সকল মেনু

মির্জারচরে উন্নয়নের ছোঁয়া, মানুষের জীবন এখন আলোকিত

Narsingdi1438838472

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১০ আগস্ট : নরসিংদীর একটি ইউনিয়নের নাম মির্জারচর। মেঘনা নদী বেষ্টিত। প্রকৃতির গড়া এ চরকে ঘিরে আছে আবহমান কালের নদ-নদীর উপাখ্যান। বর্ষায় নৌকা, শুকনায় হাঁটা- এ হলো এখানের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষের জীবনধারা। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ টি ইউনিয়নের যোগাযোগে এখনো নৌকাই একমাত্র ভরসা। মির্জারচর পশ্চিমপাড়া, মধ্যপাড়া, উত্তরপাড়া, বিরামপাড়া, পূর্ব পাড়া, ফিরোজপুর, তাত্তাপাড়া, লক্ষীপুর ও শান্তিপুর এই ৯টি গ্রাম নিয়ে মির্জাচর ইউনিয়ন। আয়তন ১০.৭০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার । বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত চরের এই মানুষগুলোর লড়াই নিত্যদিনের। বলতে গেলে তাদের জন্য বছরের প্রতিটি দিনই যুদ্ধের। অশিক্ষা-কুসংস্কারসহ বিভিন্ন সমস্যাকে মোকাবিলা করে মির্জারচর এখন আলোকিত ধারায় এগিয়ে গেছে অনেকদূর। এ ইউনিয়নটিতে সৌর বিদ্যুতের আলোয় রাতের অন্ধকার দূর করেছেন মানুষ। কেরোসিনের কুপি আর হারিকেনের বদলে সেখানে ঘরে ঘরে এখন জ্বলছে সোলার বাতি। মেঘনা পাড়ের চরাঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে সোলার বাতি। আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত মেঘনা পাড়ের মির্জারচরের মানুষ এখন শহরের সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। সোলার শুধু অন্ধকার নয়, শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নেও অবদান রাখছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় তো সোলার বাতি উপকারে আসছেই, অন্যদিকে সৌরশক্তির বদৌলতে গ্রামীণ জনজীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। চরের মানুষদের এখন আর ইন্টারনেট সুবিধার জন্য শহরে আসতে হচ্ছে না। ইন্টারনেট সুবিধা এখন ছড়িয়ে পড়েছে মির্জাচরেও। ইন্টারনেট সুবিধাসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে পাল্টে যাচ্ছে মির্জারচরের চেহারা। বর্তমানে এ ইউনিয়নে রয়েছে ৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২ টি মাদ্রাসা, একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল ও ২ টি বাজার। গত ৫ বছরে এই চরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সরকারিভাবে নয়, স্থানীয়রাই এ পরিবর্তন এনেছে। বিস্তীর্ণ চরে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার মানুষ। জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এই চরকে একসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘনার দ্বীপ বলা হতো। সে অন্ধকার এখন আর নেই। ইন্টারনেট সুবিধা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও উন্নতি ঘটেছে। বিদ্যুৎ প্লান্টে যান্ত্রিক সমস্যা, লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ বিড়ম্বনা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পাচ্ছে সৌর প্লান্টের মাধ্যমে। কোনো আবেদন, জামানত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই সহজ কিস্তিতে পাওয়া যাচ্ছে সোলার প্যানেল। সংযোগ দেওয়া, সার্ভিসিংসহ প্রয়োজনীয় সব সেবাই হাতের নাগালে। মির্জাচরের মেঘনার পাড়ে গড়ে উঠা হাট-বাজার, ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সোলার বাতি জ্বলছে। এমন কোনো বাড়ি বা দোকান নেই যে সোলার প্যানেল লাগানো হয়নি। গ্রামীণশক্তি কোম্পানির মির্জারচর শাখা কার্যালয়ের ম্যানেজার আখলাছুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে মির্জারচরে আমাদের গ্রাহক রয়েছে ৩ হাজার ২০৬ জন।’ তিনি জানান, ‘৮৫ ওয়াটের একটি প্যানেলে একটি রঙ্গীন টিভি, ৮-১০টি লাইট ও একটি ফ্যান চলে। ৫০ হাজার টাকার ৮৫ ওয়াটের প্যানেলে ২০ বছর আলো সরবরাহ নিশ্চিত। মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক বলেন, ‘গত কয়েক বছরে মির্জারচরে ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জেলা ও উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এ চরে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু সোলার প্যানেল চরের মানুষের দীর্ঘদিনের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে।’
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top