সকল মেনু

মণিরামপুরের ৮ পরিবারে ১৯ মাসেও থামেনি কান্না

unnamed যশোর প্রতিনিধি: অল্প খরচে বিদেশে গিয়ে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বন্যা কবলিত কিসমত চাকলা প্রামের দফাদার পাড়ার আট যুবক। দালালের হাত ধরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার ১৯ মাস অতিবাহিত হলেও তাদেও খোঁজ মেলেনি।
ফিরে আসার অপেক্ষায় আট যুবকের পরিবারে এ দীর্ঘ সময় ধরে চলছে স্বজনদের কান্না। এত কান্নার পরও তারা জানতে পারেননি, মালয়েশিয়াগামী এ আট যুবক আদৌ বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন। সেই সঙ্গে দালালের কাছে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে উল্টো হুমকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিন মণিরামপুর উপজেলার বন্যা কবলিত কিসমত চাকলা প্রামের দফাদার পাড়ায় গেলে ঐ আট পরিবারের মহিলারা জানায়, জনপ্রতি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ৫০ হাজার টাকা করে অগ্রিম দিয়ে ২০১৩ সালের ০২ নভেম্বর দালালের হাত ধরে বাড়ি থেকে রওনা হন দফাদার পাড়ার গ্রাম্য ডাক্তার হাসানুর রহমান (৩৫), কৃষি ডিপ্লোমা পাশ সুমন দফাদার (২৮),  বিএসসি পড়ুয়া জাহিদুল দফাদার (২৪), সবজি ব্যবসায়ী জমির দফাদার (৩৫), চাষি ফারুক দফাদার (৪২), রং মিস্ত্রি শাহ আলম দফাদার (৩৫), সাহারত গাজী (২৫) ও হাসেম আলী (৪৫)।
নিখোঁজ হাসানুর রহমানের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, আব্দুর রহমান নামে এক দালালের সঙ্গে বাড়ি থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার তিন দিন পর তার স্বামী ফোন করে জানায়, দালাল তাদেও প্লেনে করে নিয়ে যাবে না। জাহাজে করে নিয়ে যাবে। একটু পরে জাহাজে উঠব। এ সময় তিনি ফোনে স্বামীকে বলেন, তুমি জাহাজে ওঠার আগে ফোন করবা। আজও স্বামীর সেই ফোনের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কুলসুম বেগম। তাদের দুই বছর বয়সী মেয়ে ছামিয়া বাবার জন্য কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
নিখোঁজ জাহিদুল দফাদারের মা বলেন, দালাল আব্দুর রহমানের কথামতো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছেলে জাহিদুলকে  মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য সুদে টাকা নিয়ে দালালের হাতে তুলে দিয়েছি। আজও তার খোঁজ-খবর নেই। তিনি বলেন, ছেলের খোঁজ নিতে কিছুদিন আগে দালাল আব্দুর রহমানের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তোর ছেলে ভাল আছে। সাগরে জাহাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে’। দালালের বাড়িতে যাওয়ায় তার (দালাল) সম্মান নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যা বিয়ে করগে। আবার ছেলেপুলে হবে। আর আমার কিছুই করতে পারবি না’।
অশ্রুসিক্ত নয়নে জাহিদুলের মা বলেন, ওই দালালরা আমার মতো অনেক মায়ের কোল খালি করেছে, অনেক শিশুকে এতিম করেছে। এর বিচার আল্লাহ যেন করে।
দফাদার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ সুমন দফাদারের আড়াই বছর বয়সী জমজ ছেলে সাকিব ও রাকিব ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে, ও আব্বু, ও সোনার ময়না পাখি, তুমি আমাদেও রেখে কোথায় গেছো, তুমি চলে এসো। তাদের কান্না থামানোর জন্য মা মিরা খাতুন মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছেন।  নিখোঁজ হাসানুর রহমানের দুই বছর বয়সী মেয়ে ছামিয়া খাতুন, জমির দফাদারের দুই শিশু সন্তান শুভ ও সুজন, ফারুক দফাদারের দুই ছেলে, হাসেন আলীর দুই ছেলে সবাই রাত হলেই বাবার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে।
এভাবেই কান্না চলছে গত ১৯টি মাস। এত কান্নার পরও তারা জানতে পারেনি, তাদের বাবা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন।
প্রত্যেকটি পরিবার এখন অসহায়। স্বামীকে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে স্ত্রীরা সোনার গহনা ও জমি বন্দক রেখে সহায়-সম্বল হারিয়েছেন। এসব পরিবারে উপার্জনক্ষম কোনো পুরুষ নেই। ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে ধার-দেনা ও আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় চলছে তাদের সংসার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top