নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে চলমান নাশকতা ঠেকাতে আরও কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৫ জানুয়ারির পর তুলনামূলকভাবে নাশকতা ও সহিংসতা বেশি হচ্ছে-দেশের এমন ২৫টি জেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এসব জেলার ৯৯৬ জন বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর তালিকা এখন পুলিশ-র্যাবের কাছে রয়েছে। ওই তালিকায় নাম আছে ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের অল্পকিছু নেতাকর্মীরও। তালিকাভুক্ত নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান।
পুলিশের দাবি, তালিকাভুক্ত নেতাকর্মীদের অধিকাংশই আন্দোলনের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। তাদের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে পেট্রোল বোমা ও ককটেল ছুড়ে একের পর এক নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কেউ কেউ নাশকতার পেছনে অর্থ সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ আছে। তবে তালিকাভুক্ত নেতাকর্মীদের কারও মোবাইল ফোন বন্ধ ও কেউ আবার কল রিসিভ না করায় অভিযোগের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, বিভিন্ন জেলায় যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও ইন্ধনদাতা তাদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। যেখানে তুলনামূলকভাবে নাশকতা একটু বেশি ঘটছে সেখানে নজরদারি বাড়ানো ও অভিযান জোরদার করা হবে। জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নাশকতাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন- বগুড়া, গাইবান্ধা ও নোয়াখালীতে বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি জেলায় পুলিশ-র্যাবকে সহায়তা করতে বিজিবি টহল দিচ্ছে। সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।
নাশকতাকারীদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেই নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে সাতজনকে পুড়িয়ে হত্যার পর ১৪ দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক নাসিম এ ঘোষণা দেন। এছাড়া কুমিল্লায় সাতজন পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ‘আইনি প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
জননিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সামান্যতম ছাড় দিতে নারাজ। যে কোনো মূল্যে তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায়। জানুয়ারির পর চলমান নাশকতায় সারাদেশে ৫৪ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৩৫ জন। ককটেল ও পেট্রোল বোমাবাজদের প্রতিরোধে শিগগির বিশেষ অভিযান আরও কয়েকটি জেলায় জোরদার করা হবে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত এক মাসে দেশের ২৫টি জেলায় নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা বেশি হয়েছে। এসব জেলায় পেট্রোল বোমা ছুড়ে সাধারণ মানুষকে হত্যার পাশাপাশি রেলে একাধিক দফায় হামলা করা হয়। সহিংসতাপ্রবণ এলাকার মধ্যে নেত্রকোনা জেলায় গ্রেফতারের তালিকায় আছেন ১২৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২২, গাজীপুরে ৫১, রাজশাহীতে ৮৮, বগুড়ায় ২২, জয়পুরহাটে ৩৫, সিরাজগঞ্জে ৪৬, যশোরে ৪০, বরিশালে ৩৩, সিলেটে ২৫, রংপুরে ১৭, দিনাজপুরে ৭, গাইবান্ধায় ১৮, চট্টগ্রামে ৫৬, চাঁদপুরে ১০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০, কুমিল্লায় ২২, নোয়াখালীতে ৬৪, ফেনীতে ২০, লক্ষ্মীপুরে ৩৬, ময়মনসিংহে ৪৫, নরসিংদীতে ৩, মৌলভীবাজারে ২৫, নাটোরে ২০ ও ঢাকায় ৩২ জন।
সম্প্রতি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের নামে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে রাস্তা বন্ধ করা, হাতবোমা, কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় হামলার চেষ্টা করছে একটি চক্র। এমনকি নিজ দলের জনপ্রিয় নেতাকে হত্যা করে কৌশলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে। চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ট্রেনের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলা, পেট্রোল বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে খুন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত জেলায় নাশকতার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানও চিহ্নিত করা হয়। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তালিকাভুক্তদের গ্রেফতারে বিভিন্ন এলাকায় র্যাব-পুলিশের অভিযান জোরদারের কথা বলা হয়। গ্রেফতার আতঙ্কে তাদের অনেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।