সকল মেনু

ভোলায় খোলা আকাশের নীচে চলছে পাঠদান !

 ভোলা প্রতিনিধি: ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের পশ্চিম রুহিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষগুলো পরিত্যক্ত হওয়ায় খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। যে ভবনটি রয়েছে সেটিতেও জীবনের ঝুকি নিয়ে পাঠদান চলছে ছাত্র-ছাত্রীদের।  সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের পশ্চিম রুহিতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটির বয়স ২৪ বছর। তবে নির্মাণের ১৫ বছরের মাথায় ভবনটির পলেস্তার খসে পড়তে শুরু করে। ভবনের তিনটি কক্ষের দুটি পাঁচ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্য কক্ষটির অবস্থাও একেবারে জরাজীর্ণ। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। সম্প্রতি ছাত্রছাত্রীদের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে পাঠদান করাতে দেখা গেছে। কক্ষের অভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কখনো বারান্দায়, কখনো সামনের খোলা মাঠে পাঠদান দিচ্ছেন দুই বছর ধরে এভাবেই ক্লাস নেয় হচ্ছে বলে জানালেন শিক্ষকেরা।সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের মধ্যে পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণীর পাঠদান চলছে। তৃতীয় শ্রেণীর পাঠদান চলছে পরিত্যক্ত কক্ষে। পরিত্যক্ত দুটি কক্ষের ছাদ ভেঙে ভেঙে পড়ছে। যে কক্ষে পাঠদান চলছে, সেটির ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়েছে। ছাদের রড বের হয়ে গেছে। অসংখ্য বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। জানালার দরজাও নেই। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মুনতাহা বলে, ছাদের ইট-বালুর টুকরা মাঝে-মধ্যেই শরীরের ওপর খসে পড়ছে। এতে ছাত্রদের চোখে-মুখে-পিঠে জখম হচ্ছে। তবু নীরবে কষ্ট সহ্য করে তারা পাঠ নিচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণীর আরিফ, অন্তর ও সুমাইয়া বলে, বর্ষায় বারান্দায় ক্লাস করতে গিয়ে বই ভিজে যায়। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সোনিয়া বলে, বাইরে বসে ক্লাস করলে মনোযোগ ঠিক থাকে না। শিক্ষক মোহমেন আরা বেগম বলেন, ১৯৯২ সালে তিন কক্ষের ভবনটি নির্মিত হয়। এরপর ১৪-১৫ বছর পেরোতেই ভবনটির পরেস্তার খসে পড়তে শুরু করে। পাঁচ বছর আগে ভবনের দুটি কক্ষ কমিটির সিদ্ধান্তে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। অন্য কক্ষটির অবস্থাও পরিত্যক্ত কক্ষের মতোই। তবু তাঁরা ঝুকি নিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সেই কক্ষে পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রায় ৪শ’ ছাত্র-ছাত্রী রযেছে। ভবনসংকটে ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ষায় গাদাগাদি করে বারান্দায় এবং শীতে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পুরোনো ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলী আশ্রাফ বলেন, ভবন ছাড়াও বিদ্যালয়ে বেঞ্চ, চেয়ার ও টেবিলের সংকট রয়েছে। যেগুলো আছে তার অধিকাংশ ভাঙা। কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগের বিষয়টি দেখে গেছেন। তবে কোনো লাভ হয়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ফরিদ উদ্দিন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সাত্তার জমাদ্দার বলেন, আবেদনপত্রটি পাওয়ার পর নতুন ভবন নির্মাণের তালিকায় বিদ্যালয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
ভোলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আবদুস সালাম বলেন, ‘ভবনটি দ্রুত নির্মাণ-তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঢাকায় লিখিত আবেদন পাঠিয়েছি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top