সকল মেনু

ভোলার ইটভাটাগুলোতে চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব

এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা প্রতিনিধি : ভোলায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে ওঠছে ইটেরভাটা। আবাসিক এলাকা ও ফসলী জমিতে ইটেরভাটা তৈরী হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে। মৌসূমের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে এসব ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপক‚লীয় অঞ্চলের বনায়ন। হুমকীর মুখে পড়ছে পরিবেশ। চারদিকে সবুজ ধানের মাঠ। ঘন বনাঞ্চল। সাধারণ মানুষের বসবাস। এমন ফসলী জমি আর আবাসিক এলাকায় ইটেরভাটা গড়ে তোলা একেবারেই বে-আইনী। ইটভাটার নীতিমালা বিরোধী। তারপরও ভোলা জেলার বিভিন্ন গ্রামের এমনই এলাকায় নিয়ম নীতিকে উপক্ষো করে এভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এই অনিয়মের শিকার হয়ে স্থানীয় জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার টন জ্বালানী কাঠ।
ভোলা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৭৪টি ইটভাটা রয়েছে। তবে কোনটারই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। কারো লাইসেন্স আছে তো পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। ছাড়পত্র আছে তো নির্ধারিত মাপের চিমনী নেই। চিমনী থাকলেও জ্বালানী হিসেবে কয়লা না পুড়ে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অর্থাৎ ভোলার কোন ইটভাটাই নিয়মনীতি মেনে চলছে না। সরকারের মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এসব ইটভাটার মালিক হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের টিকিটাও ছুঁতে পারছে না। বরং প্রশাসন ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা গ্রহণের বিনিময়ে দেখেও না দেখার ভান করছে বলে অভিযোগ রয়েছে সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে।
এ সম্পর্কে ক্যাব ভোলা’র সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, আমরা বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। আমাদের কথা কেউ শোনে না। প্রশাসন যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্য ব্রিকফিল্ড মালিকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা নেয়, সেখানে তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিভাবে।
ফলে বেপরোয়া হয়ে পড়ছে ইটভাটাগুলোর মালিকরা। প্রতিদিন প্রকাশ্যে জ্বালানী হিসাবে হাজার হাজার টন কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছেন তারা। সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী গ্রামের মায়ের দোয়া ব্রিকস, চরসামাইয়া গ্রামের ফ্রেন্ডস্ ব্রিকস, এডভান্স অটো ব্রিকস এবং অন্যান্য ব্রিকফিল্ডে গিয়ে দেখা গেছে কাঠ পোড়ানোর এই মহোৎসবের চিত্র। শুধু তাই নয় বেশীরভাগ ইটভাটাগুলোতে চলছে এভাবে কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগীতা। এভাবে কাঠ পোড়ানোর কথা কেউ কেউ স্বীকার করলেও অনেকেই তা স্বীকার করতে নারাজ।
মায়ের দোয়া ব্রিকফিল্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে কোন কাঠ পোড়ানো হয় না। স্তুপকৃত কাঠ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কাঠ দিয়া আমরা ইট পুড়ি না, ভাত রাইনধ্যা খাই। অন্য আরেক জনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয় সর্ম্পকে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।
তবে সেখানকার ইটভাটার শ্রমিকরাই কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি ক্যামেড়ার সামনে অকপটে স্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, এই কাঠ আনছে ইট পোড়ানের লইগ্যা। এই কাঠ দিয়াই তো ইট পোড়ে। সব ব্রিকফিল্ড-ই তো এভাবে ইট পুইড়্যা ব্যবসা করতাছে।
ইটেরভাটা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক কৃষক বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা হওয়ায় আমাগো ফসল নষ্ট হইয়্যা যায়। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছি। এইবার মনেহয় কোন ফসলই ঘরে তুলতে পারমু না। এইভাবে কেমনে ব্রিকফিল্ড অয় তা বুঝিনা। সরকার কি বিষয়টা দেখবো না। আমাগো দিকে তাকাইবো না ?
ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা কাঠ পোড়ানো বন্ধে তার প্রশাসনের গৃহীত অবান্তর সব পদক্ষেপের কথা বলছেন বেশ জোড়ালো কণ্ঠে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। ম্যাজিষ্ট্রেট নামিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কাউকে কাঠ পুড়তে দিচ্ছি না। কোন ব্রিকফিল্ডে যাতে কাঠ পোড়ানো না হয়, সে ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
স্থানীয় প্রশাসনের এমন দাবী সত্য হোক। ভোলার যত্রতত্র গড়ে উঠা ইটভাটাগুলোর কাঠ পোড়ানো বন্ধ করে, প্রশাসন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন ইটভাটাগুলোর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top