সকল মেনু

উত্তরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৫ জুন: উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি প্লাবিত করেছে নদ-নদীর দু’পাড়ের এলাকা। নীলফামারী, কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। কোথাও কোথাও পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে ভাঙ্গনের তীব্রতা।এনিয়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নীলফামারী প্রতিনিধি  জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। সংশ্লি­ষ্ট সকলকে সর্তকবস্থায় রাখা হয়েছে। এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন, ছোটখাতা, পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, কিসামত ছাতনাই, পূর্বছাতনাই ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেন্ডাবাড়ী, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতার চর, ভাষানীর চর, কিসামতের চর, ছাতুনামাসহ চরগ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, আর মাত্র ১৫ ফুট ভাঙ্গলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এলাকার ছেলে- মেয়েদের লেখাপড়া। গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ অবস্থায়  উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। সেই সাথে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের লোকজন। নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটু বলেন, তার ইউনিয়নের নোহালী চরে ৩শ’ পরিবার এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে।
চলনবিলে ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে এক ফুট
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিদি জানান, জৈষ্ঠ্য মাসেই চলনবিলের শুকনো ক্ষেত-খামারে বন্যার পানি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। গত ১ সপ্তাহে ৮ উপজেলার নিম্ন অঞ্চলের লাখ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। যমুনার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় চলনবিলের পানিও দ্রুত বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহকাল আগে বাঘাবাড়ি সংলগ্ন রাউতারা মাঠে বন্যার পানি প্রবেশ করে। তারপর দ্রুত শাহ্জাদপুরের পশ্চিমাঞ্চল, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, চাটমোহর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া পর্যন্ত এক লাখ হেক্টর খেত-খামার আগাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
ঝিনাইগাতীতে পানিবন্দীদের দুর্ভোগ
শেরপুর প্রতিনিধি  জানান, শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও দূর্ভোগ কমেনি পানিবন্দী মানুষের। গত ক’দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী গ্রামগুলো হচ্ছে- বনগাও, চতল, রামনগর, দিঘীরপাড়, ছুরিহাড়া, বেলতৈল, কোণাগাও, শালধা, কালিনগর, সারিকালিনগর, লঙ্গেশ্বর, দরিকালিনগর, বাগেরভিটা, কান্দুলী, দুপুরীয়া, জরাকুড়া, পাইকুড়া, লয়খা, হাসলিগাও, হাসলিবাতিয়া, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি। পানিবন্দী এসব লোকজনকে কলার ভেলা ও নৌকাযোগে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা মহারশি, কালঘোষা, সোমেশ্বরী ও মালিঝি নদী দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীগুলোতে পানি সামান্য কমলেও প্লাবিত এলাকায় কমেনি।
ব্রহ্মপুত্র পানি বাড়ছে
শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদ সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে নিম্নাঞ্চলসহ কয়েকটি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। নদ সংলগ্ন চর পক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও ব্রহ্মপুত্র নদে দ্রুত পানিবৃদ্ধির ফলে নদ সংলগ্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপারীপাড়া গ্রামটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ গ্রামের ২ হাজার অধিবাসী বর্তমানে পানিবন্দী।
জামালপুরে যমুনা-ব্রক্ষপুত্রে পানি বাড়ছে
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে যমুনা- ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্র্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো সুত্রে জানা গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার ৭টি উপজেলায় নিন্মাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, বকসিগঞ্জসহ জামালপুর সদর উপজেলার নিন্মাঞ্চল নতুন করে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
মেঘনা নদীতে পানি বৃদ্ধি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিদি জানান, গত দুই দিনে (শনি ও রোববার) মেঘনা নদীতে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, এলাকার মানুষ ভাঙ্গন আতংকে রয়েছে।
গাইবান্ধায় পানি কমছে, বেড়েছে ভাঙ্গন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। রোববার থেকে সব নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সাঘাটা উপজেলার ১৫ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী হয়ে আছে। বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙ্গন। এছাড়া পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলছড়ি বালাসী ঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকাযোগে মালামাল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী, সিংড়িয়া, উড়িয়া, রতনপুর, কালাসোনা, গজারিয়া, কামারপাড়া, জিয়াডাঙ্গা, রসুলপুর, পূর্ব কঞ্চিপাড়া, জোড়াবাড়ি, সাতারকান্দি, ফজলুপুর, নিশ্চিন্তপুর, খাটিয়ামারি ও সাঘাটার গোবিন্দিপুর, বাঁশহাটা, বেড়া, হলদিয়া, চিনিরপটল, কামারপাড়া, মুন্সিরহাট ও পাতিলবাড়ী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র -যমুনা নদীদে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিজামখাঁ, খোঁদ্দারচর, চরচরিতাবাড়ি, কানিচরিতাবাড়ি, রিয়াজ মিয়ারচর, উজান বুড়াইল, ভাটি বুড়াইল, কেরানির চর, কালাইসোতার চর, চর বিরহীম, ভোরের পাখি, কালিরখামার চর এলাকায় তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top