সকল মেনু

চাঁদপুরের তিন নদীর মোহনায় মানুষের ঢল অব্যাহত

DSC00077 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে শুরু করে শুক্রবার পর্যন্ত চাঁদপুরের চিরচেনা ছোট সমুদ্র সৈকত বলে খ্যাত তিন নদীর মোহনা ‘বড় স্টেশন মোলহেডে’ হাজারো পর্যটকের যেনো ঢল নেমেছিল। ঈদেও ছুটিতে বাড়িতে আসা  বিনোদন প্রিয় মানুষের যেন বাঁধভাঙ্গা জোয়ার বইছে ওই এলাকায়। বড় স্টেশন মোলহেডে পর্যটকদের এ জমজমাট আড্ডা আরো এক সপ্তাহ থাকবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞরা।
ঈদের ছুটিতে অনেকেই দীর্ঘ দিন পর এসেছেন গ্রামের বাড়িতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুপুরের পর থেকে তারা ছুটে আসে ছোট সমুদ্র সৈকত খ্যাত চাঁদপুর বড় স্টেশন তিন নদীর মোহনায়। যদিও এর পরতে পরতে রয়েছে ঝুঁকি আর বিড়ম্বনা। সকালের চেয়ে বিকেলে দিকে পর্যটকদের ভিড় বেশি হয়। বিকেলের আবহাওয়ায় অনেকেই পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধক নিয়ে ঘুরেফিরে আনন্দ করে। দিনের কান্তিময় লাল আভার সূর্যের অস্তমিত দৃশ্য দেখতেই এ স্থানে মানুষ ছুটে আসে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকাল থেকেই এ স্থানে হাজারো মানুষের ভিড় জমে উঠে। নারী-পুুরুষ-তরুণ-তরুণী-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা-শিশু-কিশোর সবাই ছুটে আসছে। মেঘনার পাড়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো রংবেরংয়ের সামিয়ানা দিয়ে সাজিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। মাঝিরা ডাকছে উচ্চস্বরে নদীতে ঘুরেন, চরে আসা-যাওয়া ত্রিশ টাকা, ঘণ্টা হিসেবে নদীতে ঘুরতে আসেন। চর বলতে তারা নদী পথে ৫ কিলোমিটার দূরের পদ্মা-মেঘনা মিলনস্থলের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নকে বুঝিয়ে থাকে। পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মনের আনন্দে নদীতে ভেসে চরে ঘুরে ঈদের আনন্দে মেতে উঠে। ঈদুল ফিতরের দিন সকাল থেকেই পিক-আপ, মাইক্রো, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ম্যাক্সিসহ বিভিন্ন পরিবহনে সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে আনন্দ করতে করতে এসে সমবেত হয় মোল হেডে।  কুমিল্লা, ফেণী, চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালী, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, সোনাইমুড়ি, লাকসামসহ আশপাশের জেলার মানুষও  ছুটে আসছে এখানে। পর্যটকদের কাছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডটি যেনো ছোট একটি সমুদ্র সৈকত। এখানে এসে তারা নদীতে চড়ে নৌকা ভ্রমণ করে। দিনের শেষ বেলার সূর্যের অস্তমিত দৃশ্য দেখে তারপরই বাড়ি ফিরে যায়। দর্শনার্থীদের বসার জন্য এ স্থানে চাঁদপুর পৌরসভার জেন্ডার কমিটির পক্ষ থেকে ২০/২৫টি পাকা বেঞ্চ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। পর্যটকরা এখানে বসে প্রিয়জনদের সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠে। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, এমনকি পহেলা বৈশাখ আসলেই মোলহেডে ভ্রাম্যমাণ চটপটির দোকান আর শিশুদের খেলনা সামগ্রীর দোকান বসে থাকে। চাঁদপুর পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াসের মাধ্যমে শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা আর মেরি ঘোড়া বসানো হয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই। তাতে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ চড়ে বিনোদন করে।
লাকসাম থেকে পরিবার নিয়ে আসা প্রবাসী লোকমান হোসেন বলেন, চাঁদপুরের এ স্থানটি আমাদের কাছে মনে হয়েছে যেনো সমুদ্র সৈকত। তিনি পরিবার নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ওই এলাকা ঘুড়েছেন, নৌকা ভ্রমণ করেছেন।   ফেনী থেকে আসা সানোয়ার হোসেন ও মিসেস সানোয়ার বলেন, সত্যিই চাঁদপুর নদীমাতৃক শহর। কিন্তু এখানে ঘুরতে এসে দেখলাম এটি ছোটখাটো একটি সমুদ্র বন্দর এলাকা। এখানে স্রোতের তালে হেলেদুলে নৌকা আর লঞ্চ চলছে। দূর পার থেকে এমব দৃশ্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য রক্তধারা দেখে আমরা মুগ্ধ।
কিন্তু এই এলাকাটিকে ঘিরে পৌরসভা, রেল বিভাগ বা বন্দর কর্তৃপক্ষ কারোই কোন পরিকল্পনা নেই। এখানে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। নেই শৌচাগার। নেই আলোর ব্যবস্থা। বৃষ্টিতে আশ্রয় নেবার কোন জায়গা বা সেড নেই। গড়ে উঠেনি কোন মধ্যম মানের হোটেল-রেস্তোঁরাও। ফলে দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদেও এখানে এসে দুর্ভোগ ও দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়। তার উপর রয়েছে বখাটে, চোর, ছিনতাইকারী ও পকেটমারের উপদ্রব। নেই সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থাও। অথচ এই এলাকাটিকে পর্যটনের আওতায় এনে এর পুনর্বিন্যাস করলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top