সকল মেনু

খরিপ-২ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের সেচ পাচ্ছে ৬০ হাজার হেক্টর জমি

mail.google.comমো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ০৭ আগষ্ট: চলতি আমন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষককুল যখন আমন আবাদে হা-হুতাশ করছিল তখন দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প কৃষক কুলের মাঝে আর্শিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে  তিস্তা অববাহিকা সহ কমান্ড এলাকা  আমন ধান আবাদে ( তিস্তা ব্যারাজের খরিপ-২ মৌসুমে)  সুফলভোগ করছে কৃষককুল।  এতে চলতি আমন মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প কৃষককুলের মাঝে আর্শিবাদে পরিনত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপন করতে পারছিলনা সেখানে তারা আমন রোপন সহ আমন ক্ষেতে পর্যাপ্ত সেচ পাচ্ছে।
সুত্র মতে খরিপ -১ মৌসুমে (বোরো) নদীতে পানির অভাবে কৃষকরা সেচ পেয়েছি ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেখানে খারিপ-২ মৌসুমে কৃষকরা সেচ পাচ্ছে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকরা বলছে,  তিস্তা নদীর পানি চ্যুক্তি হলে শুস্ক মৌসুমেও বর্ষা মৌসুমের ন্যায় পানি পেলে সেচ নিয়ে আর বাড়তি দুঃশ্চিন্তা থাকবেনা তাদের। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সুত্র জানায়, তিস্তা নদীতে এখন পানির অভাব নেই। অথৈই পানিরসস্রোত ধারায় তিস্তা এখন প্রবাহিত হচ্ছে। সংশিশ্লষ্টরা বলছেন, উজান থেকে পানি আসছে।  ব্যারাজ পয়েন্টে পানির উথাল ঢেউ। নদীর প্রবাহের সাথে সেচ প্রকল্পের ৭১০ কিলোমিটার জুড়ে  সকল সেচ ক্যানেল পানিতে টুইটুম্বুর।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পুবাভাস সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র জানায়,  তিস্তা অববাহিকায় বুধবার (৫ আগষ্ট) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৩ মিলিমিটার। এর আগে এপ্রিল মাসে ১৭৩ মিলিমিটার, মে মাসে ২৮৬ মিলিমিটার ,জুন মাসে ৪৪৭ মিলিমিটার ও জুলাই মাসে ২৬৬ মিলিমিটার। সুত্র মতে গেলো শুস্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল গড়ে ৫শ’  কিউসেক। চলতি বছরের জুন জুলাই মাসে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ ছিল গড়ে ৬০ হাজার কিউসেক। তবে  চলতি আগষ্ট মাসের এখন পর্যন্ত তিস্তায় পানি প্রবাহ চলছে গড়ে ৩০ হাজার কিউসেক। ফলে নদী এখন নদীতে পরিনত হয়ে দুর্বার গতিতে চলছে। এতে নদীর পানি সেচ প্রকল্পে অনায়াসে প্রবেশ ঘটিয়ে তা কৃষককুলের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে তিস্তার ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় কৃষকরা খরিপ-২ মৌসুমে ভরপুর পানি পেয়ে সুফল ভোগে আনন্দে আতœহারা হয়ে উঠেছে।
গত শুস্ক মৌসুমে সেচ নির্ভর বোরো আবাদে তিস্তা নদীতে পানি সংকটের কারনে খরিপ-১ মৌসুমে কৃষকরা রেশনিং সিষ্টেমে মাত্র ১৮ হাজার হেক্টরে সেচ সুবিধা পেয়েছিল। এবার খরিপ-২ মৌসুমে নদী থেকে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছেন ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে।
তিস্তা সেচ ক্যানেলের ধারে দুন্দিবাড়ি গ্রামের  কৃষক মোমেন আলী ( ৪৩) বলেন, অনাবৃষ্টি ও পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপন করা এবং রোপনকৃত জমিতে পানি না থাকায় ক্ষেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে  বোরো আবাদে তিস্তা সেচের পানি পেতে কষ্ট হয়েছিল। সেখানে এবার আমন মৌসুমে তিস্তা সেচ পেতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছেনা।
তিস্তা সেচখাল পানিতে ভরে গেছে। এখন সেচের পানি রাখার জায়গা নেই। সেচ খালগুলো ‘উছলি যায়ছে বাহে’। এই রকম পানি যদি বোরো আবাদের সময় পাওয়া যেতো তাহলে আরো ভাল হতো। সে সময় উজান থেকে কোন পানি আসেনা নদীতে। ফলে নদীও যায়  শুকিয়ে। ফলে সেচ খালে পাওয়া যায়না পানি। সেখানে খরিপ-২ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকার কৃষকরা সেচ সুবিধা পাওয়ায় পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবের হাত থেকে রক্ষা করছে। এই পানি পেয়ে কেউ কেউ আমনের চারা লাগাচ্ছে কেউবা চারা লাগানো ক্ষেতে ক্যানেল থেকে অনায়াসে সেচ দিচ্ছে। এতে ধানের ক্ষেতগুলো তরতাজা হয়ে ফুটে উঠেছে।
তিস্তার সেচে ফলন ভাল হয় বলে জানালেন রামনগর চান্দেরহাট এলাকার কৃষক আব্দুল হামিদ। তিস্তাপাড়ের ভাষানীর চরের নৌকা মাঝি হারুন (৪৮) বললেন নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। কিন্তু উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে এবার প্রচুর পানি পাওয়া যাচ্ছে। নদী এখন জোয়ার বৈইছে । চলছে নৌকা ।
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারন কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান মুলতঃ দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ  খরিপ- ২ মৌসুমের জন্য নির্মিত। অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাব দেখা দিলে কৃষকরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ পাবেন। যাতে আমন ধান তারা পরিপূর্ণভাবে আবাদ করতে পারেন। বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পড়েছে কৃষক। তাই এই মৌসুমে নীলফামারী,দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন,  খরিপ-১ মৌসুমে (বোরো) তিস্তা নদীতে পানি সংকটের কারনে কৃষকরা পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। ফলে মাত্র সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান সম্ভব হয়েছিল। খরিপ-২ মৌসুমে তিস্তার সেচ পাচ্ছে নীলফামারী জেলায় ২৩ হাজার ২৫৬ হেক্টর, রংপুর জেলায় ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর ও দিনাজপুর জেলায় ৯ হাজার ৩২০ হেক্টর।
রংপুর কৃষি বিভাগের আঞ্চলিক অফিস সুত্র মতে, এবার ৫ লাখ ৬১ হাজার ২৩৯  হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উত্তরবঙ্গের রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলা নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা,কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায়  রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে আমন রোপনের কাজ। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প, ৯৮ টি গভীর নলকুপ ও ১২ হাজার ২২৮ টি অগভীর নলকুপের সাহার্য্যে এই ৫ জেলায় আমন রোপন কাজ এগিয়ে চলছে। রোপনের কাজ প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার )৫ আগষ্ট) ভোর থেকে রংপুর অঞ্চল এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। যা আমন আবাদে উপকার বয়ে এনেছে। নীলফামারী খামারবাড়ি সুত্র মতে,  নীলফামারীতে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭ দশমিক ১৬ মিলিমিটার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top