সকল মেনু

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে অবাধে খাল দখল :সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা

চাঁদপুরশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর প্রতিনিধি : জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। যে যেভাবে পারছে দখল চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও আশেপাশের এলাকায় এই চিত্র দেখা গেছে। খাল দখলের এই অবৈধ প্রক্রিয়ার সাথে সব রাজনৈতিক দলের লোকজনই জড়িত।
উপজেলার গল্লাক বাজার, আষ্টা বাজার, খাজুরিয়া বাজার, আমিরা বাজার, রূপসা বাজার, চান্দ্রা বাজার, গোয়ালভাওড় বাজার, হনিদুর্গাপুর, ফিরোজপুর বাজার এবং উপজেলা সদরের বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকাভুক্ত সেচ খালগুলোর ওপর কেউ দোকানপাট, মসজিদ, দলীয় অফিস, বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
গল্লাক বাজার সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর শাখা (গল্লাক-রামগঞ্জ খাল)-এর ওপর বহুতল বিশিষ্ট ইমারত রয়েছে। আষ্টা-মহামায়া বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া খালের উপর প্রায় দু শতাধিক দোকানপাট ছাড়াও যুবলীগের অফিসের নামে সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে। খাজুরিয়া পূর্ববাজারে গুপ্টি সড়কে খালের উপর দোকানপাট, আমিরা বাজারে খালের পাশের জমি জেলা পরিষদ থেকে নামকাওয়াস্তে এক বছরের লিজ নিয়ে খালের অর্ধেক অংশ জুড়ে করা হয়েছে কয়েকশত দোকানপাট ও অফিস নির্মাণ । এখানে ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি ওয়ার্ডের সুসজ্জিত কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পাঠাগার রয়েছে। রূপসা দক্ষিণ বাজারে খালের উপর রয়েছে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চান্দ্রা বাজারের চান্দ্রা-দেইচর খালের উপর রয়েছে কয়েকশত পাকা স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফরিদগঞ্জ পৌর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের খালের অর্ধাংশ জুড়ে রয়েছে একটি বসত ঘর, আরেক পাশে একটি মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। কালিরবাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের উভয় পাড় দখল করে গড়ে উঠছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হর্ণি দুর্গাপুর এলাকায় তিনটি ইউনিয়নের সংযোগ খাল দখল করে তৈরি হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফিরোজপুর বাজারের উপর দিয়ে যাওয়া সেচ খালের উপর একাধিক পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গোয়ালভাওড় বাজার এলাকায় খালের উপর রয়েছে দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খালের উপর গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে দখল বাণিজ্য। এ নিয়ে সেখানে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে রক্তপাতের ঘটনাও ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েও ভাগ-বাঁটোয়ারায় সমঝোতা হওয়ায় তা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব স্থাপনা নির্মাণকালে স্থানীয় ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ প্রথমে আপত্তি করলেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে চুপসে যায়। তাছাড়া খালের পাড় সংলগ্ন জেলা পরিষদের জমি এক সনা লিজ নিয়ে তারা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ জেনেও না জানার ভান করে থাকে।
এদিকে সেচ খাল দখল নিয়ে সিআইপির পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে নির্বিঘেœ পানি চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার প্রতিটি স্থানে সেচ খালের মাধ্যমে পৌঁছানোর কথা থাকলেও এসব খাল দখলের কারণে তা বিঘিœত হচ্ছে। এক স্থানে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকলেও অপর স্থানে হাঁটু পানিও থাকে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সেচ খালগুলোই ভরসা। এভাবে স্থানে স্থানে খাল দখল হয়ে গেলে এক সময় এগুলো ভরাট হয়ে যাবে। ফলে সেচ প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top