সকল মেনু

তরঙ্গের মেঘনায় চার সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ পারুল

Parul1432922824নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা ডুবিতে চার সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা পারুল। মেঘনার উত্তাল তরঙ্গের পানিতে ডুবে সুখের পরিবারটি শূন্য করে চার সন্তান চলে গেছে না ফেরার দেশে।

‘আর কেউ প্রবাসে বাবা ফারুক মিয়াকে ফোন করে বাবা বলে ডাকবে না।’ এভাবে পারুলের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে পাইকারচর গ্রামের বাতাস।

নরসিংদীর মেঘনা নদীতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নৌকা ডুবির ঘটনায় একই পরিবারের চার শিশুসহ নিখোঁজ সাত জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে মেঘনা নদীতে থেকে নারায়ণগঞ্জের বিআইডব্লিওটিএ’র পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল নিখোঁজ ছয় জনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ নিয়ে শিশুসহ মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় সাত জনে।

এ খবরে সকাল থেকেই মেঘনা পাড়ের মানুষ ও নিহতদের গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারগুলোতে চলছে কান্নার রোল। প্রতিবেশিরাও কান্না লুকাতে পারছেন না। দুপুরে লাশগুলো যখন তাদের গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়, তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় পুরো গ্রাম জুড়ে। শত শত লোক এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায় ফারুক মিয়ার বাড়িতে। পরে বিকেলে এক সঙ্গে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয় লাশগুলো।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের পুরানচর থেকে ৬০/৭০ জন যাত্রী বোঝাই করে একটি যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা একই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী বগারগোত গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নৌকাটি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বগারগোত এলাকার কাছাকাছি মেঘনা তীরের অদূরবর্তী স্থানে পৌঁছার পর উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে। এতে নৌকাটি বাতাসের তোড়ে উল্টে মেঘনার পানিতে ডুবে যায়।

এ সময় নৌকার যাত্রীরা পানিতে পড়ে চিৎকার করতে থাকে। অনেক যাত্রী সাঁতরে নদীর পাড়ে উঠতে সক্ষম হয়। ঝড় থামার পর আশ পাশের স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে বায়েজিদ নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে। এ ছাড়া নিখোঁজ থেকে যায় ছয় জন যাত্রী।

পরে নরসিংদীর ফায়ার সার্ভিস ও নারায়ণগঞ্জের বিআইডব্লিওটিএ’র পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে মেঘনা নদীতে সন্ধান চালান।  শুক্রবার সকালে নিখোঁজ ছয় জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ডুবুরি দল।

উদ্ধারকৃতরা হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত গ্রামের শাহাজ উদ্দিন স্ত্রী নূরজাহার নুরী (৬০), একই গ্রামের রূপ মিয়ার স্ত্রী ফালানী বেগম (৬০), কালিকাপুর গ্রামের স্বপন মিয়ার মেয়ে ফারজানা (৮) এবং পাইকারচর গ্রামের ফারুক মিয়ার চার সন্তান উম্মে এ্যানি (৪), সুমাইয়া (৮), ফয়সাল (৬) ও বায়েজিদ (২)।

স্থানীয়রা জানায়, বগারগোত অঞ্চলটি নরসিংদীর মেঘনা নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল। নরসিংদী শহর দূরে হওয়ায় এই গ্রামের মানুষের নদী পথে যাতায়াত করে বেশি যার ফলে প্রতি বছরেই ঝড়ের মৌসুমে নৌকাডুবে দূর্ঘটনায় কবলে পতিত হয়।

ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সন্তান হারা জননী পারুল বেগম জানান, প্রচণ্ড বেগে যখন ঝড় ধেয়ে আসছিল তখন নৌকার যাত্রীরা নৌকাটিকে তীরে ভিড়ানোর জন্য মাঝিকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু মাঝি তা কর্ণপাত করেননি। তখন সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছিল। এ সময় দমকা হাওয়া নৌকাটি দুলছিল তখন নৌকার মাঝিরা নৌকা থেকে লাফিয়ে নদীতে নামে। এ সময় সঙ্গে সঙ্গে নৌকাটি নদীতে তলিয়ে যায়। সবাই সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও শিশুরা উঠতে পারেনি।

উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিওটিএ’র উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে তিন জন ডুবুরিসহ পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক স্থানে জাল টেনে দুর্ঘটনা কবলিত নৌকাটিকে সনাক্ত করা হয়। পরে ওই নৌকা থেকে ডুবুরিরা ছয় জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করতে পারলেও ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধার সম্ভব হয়নি।’

নরসিংদী সদর উপজেলার ভঙ্গারচর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনা কবলিত নৌকার মাঝি পলাতক রয়েছে। আর এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top