সকল মেনু

আমি যেন চেয়ারের সম্মান রক্ষা করতে পারি – প্রধান বিচারপতি

  এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) বলেছেন, জীবনে আমি কোন দিন পদের জন্য লালায়িত ছিলাম না। শপথ ছিল মনে এ ভুবনের শীর্ষে পৌঁছবো একদিন। সততা ও আদর্শ্য থেকে বিচ্ছুতি হইনি কখনো। কর্তব্য পালনে কোন প্রতিকুলতা বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি বলেই আজ এ আসনে আসিন হয়েছি। আপনারা আমার জন্য সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন, আমি যে চেয়ার অলংকিত করেছি সেই চেয়ারের সম্মান যেন রক্ষা করতে পারি। তিনি বলেন, দেশের কৃষক শিক্ষক সবাই কর্মক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে থাকেন। লক্ষ্য উদ্দেশ্যে অটুট থেকে পথ চললে একদিন মুল লক্ষ্যে পৌছা যায়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, কোন পদে আসিন হয়ে তোমাদের বাবা-মা, ভাই-বোনকে ভুলে গিয়ে কষ্ট দিওনা। এ সময় তিনি তাহার বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। প্রায় দু’মিনিট নিরবতা থাকার পর প্রধান বিচারপতি বলেন বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে কেউ কোন কিছু আদায় করতে না পারে, সে দিকে দৃষ্টি রাখার জন্য উপস্থিত প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার প্রতি প্রধান বিচারপতি আহবান জানান। তিনি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের রানীরবাজারস্থ দয়াময় সিংহ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশের বৃহত্তর মণিপুরী সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত অভ্যর্থনা সভায় বক্তব্যকালে উপরোক্ত কথা গুলো বলেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেয়ার পর শুক্রবার এস কে সিনহার প্রথম সফর ছিল কমলগঞ্জে। বাংলাদেশের বৃহত্তর মণিপুরী সমাজ (বিষ্ণুপ্রিয়া, মৈতৈ ও পাঙাল) লোকজনসহ উপজেলাবাসী শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের পর রানীর বাজার দয়াময় সিংহ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিকাল সাড়ে ৩টায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় অভ্যর্থনা প্রদান করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজ এলাকায় আগমন উপলক্ষে বেশ কয়েকটি তোরণ নির্ম্মাণসহ সকাল পৌনে ১০ কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্তরে কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুষ্প স্তবক দিয়ে বরণ করে নেন উপজেলাবাসী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সহধর্মীনি সুষমা সিনহাকে সঙ্গে নিয়ে তিলপুর গ্রামের অংশে পৌছলে তাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানান মণিপুরী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষসহ কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষজন। সেখান থেকে পায়ে হেটে প্রধান বিচারপতি নিজ বাসভবনে পৌছলে পুলিশের একটি চৌকোশ দল তাকে সশ্রদ্ধ সালাম জানায়। রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে নারী-পুরুষরা ফুল ছিটিয়ে তাঁকে বরণ করে নিজ বাসভবন “আশীর্ব্বাদ” গেট পর্যন্ত নিয়ে যান।  এরপর সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অভ্যর্থনা মঞ্চে মণিপুরী পালা কীর্ত্তণ অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বিষ্ণুপ্রিয়া, মৈতৈ ও পাঙাল সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে  ডা: নন্দ কিশোর সিনহার সভাপতিত্বে অভ্যর্থিত ব্যক্তি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিনহা, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সহধর্মিনী সুষমা সিনহা, মৌলভীবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাঠোয়ারী, জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্যাট মমতাজ বেগম, পুলিশ সুপার মো: তোফায়েল আহমদ, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান। সাংবাদিক সংগ্রাম সিংহ, সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্যাট শ্যাম কান্ত সিন্হা ও ভারতের দেবশ্রী সিনহার যৌথ সঞ্চালনায় অভ্যর্থনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের সুজিতা সিনহা, নিখিল কুমার সিংহ, রাজকান্ত সিংহ, শশী কুমার সিংহ, প্রতাপ চন্দ্র সিংহ, নির্মল কুমার সিংহ, মৈথৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের সৌদামিনী শর্ম্মা ও পাঙাল (মুসলিম) মণিপুরী সম্প্রদায়ের এড: এ এস এস আজাদুর রহমান ও বিলকিস বেগম।অনুষ্ঠান স্থলে অভ্যর্থিত প্রধান বিচারপতি আগমনের মুহুর্তে প্রায় সাড়ে ৪শত বছর পূর্বে রাজ পরিবারে বাজানো ৪ মণ ওজনের রাজঘন্টা বাজানো হয়। এর পর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর পবিত্র কুরআন তেলওয়াত ও গীতা পাঠ শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বজিত সিংহ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্বপন কুমার সিংহ। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন সুনামগঞ্জ জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্যাট শ্যাম কান্ত সিংহ। প্রধান বিচারপতির অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ভারত ছাড়াও মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমগণও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মণিপুরী সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক নর-নারী, তরুণ-তরূণী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠিত অভ্যর্থনা শেষে মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি ও মণিপুরী থিয়েটারের পরিবেশনায় সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top