সকল মেনু

ঢাকা ছেড়ে গেলেন মমতা

47711নিজস্ব প্রতিবেদক :  তিন দিনের সফরে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা ছাড়লেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ সফরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন এবং সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথাও জানান মমতা।
শনিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মমতা ও তার ২১ সদস্যের সফরসঙ্গীরা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন  কর্মকর্তারা।
সফর শেষে বিমানবন্দরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা সফর ফলপ্রসূ, এই সফর দুই বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব বিষয়ে সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে।
মমতা বলেন, ‘আমাদের এ সফর অনেক দিন মনে থাকবে। এটি ইতিহাসের পাতায় থাকবে। বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে পুরো বাঙালি যেভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করল, কীভাবে তারা দিনটিকে অতিবাহিত করল, তা দেখতে পারলাম নিজ চোখে। এটি নিজ চোখে দেখা অনেক বড় ব্যাপার।’
শনিবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার আগে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে মমতা ঢাকায় আসেন।
শনিবার দুপুরে সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থ গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষণ করে শিগগিরই সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন করে বাস্তবায়ন করা হবে।’
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া ভারতের সংসদ (লোকসভা) অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়ে যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বড় বোনের মতো দেখেন।
প্রধানমন্ত্রীও তাকে ছোট বোনের মতো দেখেন। প্রধানমন্ত্রী মমতাকে ছিটমহলের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ছিটমহলে গেছেন এবং তাদের দুর্ভোগ নিজ চোখে দেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গণভবনে প্রথমে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠক হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আধা ঘণ্টা একান্তে বৈঠক করেন মমতা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করে মমতা বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি অনেক ছোট ছিলেন। কিন্তু স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলো নিয়মিত শুনতেন। বৈঠকে মমতা বলেন, বাংলাদেশ অমর একুশের অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করায় তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।
শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেল ৪টায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যে গতি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ভারতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইসিসির প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।
বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ও উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন মমতা।
এর আগে তিন দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স, কলকাতা (আইসিসি) আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সভা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার বিকেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top