সকল মেনু

৫০ রোগীর সফল এনজিও গ্রাম শেবাচিমে

Barisal1436001703নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল : রাজ্জাক কে দিয়ে শুরু করে অর্চনায় অর্ধশত এনজিও গ্রাম সফল ভাবে সম্পন্ন হলো বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১১ মাসে একজন ইন্টাভেনশনাল অব কার্ডিওলোজিস্ট দ্বারা ওই ৫০ রোগীর এনজিও গ্রাম সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।

সরকারি ফি মাত্র ২ হাজার টাকায়ই সম্ভব হচ্ছে ব্যয়বহুল এ পরীক্ষা করা। আগামীতে সরকারের আরো সহযোগিতা পেলে পর্যায়ক্রমে এ হাসপাতালেই একমাত্র ইন্টাভেনশনাল অব কার্ডিওলোজিস্ট ডাঃ মোঃ সালেহ্ উদ্দিন’র মাধ্যমেই কার্ডিয়াক সার্জারী ব্যবস্থা করার আশা ব্যক্ত করলেন পরিচালক ডা. মুঃ কামরুল হাসান সেলিম।

সূত্র মতে, গত বছরের ২৪ জুলাই নগরীর রূপাতলীর বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাকের এনজিও গ্রাম করানোর মধ্যদিয়ে শুরু হয় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনজিও গ্রাম মেশিনের যাত্রা। এরপর সহকারী অধ্যাপক ও ইন্টাভেনশনাল অব কার্ডিওলোজিস্ট ডাঃ মোঃ সালেহ্ উদ্দিন’র নেতৃত্বে আগস্ট মাসে ডাঃ শামিম, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ইনচার্জ শামিমা ইয়াসমিন ও টেকনোলজিস্ট গোলাম মোস্তফা ভারতের হায়দারাবাদ থেকে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে পুরোদমে এনজিও গ্রামে মনোনিবেশ করেন।

পরবর্তিতে এ টিমে যোগদান করেন ডাঃ মোঃ আক্তারুজ্জামান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ফরিদা বেগম ও শাহনাজ ইয়াসমিন। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তারা এনজিও গ্রাম করেন আগৈলঝাড়ার হুমায়ুন কবিরের।

গত ১১ মাসে বরিশাল নগরী ও সদর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক, আলতাফ হোসেন, পান গোলাপ, মুনসুর আলী, হোসেন আলী, কালাম খান, বাচ্চু মিয়ার, মোশারেফ হোসেন, কাজী আলতাফ, শামসুর নাহার, মোঃ হারুন উর রশীদ’র, জিয়াউল হক, হেলাল উদ্দিন, মো. ইউনুস, রাজিয়া বেগম, মো. আলাউদ্দিন, সুখ রঞ্চন ও মো. আলাউদ্দিন মিয়া, গৌরনদী উপজেলার মনতোষ সাহা, হাজী আব্দুর রশীদ, বানারীপাড়া উপজেলার অর্চনা সিকদার, বাকেরগঞ্জের ইউনুস আলী, ইসমাইল খান, ঝর্না দেবনাথ, রুস্তুম আলী, গৌররঞ্জন বিশ্বাস ও ইয়াকুব আলী, আগৈলঝাড়া উপজেলার নজরুল ইসলাম, মনোরঞ্জন ও হুমায়ুন কবির, মুলাদী উপজেলার জাহাঙ্গির হোসেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আনোয়ার হোসেন, ভোলার সদর এলাকার ইদ্রিস মিয়া, রুহুল আমিন, গিয়াস উদ্দিন, জাহাঙ্গির হোসেন, মো. জসীম উদ্দিন, রিনিকা বেগম, লালমোহন উপজেলার আনিসুর রহমান, মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, কেরামত আলী ও সানাউল্লাহ, শাহিদুল ইসলাম, পিরোজপুর জেলার কমল সাহা, মঠবাড়িয়ার উপজেলার আব্দুর রাজ্জাক, ঝালকাঠী জেলার সামসুন্নাহার, পটুয়াখালীর আবুল কালম আজাদ ও বাসুদেব, বরগুনা সদর উপজেলার আঃ রাজ্জাক এবং শরিয়াতপুরের রাম চক্রবর্তি’র এনজিও গ্রাম সম্পন্ন হয়েছে।

শেনাচিমে ৫০ তম এনজিও গ্রাম সম্পন্ন হওয়া বানারিপাড়ার মালুহার গ্রামের মনীন্দ্র সিকাদারের স্ত্রী অর্চনা সিকদার জানান, দীর্ঘ দিন তিনি হৃদ রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা তাকে এনজিও গ্রাম করাতে বলেছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে ঢাকায় যাওয়া হয় নি। অবশেষে এই হাসপাতালে মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়ে এই পরীক্ষা করেছি। এতে দেখা গেলো আমার হার্টে একটি ব্লক আছে। এখন এখানে রিং বসানোর ব্যবস্থা হলে আমি উপকৃত হতাম।

পরীক্ষার ফলাফল অনুয়াযী ওই ৫০ রোগীর মধ্যে ৪০ জনের হার্টে ব্লক পাওয়া গেছে। জানান সহকারী অধ্যাপক ও ইন্টাভেনশনাল অব কার্ডিওলোজিস্ট ডাঃ মোঃ সালেহ্ উদ্দিন। রোগীরা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন। তাই সরকারি খরচ মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়েই ব্যয়বহুল এ পরীক্ষা করানো সুযোগ পেয়েছেন তারা।

সিনিয়র স্টাফ নার্স শামিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘রোগী আসলে প্রতিদিনই এ পরীক্ষা করানো সম্ভব। কেননা যত পরীক্ষা হবে মেশিন তত সচল থাকবে। সে কারণে রাজধানী ঢাকায় না যেয়ে স্বল্প খরচে এখানেই এ পরীক্ষা করানো সম্ভব। তাছাড়া গরীব রোগীদের জন্য এখানে রয়েছে নানাবিধি সুযোগ-সুবিধা।’

শেবাচিম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার গত ৪৭ বছরেও হৃদ রোগীর এনজিও গ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা ছিলো না। হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগ প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরে শুধুমাত্র এনজিও গ্রাম করানোর জন্যই প্রায় ২০ হাজার রোগীকে রাজধানী ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।

শের-ই-বাংল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯৯২ সাল থেকে হৃদ রোগীর জন্য শুধু মেডিসিন টিটমেন্টের একটি ইউনিট চালু করা হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য শুধুমাত্র ইসিজি মেশিন ছাড়া আর কোন মেশিন ছিলো না এই ইউনিটে। পরবর্তিকে ইকো কার্ডিওগ্রাফী মেশিন স্থাপন করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় হৃদ রোগ ইনস্টিটিউট থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ও ইন্টাভেনশনাল অব কার্ডিওলোজিস্ট ডাঃ মোঃ সালেহ্ উদ্দিন বরিশালে বদলী হয়ে আসলে এ হাসপাতালে একটি এনজিও গ্রাম মেশিন সরবরাহের পরিকল্পনা হাতে নেন বর্তমান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুঃ কামরুল হাসান সেলিম। পরে ২০১৩ সালের রোগীদের সাময়িক লাইফ সাপোর্ট দেয়ার জন্য শরীরে প্রেস মেকার মেশিন প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেন।

এরই মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা মূল্যের এনজিওগ্রাম মেশিন এসেছে। ডাঃ মোঃ সালেহ্ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম অত্যাধুনিক (ফিলিপস’র এফডি-এলুরা) এই মেশিনটি সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মেশিন দিয়ে এনজিও গ্রাম পরীক্ষা থেকে শুরু করে এনজিও প্লাষ্টি, প্রেস মেকার বসানো সম্ভব।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুঃ কামরুল হাসান সেলিম বলেন, ‘খুব দ্রুততার সঙ্গে এখানে এনজিও প্লাস্টি (রিং বসানো) করার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরে রিং ক্রয়ের বাজেট নেই। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগযোগ করে রিং ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। তখন এ অঞ্চলের গরীব রোগীরাও হার্টে ব্লক থাকলে স্বল্প খরচে রিং বসাতে পারবেন।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top