সকল মেনু

হিরোশিমা দিবস আজ

1438803380

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৬ আগস্ট: আজ ৭০তম হিরোশিমা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। লিটল বয় নামের এই পারমাণবিক বোমা হামলায় কমপক্ষে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়। হিরোশিমায় হামলার ৩ দিন পর নাগাসাকিতে আরেকটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তবে জাপানের আসাহি শিমবুনের এক হিসাবে বলা হয়েছে, বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের কারণে দুই শহরে চার লাখের মতো মানুষ মারা যায়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের নির্দেশে হিরোশিমায় স্থানীয় সময় সকাল সোয়া আটটায় ফেলা হয় পরমাণু বোমা। তখনো ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি হিরোশিমার মানুষ। হঠাৎই দানবের মতো হিরোশিমার আকাশের নিলিমায় উদয় হলো মার্কিন বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান এনোলা গে। বিমান থেকে ফেলা বোমাটি প্রায় ৫শ মিটার উচুঁতে হিরোশিমায় বিস্ফোরিত হয়। ঘুমের মধ্যেই মারা যায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবা। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বেশিরভাগ দালান-কোঠা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহ্বানে জাপান সাড়া না দেয়ায় তার নির্দেশেই ঠাণ্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় এই হামলা। এর উদ্দেশ্য ছিলো দুইটি। জাপানিদের জব্দ করা আর জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে হামলার কিছুদিনের মধ্যে আত্মসমপর্ণ করে জাপান।
হামলার সাত দশক পার হয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা এখনো ভোলেনি জাপানের মানুষ। কারণ এখনো সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিরোশিমার ও নাগাসাকির মানুষ। আণবিক বোমা হামলার এতো বছর পরও শহর দুটোতে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু, ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে বহু মানুষ। কিইকো ওগুরা (৮০) দেখে ছিলেন সেই হামলার ভয়াবহতা। হিরোশিমায় বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ওগুরা বিবিসিকে বলেন, তার বাড়ি ছিলো হিরোশিমার উত্তর দিকে একটি ছোট্ট পাহাড়ের পাশে। হামলার দিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে সে বাড়ির সামনের রাস্তাটিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ঐ সময়ে আমার চারপাশ তীব্র আলো আর বিস্ফোরণে পরিবেষ্টিত হয়। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না, আমি অচেতন হয়ে পড়ি। যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমার মনে হলো রাত হয়ে গেছে, কারণ আমি চোখে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। কোনো সাড়া-শব্দও পাচ্ছিলাম না। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় কিইকো যা দেখেছিলেন তা উপলব্ধি করাও কঠিন। তিনি বলেন, অনেকের শরীরের চামড়া খসে ঝুলে ছিলো। তাদেরকে প্রথম দেখে আমার মনে হয়েছিলো কোনো কাপড় ধরনের কিছু ধরে আছে; কিন্তু না এটা তাদের শরীরের চামড়া ছিলো। তাদের অনেকের চুল পুড়ে গিয়েছিলো। শিজুকি আবের তখন বয়স ছিলো ১৮ বছর। হামলার সময় সে শহরের বাইরের দিকে যাচ্ছিলো। বোমার বিস্ফোরণে তার শরীরের ডান দিকের পুরোটাই পুড়ে গিয়েছিলো। চামড়া ঝুলছিলো। ৮৮ বছর বয়সে আবে এখনো বোমার ভয়াবহ ছাপ হাত ও মুখে বহন করে চলেছেন। তিনি বলেন, আগুন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছিলো। এটা দেখে আমরা অনেকেই নদীতে ঝাঁপ দেয়ার জন্য দৌড় দেই; কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেহাই পাইনি। সাহায্যের জন্য মানুষের আর্তনাদ তিনি এখনো ভুলতে পারেননি বলে জানান। দিবসটি পালনে দেশটির সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার জোরালো আহ্বান আসবে এসব কর্মসূচি থেকে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top