহাই দিয়ে সত্যকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
মেনন বলেন, আমরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগÑ ঊভয় পক্ষকেই দুষছি। কিন্তু মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেরাও শক্তি সঞ্চয় করতে পারি নি। এবারের সংগ্রামে তিনটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে হবেÑ প্রথমত শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র আন্দোলনের শক্তি সঞ্চয় করে প্রতিরোধ যুদ্ধ সংগঠিত করতে হবে, দ্বিতীয়ত ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনার প্রবণতার সাথে সকল প্রকার আপোসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং তৃতীয়ত কৌশলের প্রশ্নে সমদূরত্বের নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান গ্রহণ না করে ছাত্র আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধেই জামাত-শিবিরকে প্রতিহত করতে হবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি শহীদ জামিল আকতার রতনকে ১৯৮৮ সালের ৩১ মে জামাত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের প্রণীত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করার কারণে শহীদ জামিল ঘাতক জামাত-শিবিরের টার্গেটে পরিণত হন। তখন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলো এই দিনটিকে ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।