সকল মেনু

ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বদলী আতঙ্ক এক বছরে লোকসান ২২ কোটি

 এস.আই মল্লিক, ঝিনাইদহ: জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার সহ কয়েকজনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখস্ত করা নিয়ে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে । লাইনম্যানেরা সমিতি বোর্ডের কাছে চাকরির নিশ্চয়তা , হয়রানীমুলক বদলী বন্ধ করা সহ ১৪ দফা দাবী পেশ করেছেন । একই সাথে জিএম সহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ,গোপন টেন্ডার, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে ।  এ অবস্থায়  প্রতিষ্ঠানটির  প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে । অভিযোগ করা হয়েছে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন ) নাসরীন সুলতানা , এনফোর্সমেন্ট কো-অডিনেটর আসাদুল ইসলাম , সার্ভেয়ার রজব আলী ও  হাবিবুর রহমানকে হয়রানীমুলক অন্যত্র বদলী করা হয়েছে । সাময়িক ভাবে বরখস্ত করা হয়েছে জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল মোমিন ও লাইনম্যান হাসান সহ কয়েকজনকে । চাকরির নিরাপত্তা না থাকায় ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এ,জি,এম (অর্থ ) মোঃ তৌফিকুর রহমান । চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের প্রথম দিনেই চাকরি চুত্য করা হয়েছে সহকারী ষ্টেকার মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে  । তিনি এখন পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে । আদালত সুত্র জানায় হয়ররানীমুলক বদলীর আদেশের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এনফোর্সমেন্ট কো-অডিনেটর আসাদুল ইসলাম স্থানীয় একটি দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন । যার মামলা নং- দেওয়ানী ২৬৬/১৪ । এ মামলায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যন সহ ৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে ।  আদালত  বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন । এ মামলার বাদি জানান, জিএম ও তার চিহ্নিত কতিপয় সহযোগির বেআইনী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করায় হয়রানী মুলক বদলী করা হয়েছে তাকে । পদস্থদের নিপিড়ন নির্যাতন বন্ধ করা সহ চাকরির নিরাপত্তা চান এই কর্মকর্তা । বিশেষ একটি সুত্র জানায় চলতি মাসের ৮ তারিখ রাতে সদর উপজেলার রাধাকান্ত পুর গ্রামে এইচটি ও এলটি লাইনে আগুন ধরে যায় এবং তার ছিড়ে মাটিতে পড়ে বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন । এ সময় আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে । ওই দিন রাত ৯টার দিকে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এম,এস) মোজাম্মেল হককে সঙ্গে নিয়ে জিএম যুবরাজ চন্দ্র পাল জীপে চড়ে ঘটনাস্থলে  যান । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দুরে হলিধানী ইউনিয়নের নাটাবাড়িয়া গ্রামের ভাদুর বাড়ির কাছে যাওয়া মাত্র গ্রামবাসিরা পুরাতন ও নিন্মমানের তার দিয়ে লাইন নির্মান করার অভিযোগ করেন ।  এ সময় জিএম গ্রামবাসিদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তর্ক বির্তকে জড়িয়ে পড়েন । এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা  বাঁশ, কাঠ ,লাঠি নিয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে । এ ঘটনার পর থেকে জিএম নিজ ক্ষমতা বলে সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর , দারিয়াপুর , নাটবাড়িয়া , লেবুতলা গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় । শাস্তি হিসেবে গত ১০ দিন ধরে ওই এলাকার অন্তত ৬/৭ শত গ্রাহককে বিদ্যুৎ বন্দ রাখার পর গতকাল লাইন চালু করে দেয়া হয়। এদিকে এ ঘটনার ৮ দিন পর জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল মোমিনকে চাকরি থেকে সাময়িক ভাবে বরখস্ত করা হয় । গত রোববার সকালে এ  খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারন কর্মচারিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে জিএম এর কক্ষ ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানায় । বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে । পরিস্থিতি আচঁ করতে পেরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বোর্ডের নেতৃবৃন্দ আন্দোলনকারীদের সাথে কয়েক দফায় ব্ঠৈক করেন । ওই বৈঠকে সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল পান্নার কাছে সাধারন কর্মচারিরা চাকরির নিশ্চয়তা ,হয়রানীমুলক বদলী বন্ধ করা সহ ১৪ দফা দাবী পেশ করেন ।  দাবী পুরনের জন্য সমিতির নেতৃবৃন্দ ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছেন । নির্ভরযোগ্য  একটি সুত্র জানায় ওই দিন সমিতির এক জরুরী সভা ডাকা হয়েছে এবং ঢাকা থেকে একটি শক্তিশালী তদন্তদল পাঠানো হবে ।
ইতিমধ্যে অজোপাডিকোর ঘুষের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অভিযোগ করা হয়েছে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে কর্মচারিদের পোষাক ক্রয় ,পুরাতন লোহা বিক্রি, নতুন বিদ্যুৎ লাইন নিমার্ন ,ট্রান্সফরমার মেরামত সহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি করা হয়েছে । গ্রাহকরা অভিযোগ করেন স্থানীয় অফিসের কো-অর্ডিনেটর (পিইউসি) মোঃ বজলুর রহমানকে ঘুষ না দিলে নতুন সংযোগ পাওয়া যায়না । ১৯৯৯ সাল থেকে কর্মরত এ কর্মকর্তা ঘুষের টাকায় বিপুল ধন সম্পদের মালিক হয়েছে ।
জিএম যুবরাজ চন্দ্র পাল সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন , আইনের প্রতি বেশী শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে । তিনি দাবী করেন সমিতির অর্থিক অবস্থা করুন হওয়ার পরেও নতুন নতুন লাইন নির্মাণ সহ  গ্রামে গ্রামে সংযোগ দেয়া হচ্ছে ।
ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহ-সভাপতি (ছায়া সভাপতি হিসেবে পরিচিত) মীর নাসির উদ্দিন জানান বর্তমান অবস্থায় সমিতি পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে । তিনি আরো জানান ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডেপুটি ডাইরেক্টর যশোর মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, গ্রাহক হয়রানী ,খাম্বা বানিজ্য সহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করার জন্য মাঠে কাজ করছেন তিনি । জিএম এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত সীমাহীন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সাধারন কর্মকর্তা কর্মচারি হয়রানীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন । তার ভাষায় এখন পর্যন্ত কেও প্রমাণ হাজির করেনি ।
প্রসঙ্গত এ বছরের ২১ মে লাইনম্যানেরা পল্লী বিদ্যুতের ঝিনাইদহ জিএম অফিস ঘেরাও করে বিক্ষাভ সমাবেশ সহ অর্নিদিষ্ট কালের জন্য কর্ম বিরতি শুরু করেন । নাম মাত্র একটি তদন্ত কমিটি গঠন  করে ঘটনা ধামাচ্পাা দেয়া  হয় । এবারও তদন্ত করার নামে সাধারন কর্মচারীরা হয়রানীর শিকার হতে পারে মর্মে আশংকা প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা ।
সংশি¬ষ্ট সুত্র জানায় ১৯৯৬ সালের ৯ জানুয়ারী ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত জেলার ৬ টি উপজেলার ৯১১ টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে । বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৪৮০।  ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আয় করা হয়েছে ৬৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা । এ সময়ে সমিতির লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকার বেশী । সুত্র মতে গেলো বছরে  বিভিন্ন লাভ জনক সমিতির কাছ থেকে ২১ কোটি টাকার বেশী ঋন নেয়া হয়েছে ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top