সকল মেনু

কুকুরের ডায়ালিসিস নিয়ে তুলকালাম

DOG1434189068আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কুকুরের ডায়ালিসিস নিয়ে কলকাতা পিজি হাসপাতালে ঘটে গেল তুলকালাম কাণ্ড। প্রশাসনের সর্বোচ্চ অনুমতি নিয়ে কুকুরটিকে হাসপাতালে ভর্তির পর চূড়ান্ত অপারেশনের দোরগোড়ায় পৌঁছে থেমে গেল সব আয়োজন। আর হলো না কুকুরটির ডায়ালিসিস। এক যুগান্তকারী অঘটনের সাক্ষী হতে হতে বেঁচে গেল কলকাতা পিজি (এসএসকেএম) হাসপাতাল। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

ওই পত্রিকায় চমক জাগানো খবরটি প্রকাশিত হয়েছে আজ। খবরে যে তথ্য জানানো হয়, তা এরকম- তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজি। যিনি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি, চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য প্রধান। ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিষদীয় সচিব। মমতা ব্যানার্জির অতি ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা। তারই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ার কুকুরের ডায়ালিসিস বলে কথা। তাই ডায়ালিসিস এর অনুমতি পেতে কোথাও কোনো বাঁধার মুখেও পড়তে হয়নি।

এসএসকেএমে ডায়ালিসিসের জন্য ঘুরে-ঘুরে মরণাপন্ন রোগীরা যেখানে ‘ডেট’ পান না, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয়। সেখানে নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ার কুকুরের জন্য কলকাতার সুপার স্পেশ্যালিটি ওই হাসপাতালের ডায়ালিসিস ওয়ার্ডে সব ব্যবস্থা পাকা করেই ফেলেছিলেন নির্মল মাজি।

তার যুক্তি ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। কুকুরটা খুব সুন্দর, ছটফটে। তিন মাস ধরে কষ্ট পাচ্ছিল। তাই এসএসকেএমের একটা হেল্প নিতে চেয়েছিলাম। পশু হাসপাতালে ডায়লিসিসের ব্যবস্থা নেই। সেখানকার সার্জনদেরও অনুরোধ করেছিলাম এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিতে।’

এমনকী এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান রাজেন্দ্র পান্ডের জবাব ছিল এ রকম- ‘একটা কুকুরের ডায়ালিসিসের অনুরোধ এসেছিল। তাতে হয়েছেটা কী? মানুষ ও কুকুর, উভয়েই স্তন্যপায়ী গোষ্ঠীর প্রাণী। দু’জনের ডায়ালিসিস একই ধরনের মেশিনে হতে পারে।’  তিনি জানান, ‘আমি সেই সময় রাজ্যের বাইরে ছিলাম। কিন্তু নির্দেশ দিয়ে সব রকম টেকনিক্যাল সাপোর্ট তৈরি করিয়ে রেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত কোনও কারণে তা করা যায়নি।’

এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র রাজেন্দ্র পান্ডের অনুরোধ ও নির্মল মাজির ফোনে লিখিত অনুমোদন দিয়েছিলেন ‘অ্যান আনআইডেন্টিফায়েড ডগ অ্যাডভাইসড ফর হিমোডায়ালিসিস।’এই কাগজটি হাতে পেয়েই চমকে ওঠেন বিভাগের সিনিয়র ডাক্তারেরা। সেই সময়েই বিভাগীয় প্রধান রাজেন্দ্র পান্ডে ফোন করেন কুকুরের ডায়ালিসিস শুরু করে দিতে। আর তখনই আসে আপত্তি। স্তম্ভিত চিকিৎসকরা অধ্যক্ষকে ফোন করে আপত্তির কথা জানান। অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি ওদের বলেছিলাম, আপত্তির কারণগুলো লিখিত জানিয়ে দিন। তা হলেই হবে ’
চিকিৎসকদের বক্তব্য ছিল, ‘তারা মানুষের ডায়ালিসিস করতে শিখেছেন। কুকুর বা অন্য জীবজন্তুর ডায়ালিসিস করতে তারা অভ্যস্ত বা প্রশিক্ষিত নন। উপরন্তু কুকুরের ডায়ালিসিসে চ্যানেল কী ভাবে হবে, কতটা জল বা ওষুধ দিতে হবে, এ সব তাদের জানা নেই। ফলে ডায়ালিসিস করলে কুকুরটির প্রাণসংশয় হতে পারে নেফ্রোলজি’তে সে দিন ভিজিটিং চিকিৎসক ছিলেন অর্পিতা রায়চৌধুরী। তিনি তাঁর নোটে লিখেন, ‘কুকুরের মতো জন্তুর দেহ থেকে রক্তের মাধ্যমে ডায়ালিসিস যন্ত্রে এমন ভাইরাস চলে আসতে পারে, যা থেকে পরে মানুষেরা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে এটা সম্ভব নয়।’ সেই নোট পেয়েই শেষ হয়ে যায় ডায়ালিসিসের সব আয়োজন। শেষমেশ অনুমতি প্রত্যাহার করে নেন অধ্যক্ষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top