সকল মেনু

কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর

kamaruzzaman-ed_131706অনলাইন রিপোর্ট : আলবদর কমান্ডার ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। শনিবার রাত ১০টার পর তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফাঁসির আসামি কামারুজ্জামানের জন্য শেষ পদক্ষেপ ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা। অনেকটা সময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত  তিনি আর প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় ফাঁসি কার্যকর করতে আর কোনও বাধা ছিল না।

এর আগে বিকেলে কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা শেষ দেখা করেন। কারাগার থেকে বের হয়ে ছেলে হাসান ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনে তাদের সাক্ষাতের জন্য বিকাল ৪/৫টার দিকে কারাগারে যেতে বলে।

এর পর কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো নির্বাহী আদেশের অনুলিপি কারাগারে পৌঁছানোর পর তাকে (কামারুজ্জামান) পড়ে শুনানো হয়।

দফায় দফায় বৈঠক করে ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত থাকতে প্রথা অনুযায়ি সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির নামও চূড়ান্ত করা হয়।

কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কখন কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেননি। তবে গতরাতেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজ শনিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

শুক্রবার রাতে একটি রিকশা ভ্যানে করে অন্তত আটটি বাঁশ, বড় আকারের তিনটি কার্টন এবং একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ত্রিপল কারাগারে ঢোকাতে দেখা যায়। ফাঁসির মঞ্চের জন্য এসব প্রয়োজন বলে কারা কর্মকর্তারা জানান।

মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) কামারুজ্জামানের আবেদন সোমবার সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হওয়ার পর তার কাছে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগই ছিল।

বৃহস্পতিবার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার পর কামারুজ্জামান সময় নিয়ে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর শুক্রবার তার সিদ্ধান্ত জানতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট যান কারাগারে।

শনিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কামারুজ্জামান। এর আগেই স্বজনদের দেখা করতে ডেকে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ।

মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। রোববার (৫ এপ্রিল) পুনর্বিবেচনার আবেদন বাতিল করে আদালত কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যদের নিয়ে গঠিত আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সংগঠক ছিলেন কামারুজ্জামান। সেই সময় হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি।

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলবদর প্রধান ছিলেন জামায়াতের বর্তমান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান। ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের মধ্য দিয়ে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়।

২০১০ সালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় কামারুজ্জামানকে। একই বছর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০১১ সালে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলে; বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় পরের বছর ৩১ জানুয়ারি। ৭টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয় তার বিরুদ্ধে।

২০১৩ সালের ৯ মে মামলার রায়ে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

পরে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও।

চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। পরে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে আসামিপক্ষ। মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগগুলো হলো:

অভিযোগ ১:

৭১ এর ২৯ জুন শেরপুরে বদিউজ্জামানকে গুলি করে হত্যা।

এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেয়েছেন কামারুজ্জামান।

অভিযোগ ২:

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সাঈদ আবদুল হান্নানকে নির্যাতনে অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। সংখ্যাগরিষ্ট মতে এ রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

অভিযোগ ৩:

২৫ জুলাই শেরপুরের সোহাগপুরে একদিনেই ১২০ জনকে হত্যা ও নারী ধর্ষণ।

এ অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।.

অভিযোগ ৪:

২৩ আগস্ট শেরপুরের নারায়ণপুরে গোলাম মোস্তফাকে গুলি করে হত্যা।

চতুর্থ এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেও আপিল বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়।

অপর একটি অভিযোগ ছিল; ৭১ এর রমজান মাসে শেরপুরের চকবাজার ও ময়মনসিংহের কাঁচিঝুলিতে গণহত্যা ও নভেম্বরে ময়মনসিংহে টেপা মিঞাকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা।

এ অভিযোগে কামারুজ্জামনকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে এ দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগও।

এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রিভিউ খারিজের দিনই জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top