সকল মেনু

হায়রে! দেশে সুপেয় পানির সংকট

আফিফা জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: ‘পানি ও টেকসই উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার (২২ মার্চ) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পানি দিবস। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পুকুর, হাওর-বাওর, খালও কম নেই আমাদের শস্য শ্যামলা এই সবুজ বাংলায়। তবু সংকট রয়েছে সুপেয় পানির। এই সংকট বাড়ছে দেশের সবখানেই। বিশেষ করে উপকূলীয় ও পাহাড়ি অঞ্চলে তা প্রকট। আর মহানগরগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ঘনীভূত হচ্ছে এ সংকট।

ফলপ্রসূ উন্নয়নে পানির কোনো বিকল্প নেই। পানির উৎস ও সেখান থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা দারিদ্র্য বিমোচনের ভিত্তিও তৈরি করে দেয়। জ্বালানি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম।

মানুষের শরীরের পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ পানি। শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও বেশি। একটি নবজাতকের শরীরে ৭৮ ভাগ পানি থাকে। এছাড়া রান্না, খাওয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু নিত্য কাজে পানিই একমাত্র পানির বিকল্প।

বিশ্ব স্বাস্থ্য  সংস্থার সুপারিশ, একজন সুস্থ মানুষকে দৈনিক কমপক্ষে  সাড়ে সাত লিটার পানি খেতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ মানুষ পানির নাগালের বাইরে বসবাস করেন।

বিশেষ করে চর, পাহাড়, উপকূলীয় ও হাওরাঞ্চলের লোকজন সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন। একটু গরম পড়লেই শহরে পানির জন্য হাহাকারও নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, রাজধানীর পানির স্তুর দ্রুতই নিচে নেমে যাচ্ছে।  নগরবাসীর অতিরিক্ত পানির চাহিদা মেটাতে গিয়ে মূলত ঘটেছে এমনটা। স্বাভাবিকভাবে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে চুইয়ে ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তুর ভরাট হয়। কিন্তু এসব জেলার ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানিও কমে যাচ্ছে।

পাশাপাশি সাগরের লোনা পানি এসে এতে জমা হচ্ছে। যদি ক্রমাগত এমন চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের পানি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে বাংলাদেশের পানি নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

গেল পাঁচ বছরে সেটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো ভবিষ্যদ্বাণীও করা যাচ্ছে না। পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ সৃষ্টি হচ্ছে হরেক সমস্যা।

তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে মানুষের সহ্য ক্ষমতার চেয়ে ১৫ শতাংশ গুণ বেশি লবণাক্ততা রয়েছে।
অনাবৃষ্টি ও লবণাক্ততা প্রবণ এলাকায় কৃত্রিম পুকুরে বৃষ্টির পানি ধরে খাওয়ার চাহিদা মেটানো যেতে পারে বলে মনে করেন পানি বিজ্ঞানী আইনুন নিশাত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন পানির ঘাটতি প্রায় অর্ধশত কোটি লিটার। ওয়াসার ১৩ শতাংশ পানি নদী থেকে সংগ্রহ করলেও বাকিটা গভীর নলকূপের।

ভূগর্গস্থ পানির স্তর নিচে নামার এটাও অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।  তারা বলেন, এতে ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আর পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তো আছেই।

এদিকে শহরের ৭০ভাগ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। তাদের জন্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর জলাবদ্ধতার সমস্যা তো রয়েছেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জলাধারগুলো ভরাট করায় রাজধানীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে দেশের ৫৯ জেলার নলকূপের পানিতে আর্সেনিক দূষণ রয়েছে বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে। ২০১০ সালের মার্চে ‘পশ্চিমাদের দ্বারা কিভাবে বাংলাদেশ দূষিত হচ্ছে’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক তহবিল নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে নলকূপ বসানো হয়েছে। এটাও দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্যে ব্যাপকভাবে দায়ী।

দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। দূষিত পানি পান করে মানসিক বিকলাঙ্গতা সৃষ্টি হচ্ছে অনেক শিশুর।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণ শুরু হয় সত্তরের দশকে। তখন খাবার পানির মানোন্নয়ন ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহায়তায় ব্যাপকভাবে নলকূপ স্থাপন করা হয়।

এতে ধারণা করা হচ্ছিল, লোকজন নিরাপদ সুপেয় পানি পাবে। কিন্তু আর্সেনিকের কারণে তা আর হয়ে উঠে নি।
ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশের দুই কোটি ছয় লাখ মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধার আওতার বাইরে। নিরাপদ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের সুযোগ নেই- এমন দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

যেসব দেশে বেশিরভাগ পানির উৎস অনিরাপদ, সেই সব দেশে পৃথিবীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ লোক বসবাস করে জানায় সংস্থাটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top