সকল মেনু

চাঁদপুরে পুলিশে লোক নিয়োগ দেয়া হল রাজনৈতিক বিবেচনায় ও তদ্বিরের জোরে

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চাঁদপুরের বহুল আলোচিত পুলিশ কনষ্টেবল পদে লোক নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের তদ্বিরে ১শ’৮১ টি পদের মধ্যে ১শ’ ৭৫ টি পদে লোক নিয়োগ চ’ড়ান্ত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মেয়ে ও নাতনি কোটায় লোক না পাওয়া যাওয়ায় ৬ টি পদ খালি রয়ে গেছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, চাঁদপুর জেলা পুলিশের ১শ’ ৮১ জন কনষ্টেবল  পদে লোক নিয়োগের পরীক্ষা গত  ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রায় তিন হাজার প্রার্থী অংশগ্রহন করে। এর ভেতর থেকে বাছাই করে ৭শ’৯৮ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষে ২শ’ ৯৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়।  এদের ভেতর থেকে আবার চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যম ১শ’৭৫ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে।  ১শ’ ৮১ টি পদের মধ্যে মহিলা কনষ্টেবল পদে ২৭ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোট পদের ৬০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশের পোষ্য, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, উপজাতি ও এতিমদের কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি ৪০ ভাগ পদে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেবার কথা থাকলেও মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, আমলা, উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদেরই সরাসরি তদ্বিরে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চ’ড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নিয়ম অনুযায়ি ১৮১ টি পদের বিপরীতে ১০৮ জনকে কোটার ভিত্তিতে এবং ৭৩ জনকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিকে নিয়োগ দেবার কথা ছিল। সাধারণ ৭৩ টি পদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১শ’৫৫ জন। আর বাদবাকি ১০৮ টি পদের জন্য নির্বাচিত করা হয় ১শ’৪১ জনকে। পুলিশের একাধিক বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সব পদেই তদ্বিরের ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।  পুলিশের কনষ্টেবল পদে লোক নিয়োগের জন্য মন্ত্রী, এমপিদের পাশাপাশি, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশন, ইলেকশন কমিশনসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা কেউ লিখিত, কেউ মৌখিক, কেউ উভয় পদ্ধতিতেই তদ্বির ও চাপ প্রয়োগ করেন। তদ্বিরের চাপে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত টানা তিন দিন তার সরকারি এবং ব্যক্তিগত মোবাইল বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। তাতেও কোন লাভ হয়নি। সব পদেই তদ্বিরের ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, কে কত বেশি ক্ষমতাধর। কার তদ্বির না শুনলে চাকুরি ক্ষেত্রে চাঁদপুরের পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষতি বেশি হবে ?  বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, চাঁদপুর জেলা থেকে নির্বাচিত একজন উচ্চ পদস্থ জনপ্রতিনিধির তদ্বিরে ৩০ জন, আরেকজনের তদ্বিরে ২৪ জন, অন্য একজনের তদ্বিরে ১৪ জন, আরেকজনের তদ্বিরে ১৫ জন এবং অন্যজনের তদ্বিরে ২০ জন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। বাকিগুলো নেতা, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের তদ্বিরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদ্বিরেও একজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই প্রার্থীর ক্রমিক নম্বর ২৪৪ বলে জানা গেছে। তাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করার পরও তার কাগজ-পত্র সঠিক না থাকায় সেই কাগজ-পত্র সরবরাহের জন্য বলা হলে সে ক্ষুব্দ হয়ে ওই কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানায়। তার প্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তার পক্ষ হয়ে আরেকজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা গত ৪ মার্চ বিকেলে ফোন করে এ প্রতিনিধির সামনে চাঁদপুরের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শাসান।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চাঁদপুরের একজন জনপ্রতিনিধি তার এলাকার ৫৫ জনকে পুলিশে নিয়োগ দেবার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে ওই জনপ্রতিনিধি তার এলাকার প্রার্থীদের ডেকে নিজ বাড়িতে এনে একজন পুলিশ পরিদর্শক এবং একজন উপ পুলিশ পরিদর্শকের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি নিজেই ৫৫ জনকে নির্বাচিত করে তার তালিকা জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান। সেখান থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জনকে চ’ড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ এসব তদ্বিরের জন্য প্রচুর টাকাও প্রার্থীদের কাছ থেকে গ্রহন করেছেন বলে শোনা যায়।
তদ্বির এবং রাজনৈতিক চাপে এভাবে পুলিশে লোক নিয়োগ করায় ভবিষ্যতে পুলিশের কাঠামো আরো ভেঙ্গে পড়া এবং পুলিশ প্রকৃতই দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত হবার আশংকা করছেন অভিজ্ঞরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top