সকল মেনু

কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৯ বছর!

unnamed হটনিউজ ডেস্ক: ১২ জুন ২০১৫, কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৯তম দিবস। ১৯৯৬ সালের এই দিনেই দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউলাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা লেঃ ফেরদৌসের নেতৃত্বে একদল সেনা ও ভিডিপি সদস্য কর্তৃক অপহৃত হন। অপহরণকারীরা কল্পনার দুই বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা (কালীচরণ) ও লাল বিহারী চাকমা (ক্ষুদিরাম)কেও বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। কল্পনার বড় ভাই লাল বিহারী চাকমা টর্চের আলোতে অপহরণকারীদের মধ্যে কজইছড়ি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার লেঃ মো: ফেরদৌস কায়ছার খান এবং ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার মো: নূরুল হক ও মো: সালেহ আহম্মদকে চিনতে পারেন। কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমাকে নিয়ে বাঘাইছড়ির টিএনওর নিকট বিষয়টি অবহিত করেন। টিএনওর কাছে বর্ণিত বিবরণই বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং থানায় তা মামলা নং ২, তারিখ ১২-০৬-৯৬, ধারা ৩৬৪ দ: বি: হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৭ মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখার নিকট হস্তান্তর করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ তদন্ত কার্যক্রম বাঘাইছড়ি থানায় স্থানান্তর করা হয়। প্রায় ১৪ বছর পর ২০১০ সালের ২১ মে পুলিশের চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করে। যাতে অভিযুক্ত ও প্রকৃত দোষীদের সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। মামলার বাদী আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন। ২ সেপ্টেম্বর ২০১০ আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ চট্টগ্রাম জোন সিআইডির পক্ষ থেকে চুড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়। উক্ত সিআইডি তদন্ত রিপোর্টেও কল্পনার কোন হদিশ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হলে বাদী তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। গত ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ রাঙ্গামাটিস্থ জজ আদালত  জেলা পুলিশ সুপারকে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার দায়িত্ব প্রদান করেন। এই তদন্তে  অভিযুক্ত লে: ফেরদৌস, ভিডিপি সালেহ আহমদ ও মো: নূরুল হককে জিজ্ঞাসাবাদপূর্বক জবানবন্দি রেকর্ড করার কথা জানা গেলেও মামলাটির কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। উপরন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা ও লাল বিহারী চাকমার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের আদেশ প্রদান করেন। ৬ মার্চ ২০১৪ মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা ডিএনএ নমূনা সংরক্ষণের আদেশ প্রত্যাহার করার আবেদন করলেও ঐ আদেশ বহাল রাখা হয়। অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে ঘটনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় না নিয়ে উল্টো কল্পনার ভাইদের ডিএনএ সংগ্রহের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যা কল্পনার পরিবারদের হয়রানি করার সামিল। বিষয়টিকে মামলার গতি অন্য দিকে ধাবিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ২৭ মে ২০১৫  শুনানির পর  আদালত আবার ১৬ জুন ২০১৫ শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন। এভাবে শুনানির পর শুনানি চলছে, কিন্তু এখনও তদন্তের বা বিচারের কোন অগ্রগতি নেই।

গভীর উদ্বেগ ও পরিতাপের বিষয় যে, অপহরণের ১৯ বছরেও সরকার বা প্রশাসন অপহৃত কল্পনা চাকমার কোন হদিশ দিতে পারেনি। অভিযুক্ত চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার করেনি। এই অপহরণ ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। ১৯ বছর ধরে কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচার না হওয়া, এমনকি গ্রেফতার না করা বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিকেই প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলে। আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই কোন তথ্য না পাওয়ার অজুহাতে অপহরণ ঘটনার মত জঘন্য মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে কল্পনা চাকমার পরিবারকে যেন বঞ্চিত করা না। দোষীদের চিহ্নিত করে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্র, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। এমতাবস্থায় পাহাড়ী নারী তথা দেশের সমগ্র নারী সমাজের  মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের নিকট নি¤েœাক্ত দাবি জানাচ্ছি-

অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে অপহরণ মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি ঘটিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
আদিবাসী নারীসহ দেশের অপরাপর সকল নারীর উপর সহিংসতায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন, শান্তি এবং নারী সমাজের নিরাপত্তা ও অগ্রগতির স্বার্থে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top