সকল মেনু

দুর্নীতির দায়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

সারক্ষিরাসাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজের অপসারণ ও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ছাত্রমেত্রী সাতক্ষীরা জেলা শাখা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে এই কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন চলাকালে জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বিশ্বনাথ কয়ালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ফাহিমুল হক কিসলু, জেলা যুবমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক মফিজুল হক জাহাঙ্গীর, জেলা ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ মন্ডল, ছাত্রনেতা অম্বিক মন্ডল প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে প্রতিবছর সেশন চার্জের নামে ২১ টি পৃথক খাতে দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করে তা আত্মসাৎ করছেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: লিয়াকত পারভেজ। এছাড়া কলেজের উন্নয়ন ফান্ডের কয়েক কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। বক্তারা প্রফেসর লিয়াকত পারভেজকে স্বাধীনতাবিরোধী, দুশ্চরিত্র ও চরম দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তাকে অবিলম্বে অপসারণ ও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল সাতক্ষীরা শহর প্রদক্ষিণ করে তারা।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে প্রতিবছর প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে সেশন চার্জের নামে কলেজ প্রশাসন ২১টি খাতে ১ হাজার ১৫০ টাকা করে আদায় করছে। এর মধ্যে (প্রত্যেক ছাত্রের কাছ থেকে প্রতিবছর) ছাত্র সংসদ ফিস্ বাবদ ২৫ টাকা,ধর্মীয় তহবিল ফিস বাবদ ৩০ টাকা,সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ফিস বাবদ ৫০ টাকা, বহি:ক্রীড়া ফিস বাবদ ৫০ টাকা,অভ্যন্তরিন ক্রীড়া ফিস বাবদ ৪০ টাকা,রোভার ফিস ২৫ টাকা, বিএনসিসি ফিস ৪০ টাকা,রেড়ক্রিসেন্ট ফিস ১০ টাকা,উন্নয়ন তহবিল ফিস ২০০ টাকা, মসজিদ ফিস ৫০ টাকা,পরিবহন ফিস ৩০ টাকা,কম্পিউটার ল্যাব ফিস ৩০ টাকা,দরিদ্র তহবিল ফিস ২০ টাকা,চিকিৎসা ফিস ২০ টাকা,নিরাপত্তা ও নৈশ প্রহরী ফিস ১৫ টাকা,প্রগতি পত্র ফিস ১০ টাকা,পাঠ পরিকল্পনা ফিস ১০ টাকা,কর্মচারী অত্যাবশ্যকীয় ফিস বাবদ ৪০০ টাকা, অধিভূক্ত ফিস ৪০ টাকা এবং কর্মচারী কল্যান তহবিল ফিস বাবদ ২০ টাকা ( প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ২১ খাতে সর্বমোট ১১৫০ টাকা ) করে আদায় করা হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, উন্নয়ন তহবিলের নামে বছরে আদায় করা হয় প্রায় ২৮ লাখ টাকা, অথচ এখাতে দৃশ্যত কোন খরচ করা হয়না। কর্মচারী অত্যাবশ্যকীয় ফিস বাবদ বছরে আদায় করা হয় ৫৬ লাখ টাকা সেখানে খচর করা হয় সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা। কলেজে গত এক যুগ ধরে কোন ছাত্র সংসদ নেই অথচ প্রতিবছর এখাতে আদায় করা হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ধর্মীয় তহবিলের নামে দু’দফায় আদায় করা হয় প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে প্রতিবছর খরচ হয় সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা অথচ আদায় করা হয় ৭ লাখ টাকা,অভ্যন্তরিন ক্রীড়া খাতে বছরে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সেখানে আদায় করা হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বহি:ক্রীড়া ফিস খাতে আদায় করা হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা সেখানে বছরে খরচ হয় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। মসজিদ ফিস বাবদ আদায় করা হয় বছরে ৭ লাখ টাকা অথচ এখাতে দৃশ্যত কোন খরচ করা হয়না। কলেজের নিজস্ব কোন পরিবহন নেই অথচ দু’দফায় এখাতে আদায় করা হয় প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।কম্পিউটার ল্যাবে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই অথচ এখাতে প্রতিবছর আদায় করা হয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।পাঠ পরিকল্পনা খাতে কোন টাকাই খরচ করা হয়না অথচ এখাতে বছরে আদায় করা হয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। অধিভূক্ত ফিস দ্’ুদফা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। রেডক্রিসেন্ট ফিস বাবদ আদায় করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা অথচ এখাতে কোন খরচ করা হয়না। রোভার ফিস এক বার নেয়ার কথা,সেখানে দু’দফায় আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। কলেজের কোন ম্যাগাজিন বের হয়না অথচ এখাতে বছরে আদায় করা হয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। কলেজে ১৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে প্রত্যেকের কাছ থেকে সেশন চার্জের নামে সাড়ে ১১’শ টাকা করে আদায় করা হলে বছরে সেশন চার্জের  নামে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আদায়কৃত এসব টাকার সিংহ ভাগই  কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজসহ কলেজ প্রশাসন লোটাপ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এসব অভিযোগ বিষয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর গত সোমবার কলেজ অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ কলেজের জামায়াত-শিবির পন্থী নেতা-কর্মীদের দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের পক্ষে মিছিল ও সমাবেশ করায়। এ সময় তারা কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র মৈত্রির একাধিক ব্যানার,ফেসটুন ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রমৈত্রী সোমবার বিকালে অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজের অপসারন এবং তার দুর্র্নীতি দতন্তের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। একই দাবিতে তারা মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।পরিকল্পিত ভাবে একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top