সকল মেনু

মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোলায় ইলিশের আকাল

 unnamedএম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। চৈত্রের খড়া শেষে বৈশাখ আসছে স্বস্থির আগমনী বার্তা নিয়ে। একদিকে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল। অন্যদিকে বাঙ্গালির আবহমানকালের নববর্ষ উৎসব। প্রাণের এ উৎসব উদযাপনের অন্যতম অনুসঙ্গ পান্তা ইলিশ। মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসে মাছ শিকারে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী পান্তা ইলিশ থেকে বি ত হচ্ছেন বৈশাখ প্রেমীরা। এমনকি দেশে আহরিত ইলিশের ৭০ ভাগ পাওয়া যায় যে ভোলায়, সেই ভোলার মানুষও ইলিশ দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করতে পারছে না। তারপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকেই ছুটছেন ইলিশের খোঁজে। তাদের দাবী নববর্ষকে কেন্দ্র করে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য হলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার।
সূত্রে জানা যায়, ইলিশ…..।। তাজা ইলিশ ।। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে এ যেন বাঙালীর কাছে এখন অমাবশ্যার চাঁদ। কারণ জেলেরা নদীতে নামতে পারছেন না, সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারণে। দু’মাস আগে যারা ফ্রিজে ইলিশ রেখেছেন তারা কোনভাবে পান্তা ইলিশের আয়োজন করতে পারলেও তাজা ইলিশ দিয়ে পান্তা ইলিশের সুযোগ নেই কারোরই। যেহেতু ইলিশ ছাড়া পহেলা বৈশাখের পূর্ণতাই পাওয়া যায় না। তাই বাজারে ইলিশ না পেয়ে ক্রেতারাও হতাশ।
ইলিশ মাছ কিনতে আসা সোলায়মান, মাইনুদ্দিন ও সগীর নামের ক্রেতার সাথে কথা হয়। তারা হতাশ হয়ে বলেন, বাজারে ইলিশ মাছের খুব দাম, যা তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
জাটকা ইলিশ রক্ষা ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নদ-নদীর নির্দিষ্ট এলাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দু-একজন জেলে জেল-জরিমানার ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামছে, কিন্তু ইলিশ খুব একটা পাচ্ছেন না। ফলে চাহিদার চেয়ে বাজারে ইলিশের আমদানি কয়েকগুন কম হওয়ায় দামটা স্বাভাবিক কারণেই চড়া।
গত কয়েক দিনে ভোলার মাছঘাট গুলোতে ইলিশের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বড় ইলিশের কেজি ৩ হাজার টাকায় উঠেছে। ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়। সপ্তাহ খানেক আগেও এর দাম ছিলো ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে হালি প্রতি দুই-তিন গুন বেড়ে গেছে। তবুও পহেলা বৈশাখ, মাছ ঘাটগুলোতে ইলিশের হাহাকার থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম নয়।
কয়েজজন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। মালেক নামের এক জেলে বলছেন, সরকারের অভিযান চলার কারণে মাছ ধরতে যাওয়া যাচ্ছে না। যদিও দু-একজন যায়, তাহলে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। বর্তমানে আমরা অনেক কষ্টে আছি।
মিজান নামের অপর জেলে বলছেন, নদীতে মাছ আছে অল্প। সাধারণ জেলেরা মাছ ধরতে গেলেই বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে এবং জাল পুড়িয়ে ফেলা হয় ও আটককৃতদের কোর্টে চালান করে দেয়া হয়।
এদিকে, বৈশাখ উপলক্ষে মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবী এক সপ্তাহের জন্য হলেও মাছ ধরার ব্যাপারে সরকার যেন একটু শিথিল হয়। এতে করে জেলে ও ব্যবসায়ী সবাই উপকৃত হত।
তবে পান্তা ইলিশ দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে অন্যান্যদের মত জনপ্রতিনিধিরাও একমত। ভোলা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশারেফ হোসেন মনে করেন, এক সপ্তাহের জন্য হলেও মাছ ধরার অভিযান শিথিল করে সবাইকে পান্তা ইলিশ ভোজের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার সুযোগ দেয়া উচিত। তিনি এটা সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
তবে অভিযান শিথিল করা হলে ধ্বংস হয়ে যাবে ইলিশের পোনাসহ অন্যান্য মাছ। ব্যাহত হবে এর উৎপাদন। যে কারণে পান্তা ইলিশ বাদ দিয়েই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে ভোলাবাসীকে, এমন কড়া হুশিয়ারী ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজার।
তিনি বলেন, এই সময় যদি নদীতে মাছ ধরার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ছোট ছোট এই ঝাটকাগুলো বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে ইলিশ থেকে প্রচুর অর্থ পাই সেটা সম্ভব হবে না। তাই ছোট ঝাটকা না ধরে সেগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top