সকল মেনু

আরও ৬২ জন জামায়াত অপেক্ষায়

ঢাকা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে ১৬তমটির রায় ঘোষিত হলো বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। এ রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

গঠনের ৪ বছর ১১ মাসের মাথায় এ রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

বিচারের মুখোমুখি ৮০ ব্যক্তি ও জামায়াত
এ নিয়ে দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে দেওয়া হলো মোট ১৬টি মামলার রায়, যেগুলোতে ১৭ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হলো। অন্য একজনের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়ে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে আরও ৭ জনের, বিচার শুরু হতে যাচ্ছে ৪ জনের এবং তদন্ত চলছে আরও অর্ধশতাধিক আসামির বিরুদ্ধে। তবে একজন অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে তার মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষ হয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী এ দল এবং তার সকল সহযোগী সংগঠন ও মুখপত্রের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের আলোকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।

সব মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অথবা হতে যাচ্ছেন মোট ৮০ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াত। ১৭ জনের রায় ঘোষিত হওয়ায় এবং একজন বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় বাকি ৬২ জন ও জামায়াত যুদ্ধাপরাধের শাস্তি অথবা বিচারের অপেক্ষায়।

ট্রাইব্যুনালের ১৬ রায়
দুই ট্রাইব্যুনাল ১৬ মামলায় ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ৯০ বছর ও একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন। এর মধ্যে ৮ মামলার রায়ে নয়জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ আর ৭ মামলায় সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন ১৪ জন। রায় কার্যকর হওয়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১৩ জন হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ সভাপতি পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, পলাতক জামায়াত নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও জামায়াতের সাবেক রোকন মোবারক হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দিলেও সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমকে ৯০ বছর ও বিএনপির সাবেক নেতা সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে।

ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষিত সাতটি রায়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আজহারের ফাঁসি, ২৪ নভেম্বর মোবারকের ফাঁসি, ১৩ নভেম্বর খোকন রাজাকারের ফাঁসি, ২৯ অক্টোবর নিজামীর ফাঁসি, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর ফাঁসি, ১৫ জুলাই গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল-২ ঘোষিত ৯টি মামলার মধ্যে ফাঁসির আদেশ দিয়ে বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সুবহান, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সৈয়দ কায়সার, ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলী, ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দিন, ১৭ জুলাই মুজাহিদ, ৯ মে কামারুজ্জামান ও ২১ জানুয়ারি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে এবং ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আলীম ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় দেন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল।

সাঈদীর মামলার মাধ্যমে প্রথম ট্রাইব্যুনাল এবং বাচ্চু রাজাকারের মাধ্যমে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সাঈদীর মামলাটি ছিল ট্রাইব্যুনালের ১ নম্বর মামলা। অন্যদিকে সাতটি মামলা আইন অনুসারে অথবা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে স্থানান্তরিত হয় ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ।

আপিল মামলার কার্যক্রম
ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষিত ১৬টির মধ্যে এ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এসেছে ১২টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা।

এগুলোর মধ্যে তিনটি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। এসব রায়ের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ, যা কার্যকর হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেলেও সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।

গোলাম আযম ও আলীম আপিল বিভাগে আপিল করলেও দণ্ড ভোগরত অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন তারা। ফলে তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।

আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন গত ১৪ জানুয়ারি। কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনে সেদিন শুনানি শুরু হয়নি।

সাকা চৌধুরী, নিজামী, মীর কাসেম, মোবারক, আজহার ও সৈয়দ কায়সারের ছয় আপিল মামলার শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

অন্য তিনটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি বাচ্চু রাজাকার, আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দিন এবং খোকন রাজাকার পলাতক থাকায় আপিল করেননি। সর্বশেষ রায় ঘোষিত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সুবহান তার রায় ঘোষণার একমাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

জামায়াতের বিচার শুরু আইন সংশোধন হলেই
রাজনৈতিক দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াত এবং তার সকল সহযোগী সংগঠন ও মুখপত্রের বিচারের আইনি অস্পষ্টতা দূর হচ্ছে শিগগিরই। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের (আইসিটি)’ ১৯৭৩ সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। যুদ্ধাপরাধে জড়িত সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান করে সংশোধনীর খসড়াটি চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে সংশোধনীটি উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি। মন্ত্রিপরিষদ চূড়ান্ত করার পরে সংসদ অধিবেশনে এটি পাসের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পর পরই জামায়াতের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবেন প্রসিকিউশন।

খসড়া সংশোধনীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন ও বিচার করার পর রায় ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে দায়ী করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিধান রেখে দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের শাস্তি সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। কোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল তা নিষিদ্ধ করে নিজস্ব নাম বা অন্য কোনো নামে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ রকম অন্য কোনো শাস্তির রায় দিতে পারবেন বলে বিধান করায় জামায়াতের বিচার করে অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে নিষিদ্ধ করা হবে বলে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও জামায়াত এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির (সে সময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘ) ও ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর, আলশামসের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর আলোকে তৈরি এ তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াত ও তার সব অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ ও অবলুপ্ত করার আরজি জানানো হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ করা হয়েছে, জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফালাহ আম ট্রাস্ট, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শতাব্দী প্রেস, ইসলামিক ইকনোমিকস্ ব্যুরো, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, বিপরীত উচ্চারণ, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, ফুলকুঁড়ি, ইসলামিক ইন্সটিটিউট, জামায়াতের প্রকাশনা সংস্থা আধুনিক প্রকাশনী প্রেস, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, সোনার বাংলা পত্রিকা, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, রাবেতা-ই ইসলাম, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদসহ আরো নানা সহযোগী প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের বিরুদ্ধেও। ভবিষ্যতেও যেন কেউ এ ধরনের রাজনীতির আলোকে রাজনৈতিক দল গঠন বা রাজনীতি করতে না পারেন সে রায়ও চাওয়া হয়েছে।

একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র এবং এসব অপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থতাসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে জামায়াত ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। জামায়াতের নীতিনির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামায়াত, তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী ও আলশামস বাহিনীর নানা নৃশংস অপরাধ এবং জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের যাবতীয় অপরাধের অভিযোগ তুলে আনা হয়েছে এ তদন্ত প্রতিবেদনে।

গত বছরের ২৭ মার্চ দল হিসেবে দলবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের আলোকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বাংলানিউজকে বলেন, আইনটি সংশোধিত হওয়ার পর ফরমাল চার্জ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।

কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর
স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে প্রথমবারের মতো এক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে।

ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রায় তিন বছর ৯ মাস পর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে। একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ বলে পরিচিত দেশের এই অন্যতম শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় ও সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ৬টির মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল-২ এর ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে চূড়ান্ত এ রায় প্রদান করেন সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর হয় কাদের মোল্লার ফাঁসি।

কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহাল
আপিল বিভাগের সর্বশেষ চূড়ান্ত রায়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। তবে ট্রাইব্যুনাল তাকে দুই হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসি দিলেও একটিতে বহাল রেখে ও একটি অভিযোগের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে ৭টির মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও আপিল বিভাগে প্রমাণিত হয়নি একটি, যেটিতে খালাস পেয়েছেন কামারুজ্জামান। প্রমাণিত বাকি দু’টির সাজা ও প্রমাণিত না হওয়া দু’টি অভিযোগের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে একমত আপিল বিভাগ।

২০১৩ সালের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এ ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কামারুজ্জামান। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

সাঈদীর সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে আপিল বিভাগের রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ৫টি অভিযোগ। এর মধ্যে ২টিতে আমৃত্যু, একটিতে যাবজ্জীবন, একটিতে ১২ বছর ও একটিতে ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে সাঈদীকে। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত তিনটি অভিযোগ আপিল বিভাগে প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই রায়ে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে দু’টি অপরাধে সাঈদীকে বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত অন্য ৬টি অভিযোগে আলাদাভাবে কোনো সাজা দেননি ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দু’টি আপিল দাখিল করলে শুনানি শেষে সাজা কমিয়ে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

মৃত্যুতে অকার্যকর গোলাম আযম-আলীমের আপিল
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম মারা যাওয়ায় তার আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই দেওয়া ট্রাইব্যুনাল-১ এর ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষই। রাষ্ট্রপক্ষ একই সঙ্গে আবেদন করেন জামায়াত নিষিদ্ধেরও।

তবে শুনানি শুরুর আগেই দণ্ড ভোগরত অবস্থায় গত বছরের ২৩ অক্টোবর মারা গেছেন দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। ফলে এ আপিল মামলা অকার্যকর ঘোষণা করেন আদালত।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যার ৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও আলীমের শারীরিক-মানসিক অক্ষমতার কারণে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আলীম আপিল করলেও আপিলে যাননি রাষ্ট্রপক্ষ। দণ্ড ভোগরত অবস্থায় গত বছরের ৩০ আগস্ট মারা যান এই যুদ্ধাপরাধী। এ কারণে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

মারা যাওয়ায় নিষ্পত্তি ইউসুফের মামলার
বিচার চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২।

ইউসুফের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মামলার শেষ ধাপ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যাওয়ায় ওই দিন ট্রাইব্যুনাল এ মামলা নিষ্পত্তির আদেশ দেন।

ইউসুফকে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ৪ ধরনের ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ডা. মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সকল সহযোগী বাহিনীকে নেতৃত্ব দানের কারণে তিনি অভিযুক্ত হন সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়েও।

রায়ের অপেক্ষা আরও একজনের
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষাধীন(সিএভি) রয়েছে। ৩৬ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ২শ’ জনকে ধর্মান্তরকরণ এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে ৫শ’ ৫৭টি বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগে গত বছরের ১৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার শান্তি (পিস)কমিটির চেয়ারম্যান জব্বার।

বিচার চলছে সাতজনের
দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে ৪ মামলায় আরও ৭ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।

এর মধ্যে বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার এবং দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে একটি মামলার বিচার চলছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের ২২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে এবং আগামী ১ মার্চ ২৩তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর এ তিনজন অভিযুক্ত হয়েছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরের ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধে।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ১৭ জন সাক্ষী এবং বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ১৮তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। গত বছরের ১১ নভেম্বর হাসান আলীকে ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ১২৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ১২ জনকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ। পলাতক হাসান আলীর পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ৪ জন সাক্ষী এবং আগামী ১৬ মার্চ ৫ম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এ দু’জনকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর একটি মামলায় তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এর মধ্যে রয়েছে ২৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মো. ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ৭ জন সাক্ষী এবং আগামী ১ মার্চ ৮ম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫টি ট্রাইব্যুনাল-২ এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর। এর মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

বিচার শুরু হচ্ছে ৪ জনের
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আরও চারজনের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা নেত্রকোনার সাবেক দুই মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের একটি মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে আগামী ২ মার্চ অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। তাহের-ননীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ মার্চ তদন্তের চূড়ান্ত বা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। তবে তদন্ত সংস্থা তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত বছরের ২৬ নভেম্বর দিলেও আরও অধিক তদন্তের জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে ১২ জনকে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল সে সময়। তবে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা বলছেন, পুনর্তদন্তে আরও নতুন নতুন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর গ্রেফতার হয়ে শামসুদ্দিন কারাগারে থাকলেও এখনও পলাতক নাসিরউদ্দিন।

তদন্তাধীন অর্ধশতাধিক
দেশের সাতটি বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা এসেছে পাঁচশ’ ৮৫টি। এসব মামলার আসামির সংখ্যা তিন হাজার দুইশ’ ৩০ জন।

মামলাগুলোর মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ মামলার অর্ধশতাধিক আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তের বিষয়টি জানাজানি হলে আসামি পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকের নাম ও পরিচয় জানাননি তদন্ত সংস্থা।

তদন্তাধীন মামলাগুলোর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা যশোরের জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ১৫ জন একসঙ্গে একটি মামলার আসামি। বাকিরা হচ্ছেন- যশোরের কেশবপুর উপজেলার রাজাকার কমান্ডার আমিন উদ্দিন, আব্দুল বারী মোড়ল, আব্দুল খালেক, হাসেম আলী, আনছার মোল্লা, মোকছেদ সরদার, কেসমত আলী, আনছার ফকির, আব্দুল বারী ওদুদী, হোসেন আলী, আকবর আলী, আব্দুল আজিজ মোড়ল, আব্দুল গণি শেখ ও ইব্রাহিম কারিগর। গত বছরের ২৯ নভেম্বর রাজধানী থেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন প্রধান আসামি সাখাওয়াত হোসেন।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা দুই সহোদর হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া অন্য একটি মামলার আসামি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২ এ।

অন্য ১৫ মামলায় একজন করে ১৫ আসামি রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী, কক্সবাজারের মহসীন হায়দার চৌধুরী, কক্সবাজারের সালামত খান উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর ওরফে ‘পঁচাইয়া রাজাকার’, নেত্রকোনার আব্দুল খালেক তালুকদার, ময়মনসিংহের মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, ময়মনসিংহের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, গাইবান্ধার আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, খুলনার মোঃ আমজাদ আলী মিনা, রাজশাহীর মোঃ লাহার আলী শাহ, পটুয়াখালীর রুস্তম আলী সিকদার, আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা জামালপুরের আশরাফ হোসেন, নীলফামারীর ইজাহার আহম্মেদ, মোঃ নাসির, মনির আলী ও লিয়াকত আলী।

বাকি ৩ মামলার আসামি আরও ৯ জন। এসব মামলার মধ্যে একটি মামলার চার আসামি হলেন মৌলভীবাজার জেলার আলাউদ্দিন চৌধুরী, আকমল আলী, লাল মিয়া এবং মো. মতিন মিয়া। অন্য দুই মামলার আসামিদের জেলার নাম প্রকাশ করছেন না প্রসিকিউশন। তাদের মধ্যে আলবদর কমান্ডার শামসুল হক, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী ও রাজাকার কমান্ডার ইউনুছ মৌলভী একটি এবং রাজাকার আজিজ (হাবুল) ও রাজাকার আব্দুল মতিন নামক দুই সহোদর একটি মামলার আসামি।

এছাড়া তদন্ত সংস্থা ছাড়া পাওয়া ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ এগিয়ে রাখতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। অন্য মামলার তদন্তের সময় পাওয়া যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রমাণপত্রও। সেগুলোও সংরক্ষণ করছেন তদন্ত সংস্থা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছাড়া পাওয়া ১১ হাজার দালাল এবং পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নতুন করে তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। দু’টি বিষয়ই নির্ভর করছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপরে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তারা অবশ্যই এগোবেন।

তিনি জানান, অন্য মামলার তদন্তের সময় পাওয়া যাচ্ছে ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে কাগজপত্র। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো খতিয়ে দেখে রিভিউ করতে হবে। কে কে জীবিত আছেন, কে কে মারা গেছেন- এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিয়ে পুনর্তদন্ত করতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন তারা।

তিনি জানান, পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রমাণপত্রও। সেগুলোও সংরক্ষণ করছেন তদন্ত সংস্থা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top